নবীগঞ্জে প্রতিপক্ষের হামলায় বৃদ্ধ নিহত, আহত ৩০

প্রকাশিত: ৮:০৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০২০

নবীগঞ্জে প্রতিপক্ষের হামলায় বৃদ্ধ নিহত, আহত ৩০

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বাউশা ইউনিয়নের বাশডর দেবপাড়া গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এ সময় গর্ভবতী নারী ও শিশুসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সকালে বিজনা নদীর জলমহাল নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের এ ঘটনা ঘটে।

এ সময় হামলাকারীরা জাহির আলী (৭৫) নামের এক বৃদ্ধকে পিকল দিয়ে একাধিক আঘাত করে ঘটনাস্থলেই হত্যা করে। এ ঘটনায় গর্ভবতী নারী ও শিশুসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। আহতদের মধ্যে ৫ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য আহতদের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ সময় হামলাকারীরা অন্তত ২০টি বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট করে প্রায় ৮/১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন করেছে বলে জানান আহতরা।

এদিকে হামলার ঘটনার খবর পেয়ে হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ নবীগঞ্জ-বাহুবলের সার্কেল এ এসপি মো. পারভেজ আলম চৌধুরী, ওসি মো. আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার পর থেকে গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাউশা ইউনিয়নের বাশডর দেবপাড়া গ্রামে বিজনা নদীর জলমহাল নিয়ে ওই গ্রামের বর্তমান মেম্বার রাজা মিয়া, কাচন মিয়া ও সাবেক মেম্বার মনর মিয়া গংদের সাথে একই গ্রামের শফিক মিয়া, রয়মান মিয়া গংদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার হামলা ও মামলা মোকদ্দমা চলে আসছিল। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে নবীগঞ্জ-বাহুবল এর সার্কেল এ এসপি পারভেজ আলম চৌধুরীর মধ্যস্থতায় নবীগঞ্জ থানায় ও তার কার্যালয়ে একাধিকবার বিষয়টি নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমকে নিয়ে বিরোধপূর্ণ বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হয়। কিন্তু বিষয়টি বর্তমান মেম্বার রাজা মিয়া, কাচন মিয়া ও সাবেক মেম্বার মনর মিয়া গংরা সালিশের সময় রায় মানলেও এলাকায় এসে তা অমান্য করে অতিতের ন্যায় তারা তাদের সস্থানে ফিরে যায়। এমতাবস্থায় গতকাল বুধবার সকালে কাচন মিয়ার বাড়ীর সামনে দিয়ে সিএনজি স্ট্যান্ডে যাওয়ার পথে শফিক মিয়ার পক্ষের লতিফ মিয়া ও তার স্ত্রীকে আটক করে মারধোর করে। এ খবর শফিক মিয়ার লোকজনের মধ্যে জানাজানি হলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং রাতেই দাঙ্গা হাঙ্গামা এড়াতে উভয় পক্ষের ৫জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে এরই ঘটনার জের ধরে বর্তমান মেম্বার রাজা মিয়া, কাচন মিয়া ও সাবেক মেম্বার মনর মিয়ার লোকজন পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে শফিক পক্ষের লোকজনের বাড়িঘরে এলোপাতাড়ি ভাবে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। হামলাকারীদের পিকলের আঘাতে ঘটনাস্থলেই জাহির আলী নামে (৭৫) এক বৃদ্ধ মারা যান।

এ ঘটনায় গুরুতর আহতরা হলো, হাফিজুন্নেছা (৩৫), ছুরুক মিয়া (৩৩), কুরুস মিয়া (৩০), জুসনা বেগম (৪০), ফয়জুর রহমান (৪০), ইছমত মিয়া (৩৫), মকবুল হোসেন (১৭), আকবর মিয়া (৩০), মস্তফা মিয়া (১৫), আবু তাহের (২৮), বিরাম উদ্দিন (৫০), রফি মিয়া (৩০), জলি বেগম (১৮), তোফাজ্জল মিয়া (২৮), আছিয়া বেগম (২৯), সুফান মিয়া (৪০),শহিদ মিয়া (৪৫), আকবর মিয়া (২৬), মিছবাহ উদ্দিন (৩০), মানিক মিয়া (৪০), সালাম মিয়া (৫০), সামসুল হক (৪৫), সজল মিয়া (৩০)।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ওসি মো. আজিজুর রহমান জানান, গ্রামের জলমহাল, মসজিদসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিষয়টি নবীগঞ্জ-বাহুবল এর সার্কেল এ এসপি পারভেজ আলম চৌধুরীর মধ্যস্থতায় নবীগঞ্জ থানায় ও তার কার্যালয়ে একাধিকবার বিষয়টি নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমকে নিয়ে বিরোধপূর্ণ বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়া হয়। কিন্তু তার পরেও এ ঘটনা সংগঠিত হয়। আমরা খবর পেয়ে রাতেই উভয় পক্ষের কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে আসি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।


সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট