চীনে খাদ্য সংকটে ১৭২ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, দেশে ফেরার আকুতি

প্রকাশিত: ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২০

চীনে খাদ্য সংকটে ১৭২ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, দেশে ফেরার আকুতি

চীনের করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে আটকা পড়া আরও ১৭২ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন। এর আগে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) চীনের উহান থেকে ৩১২ জন শিক্ষার্থীসহ অনেককে ফিরিয়ে আনা হলেও হুবেই প্রদেশে এখনো আটকে আছেন আরও বাংলাদেশি। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের কারণে ইচাং শহরে অবরুদ্ধ অবস্থায় বিশুদ্ধ পানিসহ, খাবার সংকটে চরম মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এমতাবস্থায় দেশে ফিরতে বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন  শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) চীনে নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৩ হাজার ৮৮৭ জন। এখন পর্যন্ত চীনে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ৩২৪ জন। আর প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত চীন ও এর বাইরে ৪৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ইচাং শহরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা জানান, অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকতে থাকতে তাদের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। তবুও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ খাবার বা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করেনি।

দ্বীন মুহাম্মদ প্রিয় নামের চায়না থ্রি গর্জেস ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘খাবারের অভাব যে কত বড় একটা অভাব তা নিজে সম্মুখীন না হলে হয়তো বুঝতে পারতাম না। পানিটা তাও ফুটিয়ে খাওয়া যায়, কিন্তু খাবার না থাকলে তো আর রান্না করা যায় না। আমরা এখানে ১৭২ বাংলাদেশি যে কি পরিমাণ কষ্টে আছি, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমাদের ডরমিটরি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। আমরা বাইরে যেতে পারি না এবং কেউ ভেতরেও আসতে পারে না।

ইউনিভার্সিটি খাবার দিতে চেয়েছে সেই তিন দিন আগে, খাবার অর্ডার করেছিলাম এখন পর্যন্ত খাবার পাইনি। এ অবস্থায় আমরা এখানে কতদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকব সেটি জানি না। আমাদের ট্রেন, স্টেশন ও বিমানবন্দর বন্ধ। সরকারের সাহায্য ব্যতীত আমরা এখান থেকে বের হতে পারব না।

প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের প্রতি বিনীত অনুরোধ–আমাদের এই অবস্থা থেকে রক্ষা করুন।’

অন্য স্ট্যাটাসে দ্বীন মুহাম্মদ প্রিয় লিখেছেন, ‘আমাদের জীবনযাত্রা দিনকে দিন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের মুঠোফোন ব্যস্ত পাওয়া যায়। তাদের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল, তারা কিছু না বলেই প্রস্থান করে। দেশে যোগাযোগ করা হলে জানা যায় তারা দূতাবাসে ইতোমধ্যে আমাদের ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায় দেশ থেকে আসা সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। এমতাবস্থায় আমরা এই দোদুল্যমান পরিস্থিতিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থার মধ্যে আছি। আমরা দেশে ফিরতে চাই, আমাদের এটাই এখন একমাত্র চাওয়া।

প্রসঙ্গত, গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চীন থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে ৩১২ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। বর্তমানে তারা ঢাকায় আশকোনা হজ ক্যাম্পে রয়েছেন। করোনা ভাইরাস সংক্রামক এবং আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গ দেখা দিতে ১৪ দিন সময় লাগে। তাই সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধর্ম মন্ত্রণালয় উহান থেকে আসা বাংলাদেশিদের হজ ক্যাম্পে থাকার ব্যবস্থা করেছে। বর্তমানে তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তাদের দেখাশোনা করছে। সরকারের নিযুক্ত চিকিৎসকরা তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করছেন।