শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে আরপিও লঙ্ঘন করেছেন প্রধানমন্ত্রী : রিজভী

প্রকাশিত: ১:৫৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯

শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে আরপিও লঙ্ঘন করেছেন প্রধানমন্ত্রী : রিজভী

চাঁদাবাজীসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ থেকে শোভন ও রব্বানীকে সরিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ‘দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার’ (আরপিও) বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন রিজভী।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগ ইতঃপূর্বে আওয়ামী লীগের সহযোগী থাকলেও নতুন আরপিও অনুযায়ী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আরপিও অনুযায়ী ছাত্রলীগ স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংগঠন। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রেও সে কথাই বলে। ইসিতে জমা দেওয়া আওয়ামী লীগের সংশোধিত চূড়ান্ত গঠনতন্ত্রের ২৫ (১) ধারা অনুযায়ী ছাত্রলীগ তাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন মাত্র। এ দিক থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগকে কোনো আদেশ- নির্দেশ দেওয়া বা তাদের ওপর হস্তক্ষেপ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

এত আরপিও ভঙ্গ হয় কি না বলে প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, নিয়ম-নীতি, বিধি-বিধান, আইন-কানুন সব লঙ্ঘন করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করছেন।

গত শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকে শেখ হাসিনা তাদের গঠনতন্ত্র ও গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে বাই ফোর্স ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন ও সেক্রেটারি রাব্বানিকে পদচ্যুত করেছেন বলে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, সে কথা স্বীকার করে পরদিন রবিবার নারায়ণগঞ্জের ভুলতা ফ্লাইওভার পরিদর্শন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং বাধ্যতামূলক পদত্যাগ করানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই ছাত্রলীগের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দেখভাল করছেন। ছাত্রলীগের পরবর্তী সম্মেলন সম্পন্ন করতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের লক্ষে নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে গত ১৪ই সেপ্টেম্বর কাউন্সিল অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছিল। এই কাউন্সিল ও নেতৃত্ব নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে ছাত্রদলের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। কিন্তু কাউন্সিল অনুষ্ঠানের মাত্র দু’দিন আগে বর্তমান মিডনাইট নির্বাচনের ফ্যাসিস্ট সরকার আজ্ঞাবহ নিম্ন আদালত থেকে তড়িঘড়ি করে কাউন্সিলের ওপর একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করে থামিয়ে দেয়া হয় ছাত্রদলের কাউন্সিল।

তিনি বলেন, কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না নিয়ে যেভাবে দ্রুততার সঙ্গে রাতের অন্ধকারে আদালতের এই আদেশ বের করা হয়েছে তা থেকে প্রতীয়মান হয়, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরকারের সর্বোচ্চ মহল জড়িত। এমনকি বিএনপি ও তার নেতাদের উপরে অন্যায্য ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে আদেশ জারি করা হয়েছে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়েই।

তিনি আরও বলেন, এটা শেখ হাসিনার বিদ্বেষমূলক রাজনীতির আরেকটি কলঙ্কজনক ও নজিরবিহীন অধ্যয়। অথচ ছাত্রলীগের অব্যহতি প্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ২৯ তম কাউন্সিলের সময় ছাত্রলীগের নতুন নেতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ৬ জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, তারা দুজনেই ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে থেকেও দুজনকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়। এরা হলেন- আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক-খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও এনামুল হক শামিম।

রিজভী বলেন, এখন যদি কেউ এই অবৈধ কর্মকাণ্ড এবং শোভন-রাব্বানীর পদচ্যুতিকে চ্যালেঞ্জ করে ঐ একই ঢাকা চতুর্থ সহকারী জজ আদালতে একই ধারায় একটি ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করে, তবে বিএনপির ওপরে যেমন শোকজ ও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর একই রকম স্থগিতাদেশ এবং শোকজের আদেশ দিতে পারবে কি?

তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদেরের কথা অনুযায়ী তারা যে আরপিও এবং দলীয় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছেন সেটা বৈধ আর বিএনপি সকল নিয়মনীতি অনুসরণ করেও অপরাধী? আওয়ামী লীগ গনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও আওয়ামী লীগের সংশোধিত চূড়ান্ত গঠনতন্ত্রের ২৫(১) ধারা লঙ্ঘন করেছে। এখন আদালত বা নির্বাচন কমিশন চুপ কেন? এখন কেন তাদের টনক নড়ে না? তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এখন কেন অন্ধ সেজে চোখ বন্ধ করে আছেন? আপনারা এই প্রকাশ্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে জনগণের আদালতে আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে।