আন্তর্জাতিক গুম দিবস আজ

প্রকাশিত: ২:৩৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৩০, ২০১৯

আজ আন্তর্জাতিক গুম দিবস। গত কয়েক বছরে যেসব মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন তার বেশির ভাগই বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দলের সদস্য। আরও আছেন ওইসব অধিকার বিষয়ক কর্মী, যারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন। গত এপ্রিলে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, ২০০৯ সালের শুরু থেকে ২০১৮ সালের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৫০৭টি জোরপূর্বক গুম প্রামাণ্য হিসেবে উপস্থাপন করেছে নাগরিক সমাজ বিষয়ক গ্রুপগুলো। এসব মানুষের মধ্যে ২৮৬ জন জীবিত ফিরেছেন ঘরে। ৬২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে মৃত অবস্থায়। বাকি ১৫৯ জন মানুষ এখনও নিখোঁজ। বেশির ভাগ গুমের জন্য সন্দেহ করা হয় পুলিশ, ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ ও র‌্যাবকে। অজ্ঞাতবাস থেকে যারা ফিরেছেন, তারা আর অপহরণকারীদের ব্যাপারে মুখ খোলেননি। অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলেছে, পরিবার, স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, র?্যাব, ডিবি ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয়ে তাদের স্বজনদের তুলে নেয়া হয়েছে। অনেক সময় তারা জিডিও করতে পারেননি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো বরাবর গুমের অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।
গুমের শিকার হওয়া পাঁচ ব্যক্তি গুম হওয়া নিয়ে কথা বলেছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এই পাঁচজনই ২০১৬ ও ২০১৭ সালের বিভিন্ন সময় গুমের শিকার হন। জীবন নিয়ে ফিরে আসা এই মানুষগুলো বলেছেন, গুম হওয়ার চেয়ে তাদের কাছে কারাবাস ভালো।
আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান । রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বাণীতে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে গুম হয়ে যাওয়া মানুষদের স¥রণে ৩০ আগস্ট গুমের শিকার ব্যক্তিবর্গের আন্তর্জাতিক দিবস। নিখোঁজ হওয়া মানুষদের স¥রণে জাতিসংঘ ঘোষিত দিবসটি ২০১১ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে শত শত গুমের ঘটনায় বাংলাদেশিরা আজ উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীসহ অন্য সমস্ত পরিবারের সদস্যরা গুম হয়েছেন তাদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি এবং নিখোঁজ মানুষদের পরিবারের প্রতি জ্ঞাপন করেন সহমর্মিতা।  বাণীতে তিনি বলেন, “গুম এখন বাংলাদেশে প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার প্রধান রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই গুমের শিকার হয়েছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা। দেশে বিরোধী দল-বিরোধী মত ও বিরোধী রাজনৈতিক বিশ্বাস দমন করার জন্য সমাজে সন্ত্রাস ও ভয় সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে সরকার নির্বিচারে গুমকে ব্যবহার করে আসছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে অব্যাহতভাবে গুম করা হচ্ছে সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, বিরোধী দলের নেতাকর্মীসহ মানবাধিকার কর্মী, লেখক, সাংবাদিক, সাধারণ ছাত্র-যুবক এমনকি গৃহবধূও। এদের মধ্যে কয়েকজনকে ফেরত দিলেও বাকিরা এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, কাউন্সিলর চৌধুরী আলমসহ ছাত্র, যুবক, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, মুক্তমনা মানুষকে গুম করা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে দুই মাস গুম করে রাখার পর অন্য দেশে পাচার করা হয়েছে, এই অমানবিক সংস্কৃতি এই দেশে কখনই ছিল না, আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসার পর এই নতুন ধরনের ভয়াল সংস্কৃতি চালু করে। মানুষের এখন জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। বর্তমানে যে দেশে জীবন্ত মানুষ অদৃশ্য হয়ে যায় সেই দেশের মানুষ আদিম অরণ্যে বাস করছে। এইসব গুমের সাথে রাষ্ট্র জড়িত। বাংলাদেশে শত শত গুমের হোতা হচ্ছে সরকারি এজেন্সীগুলো। গুম হচ্ছে বর্বর শাসনেরই অনুসঙ্গ। গুম হওয়া পরিবারগুলো অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে তাদের প্রিয়জনকে ফেরত পাওয়ার জন্য। দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য জনগণের মিলিত কন্ঠে বর্তমান অপশাসনের অবসানের জন্য আওয়াজ তুলতে হবে। গুমের ন্যায় সমাজ বিরোধী-মানবতা বিরোধী-রাষ্ট্র বিরোধী এই অমানবিক দুষ্কর্মের অবসান ঘটবে কেবলমাত্র গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে পারলে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে আমি হারিয়ে যাওয়া মানুষদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তাদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। বাংলাদেশে গুমের আতঙ্ক এখন সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। দুঃশাসন থেকে উৎপন্ন হয় গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যার মত মানবতা বিরোধী হিংস্রতা। স্বৈরাচারি সরকারের গড়েতোলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধী দলের প্রতিবাদী নেতাকর্মীদেরকে ধরে নিয়ে গিয়ে অল্পদিন-দীর্ঘদিন অথবা চিরদিনের জন্যে নিখোঁজ করে দেয়। গুম হচ্ছে অপশাসনের নমুনা। বাংলাদেশে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে গুমকে করে তুলে প্রধান রাজনৈতিক কর্মসূচি। বিরোধীদলশূন্য একদলীয় কর্তৃত্ববাদী একটি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্যই বিরোধী দল ও মত দমাতে গুমকে ব্যবহার করা হয়েছে নির্বিচারে। এই  নৃশংস গুমের শিকার হয়েছেন সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু ও চৌধুরী আলম, সুমনসহ অসংখ্য মানুষ। আরেকটি অভিনব গুমের শিকার হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাকে দুই মাস গুম করে রাখার পর পাচার করা হয়েছে অন্য দেশে। এই নতুন ধরনের ঘটনা দেশবাসীকে অজানা আতঙ্কে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। গুম করা হয়েছে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীদের। তাদের বেদনার্ত পরিবাররা এখনও পথ চেয়ে বসে আছে প্রিয়জনদের ফিরে আসার সম্ভাবনায়। রাষ্ট্র সমাজে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ সৃষ্টির জন্যই গুমকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে নিষ্ঠুর শাসকগোষ্ঠী। মূল লক্ষ্য বিরোধী কন্ঠকে নির্মূল করা। গুমের অব্যহত পরিস্থিতিতে দেশে সৃষ্টি হয়েছে এক ভয়ঙ্কর জটিল রাজনৈতিক সঙ্কট। জনসমর্থনহীন সরকারের টিকে থাকার অবলম্বনই হচ্ছে গুম। এই ধারা বয়ে চললে বাংলাদেশ এক ঘন অন্ধকারে ডুবে যাবে। মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যাবে। আসুন, আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ হই। কেবলমাত্র একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার গঠন হলেই গুম, অপহরণ, খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যার আতঙ্ক মানুষের মন থেকে দূর হবে, জন-জীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে।