সরকার আদালত দিয়ে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে : মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত: ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯

সরকার আদালত দিয়ে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে : মির্জা ফখরুল

কাউন্সিলের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশের ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, ছাত্রদলের বিষয়ে এখন পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে তা আইনসম্মতভাবেই হয়েছে। রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে সিনিয়র আইনজীবীদের বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব এ কথা জানান। তিনি বলেন, ছাত্রদলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চেয়ারম্যান অর্থাৎ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই নিয়েছেন। আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই পারেন এই সিদ্ধান্ত নিতে, তিনি নিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ লিগ্যাল। এখন পর্যন্ত যা হয়েছে কোনোটাই বেআইনি হয়নি, সবকিছুই আইনসম্মত হয়েছে। ছাত্রদলের কাউন্সিলের বিষয় কি হবে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটি ছাত্রদলের বিষয়। ছাত্রদলের বিষয়ে তারা আলোচনা করছে। তাদের (ছাত্রদল) সিদ্ধান্ত তারা নেবে। আমরা বিএনপি এর সঙ্গে কোনোমতেই জড়িত নই।
একই সঙ্গে বিএনপিকে আদালত যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে তার জবাব দেবে বলে জানান ফখরুল।
আমাদের বিরুদ্ধে যেমন আমাদের পক্ষ করা হয়েছে। আমরা আমাদের উত্তরগুলো আদালতের কাছে যথাসময়ে দেবো। সেই ব্যবস্থা নেবো। জবাবগুলো দিবো। তবে ছাত্রদলের সিদ্ধান্ত ছাত্রদলই নেবে, এখন যারা দায়িত্বে আছে তারাই বলবে।
আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট গ্রহণের কথা ছিল। সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে কাউন্সিলর কার্ড বিতরণের সময়কালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির বিদায়ী ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমান উল্লাহর একটি আবেদনে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ নুসরাত জাহান এই স্থগিতাদেশ দেন।
আদালত এই কাউন্সিলের অস্থায়ী স্থগিতাদেশ দেয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সম্মেলন করার প্রশ্নে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক খায়রুল কবির খোকনসহ ১০ বিবাদীকে ১০ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব প্রশ্ন রেখে বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে সকলের অগোচরেই আদালতের এই স্থগিতাদেশ এসেছে। যেটা দ্য প্রেসেস ইনসেলফ মিস্টিরিয়াস। বুঝা যায়, এখানে সরাসরি সরকারের হস্তক্ষেপ আছে, হস্তক্ষেপ আছে বলেই এই স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমান সরকার যারা আছেন যারা নির্বাচিত সরকার নয়, তাদের জবাবদিহিতা নেই তারা কী চান? তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কী, গণতন্ত্রের একটা ন্যূনতম যে পরিস্থিতি-পরিবেশ থাকুক, না সেটা তারা চান না। দুঃখজনকভাবে তারা ব্যবহার করছেন আদালতকে। যেটা কখনোই কোনো গণতান্ত্রিক কোনো রাষ্ট্রের জন্য, জাতির ভবিষ্যতের জন্য শুভ হতে পারে না।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, আজকে বর্তমান সরকার যে একটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করছেন, এই সংস্কৃতি অত্যন্ত ভয়াবহ। আদালতকে দিয়ে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা। যেটা আমি মনে করি যে, অত্যন্ত ভয়াবহ একটা বিষয়। দুঃখজনকভাবে আমরা লক্ষ করলাম যে, গত ১০ বছর ধরে এই কাজটি তারা এখানে করলেন। তারা আদালতকে দিয়ে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট সিস্টেম, যেটা বাংলাদেশের মানুষের এই একটা গ্রহণযোগ্য শুধু না, একটা আশা-আকাক্সক্ষার স্থান ছিল যে, এই একটা দিন অন্তত আমরা ভোটটা দিতে পারবো। এটা তাদেরই (আওয়ামী লীগ) নিয়ে আসা, তারাই এই কেয়ারটেকার ব্যবস্থা নিয়ে এসেছিলেন তারাই আবার আদালতকে ব্যবহার করে কেয়ারটেকার সিস্টেম থেকে সরে গেলেন এবং দেশ ও জাতিকে স্থায়ীভাবে অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতার দিকে তারা ঠেলে দিলেন। যেটা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন এটা আজকে প্রমাণিত হলো।
ফখরুল বলেন, এই সরকার আদালতকে ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন রকমের আইন-কানুন তৈরি করে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। বিগত নির্বাচনের সময়ে আপনারা দেখেছেন যে, কতজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করে দিয়েছেন। কীভাবে উপজেলা চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের মেয়র তাদের প্রার্থিতা বাতিল করে দেয়া হয়েছে, যেটা আইনের মধ্যে একরকম আছে সেটাকে আদালতের মাধ্যমে বাতিল করে দেয়া হয়েছে। মেয়রদের বেলা আইনে বলা আছে, তারা নির্বাচন করতে পারেন তবে নির্বাচিত হলে তারা ছেড়ে দেবেন। এটাকে সম্পূর্ণ ভায়োলেটেড করে তারা অন্য কাজ করেছেন। এই যে আদালতকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, আদালতকে দলীয়করণের দিকে নিয়ে যাওয়াÑ এটা দেশের জন্য ও জাতির জন্য শুভ কোনো কিছু বয়ে আনতে পারে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাত্রদল একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তারা পরবর্তী নেতৃত্ব নির্ধারণ করতে যাচ্ছে কাউন্সিলের মাধ্যমে। এটাকে আবসেট করা জন্য। আজকে কাউন্সিল স্থগিত করার মানে কী? আপনি পলিটিক্যাল পার্টির কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেনÑ এটা নজিরবিহীন। আপনাদের মনে থাকা উচিত, ১/১১-এর পরে আমাদের দলের সেক্রেটারি জেনারেল পদ নিয়ে কোর্টে গিয়েছিল। কোর্ট ওই সময়ে পরিস্কার বলে দিয়েছিল যে, কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যাপারে আদালতের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। আমরা দেখেনি যে, পলিটিক্যাল পার্টির কার্যক্রমে আদালত যুক্ত হচ্ছে। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের এই বৈঠক হয়।
বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
দলের আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন জয়নাল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, নিতাই রায় চৌধুরী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, কায়সার কামাল, আসাদুজ্জামান আসাদ, ওমর ফারুক ফারুকী, জয়নাল আবেদীন মেজবাহ এবং সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান ও আকরামুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।