চা বাগানে রঙের উৎসব ‘ফাগুয়া’

প্রকাশিত: ৯:৩৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০২০

চা বাগানে রঙের উৎসব ‘ফাগুয়া’

বাংলাদেশের চা বাগানগুলোতে নানান জাতিগোষ্ঠির বাস। অখন্ড ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষা, বিহার, মাদ্রাজ, তেলেঙ্গানাসহ বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এসে আবাস গড়া চা শ্রমিকদের যেমন নিজেদের পৃথক ভাষা, তেমন পৃথক সংস্কৃতিও রয়েছে। ভাষা ও স্ংস্কৃতিতে একেকটি চা বাগান যেন একেকটি দেশ। তবে ফাল্গুনের ‘ফাগুয়া’ উৎসবে এসে সবাই এক হয়ে তারা মেতে ওঠে রঙের উৎসবে।

দরিদ্র তবে পরিশ্রমি চা জনগোষ্ঠির ফাগুয়াকে আরো রঙিন করে তোলতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো ফাগুয়া উৎসবের আয়োজন করল ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদ। চা জনগোষ্ঠি থেকে জনপ্রতিনিধি সহ সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে নেতৃত্বে ওঠে আসা ব্যক্তিদের সম্মিলনে ১৩ মার্চ শুক্রবার শ্রীমঙ্গল শহরের অদূরে ফুলছড়া চা বাগানের মাঠে আয়োজন করা হয় এই ফাগুয়া উৎসবের।

শুক্রবার বিকেলে ফুলছড়া মাঠে নানান বয়সি হাজারো নারী পুরুষ আবির নিয়ে রঙের খেলায় মেতে ওঠলে সবুজ চায়ের বাগানের হৃদয় কিছুক্ষণের জন্য হয়ে ওঠে নানান রঙে রক্তিম।
উৎসবে কেবল রঙের হোলিই নয়, ছিল ভিন্ন সংস্কৃতির অন্তত ১৩টি পরিবেশনা। পত্রসওরা, নৃত্যযোগি, চড়াইয়া নৃত্য, ঝুমর নৃত্য, লাঠিনৃত্য, হাড়িনৃত্য, পালা নৃত্য, ডং ও নাগরে, ভজনা, মঙ্গলা নৃত্য, হোলিগীত, নিরহা ও করমগীত একসাথে উপভোগ করতে পেরে যেমন আনন্দে ভেসেছেন চা শ্রমিকরা তেমন অভিভূত হয়েছেন উৎসবে আসা নাগরিক সমাজও।

উৎসবে আসা বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আকমল হোসেন নিপু বলেন, একসাথে নৃত্যগীতের এত বৈচিত্রপূর্ণ আয়োজন দেখে অন্য সবার মতো আমিও অভিভূত। আমার বিশ্বাস চা বাগানের সংস্কৃতি এই অঞ্চল তথা দেশের একটি সম্পদ। এটি চর্চা ও সুরক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। এই উৎসব অব্যাহত রাখতে হবে।

সিলেট থেকে উৎসবে যোগ দিতে আসা চা জনগোষ্ঠির তরুণি কাজল গোয়ালা বলেন, আমি নিজে উদীচীর সাথে জড়িত। কিন্তু চা বাগানেই যে এতো নৃত্যগীতের সমাহার এখানে না আসলে আমার জানা হতো না। নিরহা, করমগীত আমি প্রথমবার দেখলাম।

বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন স্থানীয় সাংসদ, সাবেক চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ।তিনি বলেন, চা বাগান একটি বৈচিত্রপূর্ণ এলাকা। সরকার চা শ্রমিক এবং তাদের সংস্কৃতির সুরক্ষায় অত্যন্ত আন্তরিক।

আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব কালিগাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা বলেন, প্রথমবারের মতো এই আয়োজন হলেও আয়োজনটি জাতির জনককে উৎসর্গ করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে চা শ্রমিকদের এটি একটি বিশেষ আয়োজন। আশা করি পরবর্তী বছর আরো বড় আয়োজনে ফাগুয়া উৎসব করা হবে।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট