সরকার আইন করে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করছে : মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত: ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০২০

সরকার আইন করে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করছে : মির্জা ফখরুল

ডিইউজে’র সম্মেলন অনুষ্ঠিত, নির্বাচন শনিবার

সরকার একেকটি আইন তৈরি করে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ধীরে ধীরে একেকটি আইন তৈরি করে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। যেন সরকারের বিরুদ্ধে তারা কিছু লিখতে না পারেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে- সংবাদপত্র এখন সংবাদকর্মীদের হাতে নেই, সংবাদপত্র চলে গেছে ব্যবসায়ীদের হাতে।

ডিইউজে’র সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, জামায়াতে ইসলামীর মহানগর নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, ইউনিয়নের সাবেক নেতা এম এ আজিজ, আব্দুস শহিদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক নেতা কামাল উদ্দিন সবুজ ও সৈয়দ আবদাল আহমেদ বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন ডিইউজের সাবেক নেতা আবদুল হাই শিকদার, বাকের হোসাইনসহ সিনিয়র সাংবাদিক নেতারা।

সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর দুপুরে কর্ম অধিবেশন হয়। শনিবার সকাল ৯টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করবেন সংগঠনের সদস্যরা।

সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দেশে যারা সংবাদপত্রের মালিক তারা বেশিরভাগই ব্যবসায়ী। এ ব্যবসা রক্ষা করার জন্য সরকারের বাইরে যাওয়ার তাদের কোনো উপায় নেই। যে কারণে আমরা সেলফ সেন্সরশীপ দেখছি। সম্পাদক সাহেব নিজেই বলেন যে, এটা নেয়া যাবে না, দেয়া যাবে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখছি যে, চাটুকারিতা এমন এক পর্যায় চলে গেছে যে, প্রফেশনাল চাটুকার যারা আছে তারাও লজ্জা পায়। দিজ আর ফ্যাক্ট।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, উল্টো চিত্রও আছে। আবার এই সাংবাদিক ভাইয়েরাই যেখানেই সুযোগ পান, আসল চিত্রটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। যেমন, বিগত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন গেলো। আমরা কিন্তু সাংবাদিক ভাইদের দ্বারাই সিটি করপোরেশন নির্বাচন কিভাবে হয়েছে সেটা জানতে পেরেছি। আমরা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারছি যে, কিভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা সিন্দুকের মধ্যে গোডাউন তৈরি করা হচ্ছে, কিভাবে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, কিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা উদাও হয়ে যায়, কিভাবে ব্যাংকগুলোকে লুটপাট করে সব শেষ ফেলা হচ্ছে। একটা ব্যাংকও নাই যারা ভালো অবস্থায় আছে।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সবসময় কিন্তু সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয় না। কারণ একটাই এ দেশে এখন কোনো গণতন্ত্র নেই, এ দেশে মানুষের এখন কোনো অধিকার নেই। এ দেশে সম্পূর্ণভাবে একনায়কত্ববাদ, একটা ফ্যাসিবাদ পুরোপুরিভাবে দখল করে আছে।

গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারান্তরীণ করে রাখার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, খালেদা জিয়কে সম্পূর্ণ একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে আজকে কারাগারে অন্তরীণ করে রেখেছে। আজকে তিনি অত্যন্ত অসুস্থ, এতো অসুস্থ যে তিনি প্রায় পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাকে তারা মুক্ত করছে না।

বিচার বিভাগের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, যেদিন সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা সাহেবকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ থেকে তাড়াতে বাধ্য করা হলো সেদিনই জুডিশিয়ারি শেষ। আর কোনো মানুষের ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে যে, ভিন্নভাবে রায় দেবে তাদের (সরকার) ইচ্ছার বাইরে গিয়ে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একটি মামলায় বেকসুর খালাস দিলেন যে জজ সাহেব, সেই জজ সাহেব পালিয়ে বেঁচে আছেন, দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে তাকে। পিরোজপুরের ঘটনা দেখেছেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জজ সাহেবকে ট্রান্সফার করা হলো আওয়ামী লীগের সভাপতিকে জামিন বাতিল করে কারাগারে নিতে বলেছিলেন বলে। এই হচ্ছে বিচার বিভাগের অবস্থা।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, এখন উঠে দাঁড়াবার সময়, এই সময়টা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করার সময়। অনেক বাধা আসছে, আসবে, অনেককে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হবে। আমরা আশা করি, জনগণের যে লড়াই, জনগণের যে সংগ্রাম, সেই লড়াই-সংগ্রামে সাংবাদিকরা সবসময় সামনের দিকে ছিলেন, আজকেও তারা এই লড়াই-সংগ্রামে সামনের দিকে থাকবেন।

তিনি বলেন, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের যে ইতিহাস সেখানে আমরা কখনো মাথানত করে থাকিনি। আমাদেরকে উঠে দাঁড়াতে হবে। আজকে হবে না, কালকে হবে, কালকে হবে না পরশু হবে। সব জানালা বন্ধ থাকলে একটা জানালা খোলা জানালা থাকবে, সেই জানালা দিয়ে আমাদেরকে এগুতে হবে। আজকে সময় এসেছে নিজেদের ছোট-খাটো বিভেদ ভুলে গিয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনারা যেমন একদিকে আপনাদের আন্দোলন করবেন অন্যদিকে জনগণকে অনুপ্রাণিত করতে হবে, জাগিয়ে তুলতে হবে।