জনসচেতনতাই পারে পরিবেশ বিপর্যয় রুখতে : সিলেটের জেলা প্রশাসক

প্রকাশিত: ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০১৯

জনসচেতনতাই পারে পরিবেশ বিপর্যয় রুখতে : সিলেটের জেলা প্রশাসক

পাথর সমৃদ্ধ সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় পাথর প্রাপ্তির সহজলভ্যতা ও পাথর পরিবহনের সুবিধের জন্যে যত্রতত্র স্টোন ক্রাশার মেশিন ও বোমা মেশিন স্থাপন করে পরিবেশ বিনষ্ট করা হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্যে স্টোন ক্রাশার মেশিন স্থাপনের জন্য আলাদা অঞ্চল সৃষ্টি করে, সেই সকল স্থানে স্টোন ক্রাশার মেশিন স্থাপন করতে হবে। একই সাথে অবৈধভাবে স্থাপিত ও পরিচালিত স্টোন ক্রাশার মেশিন উচ্ছেদ, ক্রাশিং জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিবেশ রক্ষার অনুকুল স্থান নির্ধারনের জন্য জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে স্থান নির্বাচন কমিটি গঠন করতে হবে। এসব কমিটিতে সরকারি ছাড়াও বেসরকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও নাগরিক সমাজ থেকে প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট আয়োজিত ‘স্টোন ক্রাশার মেশিনের অবৈধ ব্যবহার: জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধে করনীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা একথা বলেন।

প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে পরিবেশ নোবেল খ্যাত ‘গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ’ ও ‎রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার‎প্রাপ্ত বেলার প্রধান নির্বাহী এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সভাপতিত্বে আজ সোমবার নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এম এমদাদুল ইসলাম এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেলা’র সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক এডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার।

সভাশেষে ধন্যবাদ বক্তব্য রাখেন এডভোকেট শহিদুল ইসলাম শাহিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এম এমদাদুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশকে ভালোবাসতে হবে পরিবেশকে ভালোবাসতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় শুধু আইন নয়, সবার আগে প্রয়োজন জনসচেতনতা। প্রত্যেককে যার যার জায়গা থেকে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে হবে। জনসচেতনতাই পারে পরিবেশ বিপর্যয় রুখতে। তাই সমাজের সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি সিলেটের ষ্টোন ক্রাশার জোন এর জন্য গোয়াইঘাটে ১৩৩ একর জায়গায় নির্ধারন করা হয়েছে বলে জানান।

কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার পাল,সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহুয়া মমতাজ,সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল কবির,ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল করিম, মোঃ নাসিম হোসাইন,শাবি শিক্ষক আবুল কাশেম উজ্জল,এডভোকেট ইরফানুজ্জামান চৌধুরী, এডভোকেট কামাল হোসেন, এডভোকেট মোহিত লাল ধর, কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর মোতাহার হোসেন, এডভোকেট ফারহানা রব, শাবি শিক্ষক ড. ফারজানা,ফয়েজ আহমদ প্রমূখ।

সভাপতির বক্তব্যে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে পরিবেশ নোবেল খ্যাত”গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ” ও ‎রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার‎ প্রাপ্ত বেলার প্রধান নির্বাহী এডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন সিলেটকে আমরা শুধু পাথর নগরী হিসাবে চিনিনা আমরা চিনি প্রকৃতি কন্যা ও পর্যটন নগরী হিসাবে এই পরিচয়কে হারিয়ে পাথর পরিচয়ে সিলেটকে নতুন করে পরিচয় করতে চাচ্ছিনা। অর্থনৈতিক বিবেচনায় যদি দেখেন সারা বাংলাদেশের পাথর খাত থেকে ৩৬ কোটি টাকা আয় হয় এই রাজস্বের জন্য সিলেটের পাহাড়, পর্বত টিলাপ নদী বিছনাকান্দি , জাফলংয়ের মতো জায়গাগুলোকে হারিয়ে ফেলতে পারি না।

মূল প্রবন্ধে বেলা’র সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক এডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার উল্লেখ করেন পরিবেশ দূষণ রোধ ও পর্যটনশিল্পকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে ‘স্টোন ক্রাশার মেশিন স্থাপন নীতিমালা-২০০৬’ একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় সে আইনে বলা হয়েছে শহর, উপজেলা সদর, পৌরসভা এর গ্রোথ সেন্টারের এলাকায় স্টোন ক্রাশার মেশিন স্থাপন করা যাবেনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বসতবাড়ী, প্রধান সড়ক এবং মহাসড়কের ৫০০ মিটারের মধ্যে ও কৃষি ভূমি বা বন বিভাগের ভূমিতে স্টোন ক্রাশার মেশিন স্থাপন ও পরিচালনা করা যাবেনা। তা ছাড়া পর্যটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পর্যটকদের বিরক্তি উৎপাদন করতে পারে এবং বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন কোন এলাকাকে পর্যটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষনা করলে সে এলাকায় স্টোন ক্রাশার মেশিন স্থাপন করা যাবে না। তাই বাংলাদেশে পর্যটনশিল্পে সম্ভাবনাময় এই সিলেটকে বাচাতে ‘স্টোন ক্রাশার মেশিন স্থাপন নীতিমালা-২০০৬’ বাস্তবায়নে সবাইকে এগিয়ে আসার জানান।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট