ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত : মুঈনুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১০:৫৬ অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০২০

ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত : মুঈনুল ইসলাম

মুঈনুল ইসলাম : রমজানের রহমত ও মাগফেরাতের দশক শেষ করে আমরা শেষ দশক অর্থাৎ নাজাতের দশকের দ্ধারপ্রান্তে এসে পৌঁছে গেছি। আর শেষ দশকের গুরত্বপূর্ণ আমল হলো ইতিকাফ। রাসুল সাঃ নিয়মিত ইতিকাফ করতেন। হজরত আয়েশা রাঃ বলেন, রাসুল সা.রমজানের শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ করতেন। তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এ আমল অব্যাহত রাখেন। তার ইন্তেকালের পর তার স্ত্রীরা ইতিকাফ করেছেন। (বুখারী : হাদীস, ১৯২২) ইতিকাফ আরবী ‘আকফ’ শব্দ থেকে নির্গত। এর অর্থ হচ্ছে অবস্থান করা,স্থির করা,কোনো স্থানে আটকে থাকা বা আবদ্ধ হয়ে পড়া। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় রমজানের শেষ দশকে বা অন্য কোনো সময়ে দুনিয়াবী কাজ-কাম ও পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পুরুষরা মসজিদে আর মহিলারা ঘরে ইবাদতের নির্ধারিত স্থানে আল্লাহর সন্তষ্টির নিমিত্তে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। ইতিকাফের প্রকারভেদঃ ইতিকাফ তিন প্রকার ১. ওয়াজিব ইতিকাফ,যা কোনো কাজের উপর মান্নতের কারণে ওয়াজিব হয়।যেমন কেউ বলল : আমার অমুক কাজ যদি হয়ে যায় তাহলে আমি এতদিনের ইতিকাফ করবো।অথবা এমনিতেই মান্নত করলো আমি এতদিনের ইতিকাফ করবো।এভাবে মান্নতের ইতিকাফ আদায় করা ওয়াজিব’। ২. সুন্নাত ইতিকাফ: রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া।অর্থাৎ এলাকার কিছু সংখ্যক মানুষ আদায় করলেই সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। তবে কেউই আদায় না করলে সকলেই গুনাহগার হবে। ৩. নফল ইতিকাফঃ নফল ইতিকাফের জন্য কোনো সময় নির্ধারীত নেই, যে কোনো সময় কিছু দিন বা কিছু সময়ের জন্য নফল ইতিকাফ করা যাবে।


ইতিকাফের ফজিলতঃ হাদীস ১. রাসুল সা.বলেন যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতিকাফ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার ও জাহান্নামের মধ্যে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। এক খন্দকের পরিমাণ পূর্ব থেকে পশ্চিমের দূরত্বের সমান। (বায়হাকী হাদীস:৪২৪) হাদীস ২. রাসুল সা.বলেন ইতিকাফকারী সকল গুনাহ থেকে বেচে থাকে।সে বাইরের অন্যান্য আমল না করতে পারলেও আমলকারীর সমান সওয়াব লাভ করবে। (ইবনে মাজাহ হাদীস :৫৬৭) হদীস ৩. রাসুল সা. বলেন রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফকারীকে দুই হজ ও দুই ওমরার সমান সওয়াব দেয়া হয়।


( বায়হাকী হাদীস:৪২৫) ইতিকাফের উদ্দেশ্য : ১. আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা। ইতিকাফের মাধ্যমে দুনিয়ার সবকিছুর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে বান্দা প্রভুর সান্যিধ্যে চলে আসে। বেশি করে আল্লাহর স্মরণ ও বন্দেগীতে লিপ্ত হয়। ফলে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক দৃঢ় ও মজবুত হয়। ২. অহেতুক কাজ থেকে দূরে থাকা। রোজার মাধ্যমে বান্দা অতিরিক্ত পানাহার, যৌনাচার ও প্রবৃত্তির প্রয়োগ থেকে বেচে থাকে। আর ইতিকাফের মাধ্যমে অহেতুক কথা -বার্তা, মন্দ সংস্পর্শ ও অধিক ঘুম থেকে বেচেথাকে। ৩. ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্য হলো শবে কদর তালাশ করা।রাসুল সা. শবে কদরের তালাশে রমজানের প্রথম দশকে ইতিকাফ করেছেন। অতঃপর দ্বিতীয় দশকে ইতিকাফ করেছেন। তারপর তাকে বলা হলো শবে কদর শেষ দশকে। তাই তিনি শেষ দশকে ইতিকাফ করেন। (মুসলিম, হাদীস : ১১৬৭) ৪. মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে তুলা। ৫.দুনিয়া ত্যাগ ও বিলাসিতা থেকে দূরে থাকা। ইতিকাফে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সময়ঃ রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফকারী ব্যক্তি একুশতম রাত্রির সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে। এবং চাঁদ রাতে সূর্যাস্তের পর বের হবে। তবে ইদের রাতে মসজিদে অবস্থান করা উত্তম। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে ইতিকাফ করার তাওফিক দান করুন।


হাফিজ মাওলানা মঈনুল ইসলাম মুহাদ্দিস জামিয়া দারুল কুরআন সিলেট খতিব, বংশীধর জামে মসজিদ, শাহপরান (রঃ) সিলেট


সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট