বিএনপির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ : প্রতিকূলতায়ও অটুট ঐক্য

প্রকাশিত: ১২:০১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০২০

বিএনপির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ : প্রতিকূলতায়ও অটুট ঐক্য

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার। ১৯৭৮ সালের এই দিনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে গড়ে উঠে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলটি। তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা বিএনপি এমন এক সময়ে ৪৩ বছরে পা রাখছে যখন দলটি পাড়ি দিচ্ছে প্রতিকূলতার কঠিন পথ। এক যুগেরও বেশি সময় আগে এক-এগারোর মধ্য দিয়ে যে বৈরী রাজনৈতিক পরিস্থিতির জালে দলটি নিপতিত হয়, সেই বন্ধুর পথ এখনো মসৃণ হয়নি। তবে ‘দমন-পীড়নের চাপ ও রাজনৈতিক নানা কূটকৌশল’ সত্ত্বেও অটুট রয়েছে দলটির ঐক্য। এই ঐক্যের ভিতের ওপর দাঁড়িয়েই জনগণের সমর্থন নিয়ে আগামী দিনেও পথ চলতে প্রত্যয়ী বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের ভাষায়, ‘দীর্ঘ এই সময়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র হয়েছে, এখনো হচ্ছে। যতই নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হোক না কেনো বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতোই জেগে উঠবে। বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা, দেশপ্রেম, স্বাধীন থাকবার যে আগ্রহ-আকাক্সক্ষা, তাকে কোনো দিন দাবিয়ে রাখা যাবে না।

তিনি বলেন, বিএনপির আগামী দিনের চ্যালেঞ্জই হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ফিরিয়ে আনা।
চার দশক আগে চারদিকে হতাশা, ক্ষোভ, না পাওয়ার বেদনা এবং শাসকযন্ত্রের প্রতি অতিষ্ঠ জনগণের মধ্যে স্বস্তি ও আশার সঞ্চার করে পথচলা শুরু হয় বিএনপির। দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় দলটি যেমন তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়েছে তেমনি বহুবার সীমাহীন প্রতিকূল পরিস্থিতিও মোকাবেলা করেছে। ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত এক-এগারোর সরকারের আমল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এক কঠিন সময় পার করছে। জরুরি সরকারের সময়ে দলটির ওপর যে মামলা, হামলা, জেল, জুলুম শুরু হয়েছিল তার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে।

দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রয়েছে মামলার পাহাড়। বিএনপির তথ্য অনুযায়ী, এক লাখের ওপরে রাজনৈতিক মামলা রয়েছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে, সেখানে আসামি করা হয়েছে ৩৫ লাখের ওপরে মানুষকে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এদের অধিকাংশই বিরোধী দলের নেতাকর্মী। গত ১০ বছরে জেল কাস্টডিতে মারা গেছে ৭৯৫ জন মানুষ, গুম হয়েছে ৬০১ জন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৮০৬ জন নারী, ১৯৩৪ জন শিশু নির্যাতিত হয়েছে, ১৮ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী মামলা-মোকাদ্দমায় জর্জরিত হয়ে হাঁপিয়ে উঠেছেন। তাদের ভাষ্য, এটা তাদের জন্য এক কঠিন সময়। ২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পর বিএনপি আন্দোলনমুখী না হয়ে আবার দল পুনর্গঠনের কাজে নেমেছে। দলটির তথ্য মতে, সারা দেশে ৮১টি সাংগঠনিক কমিটির মধ্যে মাত্র ৩৪টি পূর্ণাঙ্গ কমিটি, ২৩টি আহবায়ক কমিটি এবং ১৬টি আংশিক কমিটি রয়েছে। করোনায় দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। শিগগিরই বাকি জেলাতে নতুন কমিটি দেয়া হবে। নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে নেয়া হবে নতুন কর্মসূচি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার কাজ চলছে। বিএনপি এখন অনেক গতিশীল হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে। জেলা কমিটিগুলো নতুনভাবে হচ্ছে। দলের পুনর্গঠন কার্যক্রম করোনা মহামারীর কারণে আটকে আছে। তবে অচিরেই এই কার্যক্রম শুরু হবে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নয়া দিগন্তকে বলেন, চরম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিএনপির বন্ধন অটুট রয়েছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ। সাংগঠনিক শক্তি আগের মতোই আছে। জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন হলে বিএনপিই বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হবে।

খালেদা জিয়ার দীর্ঘ অসুস্থতায় নেতাকর্মীরা দুশ্চিন্তায় : সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের সাজা স্থগিতে মুক্তি পাওয়ায় অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে নেতাকর্মীরা দুশ্চিন্তায় আছে। সাময়িক মুক্তির পরও করোনার কারণে নেতাকর্মীরা নেত্রীর সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না। স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও তিনি যোগ দিচ্ছেন না। এ দিকে ৬ মাসের মুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ মাসেই। পরিবারের পক্ষ থেকে মুক্তির এই সময় বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে আবেদন করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পটভূমি ও পথ পরিক্রমা : শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠার আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠন করেছিলেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এলে তিনি বিএনপি গঠন করেন। রাষ্ট্রপতি জিয়া এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন বিএনপির প্রথম মহাসচিব।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের মধ্যে স্বনির্ভরতার স্বপ্ন জাগিয়ে তোলাই ছিল জিয়াউর রহমানের মূলমন্ত্র। এর ফলে দলটি প্রতিষ্ঠার অল্প সময়ের মধ্যেই অভূতপূর্ব সাফল্য এসে ধরা দেয়। জিয়াউর রহমান স্বল্প সময়ের অক্লান্ত কর্মের মধ্য দিয়ে যেন ছড়িয়ে পড়েন পুরো বাংলাদেশে। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে ইসলামী মূল্যবোধের মিশ্রণ তার দলকে আরো জনপ্রিয় করে তোলে। তার ঘোষিত ১৯ দফাকে দল ও সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি ‘রাজনৈতিক দর্শন’ হিসেবেই অখ্যায়িত করা হয়। ১৯৮১ সালের ৩০ মে বিপথগামী কিছু সেনাসদস্যের হাতে জিয়াউর রহমান শাহাদতবরণের কিছু পর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে উত্থান ঘটে বেগম খালেদা জিয়ার। সেই সময় থেকে বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনিই।

১৯৯০-এর গণতন্ত্রায়নের পর ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশের চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে বিএনপি তিনটিতেই জয়লাভ করে। তবে এক-এগারোর সরকারের দুই বছর পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে দলটি পরাজিত হয়। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নেয়নি তারা। চরম বৈরী পরিবেশ সত্ত্বেও একাদশ নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। কিন্তু মাত্র সাতটি আসন পায় তারা। নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে অভিযোগ করে দলটি ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।

ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতারা বলছেন, রাজনীতিতে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। এ পথে হেরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কৌশল পরিবর্তন করেই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। বিএনপিও এখন ধৈর্য ধরে সেই কৌশলে ধীরে ধীরে পথ চলছে।
বাণী : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া বাণীতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী ও দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপি মহাসচিব বাণীতে বলেন, বিএনপি দেশ ও মানুষের উন্নয়ন এবং বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সাথে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দলকে আরো গতিশীল করার ক্ষেত্রে মনেপ্রাণে কাজ করার প্রস্তুতি নিতে হবে। বর্তমান দুঃসময়ে জনগণকে সংগঠিত করার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, দেশ আজ দুঃশাসন কবলিত। সরকার যেখানে জনগণের প্রতিপক্ষ সেখানে মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা থাকতে পারে না। সুতরাং, জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। মির্জা ফখরুল দেশবাসীকে বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

কর্মসূচি : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলা ১১টায় প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের মাজারে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ, বেলা সাড়ে ১১টায় মহানগর দক্ষিণ ও দুপুর ১২টায় উত্তর বিএনপির শহীদ জিয়ার মাজারে ফাতিহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। বিএনপি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা বিকেল সাড়ে ৩টায়। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পোস্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।

ড্যাবের শুভেচ্ছা : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা: হারুন-আল রশিদ ও মহাসচিব ডা: মো: আব্দুস সালাম এক যৌথ বিবৃতিতে দলটির চেয়ারপারসন সাবেক তিন বারের সফল প্রধানমন্ত্রী আপসহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তারা দলটির প্রত্যেক নেতাকর্মীকে শুভেচ্ছা জানান।

ড্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, বিএনপি বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে দলটির প্রতিষ্ঠাতা, স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের শাহাদাত বরণের পর এ দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিপর্যস্থ হলে বিএনপির বর্তমান চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ ধরে ১৯৯১ সালে নির্বাচনে জয়লাভ এবং দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে।
তারা আশা করেন, তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলটি আবার ঘুরে দাঁড়াবে এবং একনায়কতান্ত্রিক বাকশালী শাসনব্যবস্থাকে পরাভূত করে দেশে পুনরায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে।

বিএনিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পোস্টার প্রকাশ, ড্যাবের প্রত্যেক জেলা শাখায় গরিব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান। -বিজ্ঞপ্তি


সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট