আটক জঙ্গিরা জানালো আল্লাহর প্রেরিত দূত ‘মতিন মেহেদী’!

প্রকাশিত: ৪:৫১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০১৯

আটক জঙ্গিরা জানালো আল্লাহর প্রেরিত দূত ‘মতিন মেহেদী’!

দেশে নাশকতা সৃষ্টি ও সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করছিল জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’। এই লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থও জমা রয়েছে তাদের। এই জঙ্গিগোষ্ঠী গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের সংবিধানে বিশ্বাসী নয়। এমনকি তারা ইসলামের সর্বশেষ নবী হিসেবে মহানবী (সাঃ) কে মানতে নারাজ। তাদের দাবি ‘মতিন মেহেদী’ আল্লাহর প্রেরিত বিশেষ দূত। রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে এই সংগঠনের চার সদস্যকে আটকের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‍্যাব।

বুধবার (২৮ আগস্ট) ভোরে রাজধানীর উত্তরা দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘আল্লাহর দল’ (আল্লাহর সরকার) জঙ্গি সংগঠনের চার সদস্যকে আটক করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র‍্যাব-১ এর লে. কর্নেল মো. সারওয়ার-বিন-কাশেম আটক ৪ জনের বিষয়ে বিস্তারিত জানান।

আটকৃতরা হলেন- সিরাজুল ইসলাম (৩৮), মনিরুজ্জামান মনির (৪০), এসএম হাফিজুর রহমান সাগর (৪৫) ও মো. শফিউল মোযনাবীন তুরিন (২৭)।

আসামিদের বরাত দিয়ে র‍্যাব অধিনায়ক জানান, তারা ইসলামের অপব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশন এবং ভ্রান্ত ইসলামী সংগীতের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করেন।

তিনি আরও জানান, জঙ্গি কার্যক্রমকে জোরদার করার জন্য আর্থিক কাঠামো তৈরি করেছেন তারা। সংগঠনটির যাবতীয় আর্থিক মূলধনের একটি বড় অংশ নামে-বেনামে দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে র‌্যাব।

মূলত দেশে নাশকতা সৃষ্টি ও সরকার উৎখাতের কাজে এগুলো ব্যয় করার পরিকল্পনা ছিল তাদের বলেও জানান এই র‍্যাব কর্মকর্তা।

আটক সিরাজুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি ১৯৯৯ সালে মতিন মেহেদীর কাছে বায়াত গ্রহণের মাধ্যমে এই জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে সংগঠনের সদস্য হওয়ার পর ‘গ্রাম নায়ক’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

পরবর্তীতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পাবনা, ঝিনাইদহ, খুলনা, রাজশাহী ও নওগাঁতে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে যুগ্ম-অধিনায়ক পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং বর্তমানে একই দায়িত্বে বহাল আছেন সিরাজুল। তিনি জঙ্গি সংগঠনটির মামলা মোকাদ্দমাসহ বিবিধ বিষয়াদির উপর তদারকী করে থাকেন।

১৯৯৭ সালে গাইবান্ধার এক জঙ্গি সদস্যের মাধ্যমে বর্ণিত জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করেন মনিরুজ্জামান। সংগঠনের আমীর মতিন মেহেদীর কাছে ঢাকায় বায়াত গ্রহণ করেন। জঙ্গি সদস্য হওয়ার কিছুদিন পরে গ্রাম নায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন পদে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও খুলনায় বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

২০১৯ সালে ‘উপ-অধিনায়ক’ পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং বর্তমানে একই দায়িত্বে বহাল আছেন। এই জঙ্গি সংগঠনটির আর্থিক ব্যবস্থাপনা, দাওয়াতী ব্যবস্থাপনা, রিক্রুটিংসহ বিভিন্ন বিষয়াদি দেখাশুনা করে থাকেন মনিরুজ্জামান।

আটক হাফিজুর রহমান সাগর খুলনার খালিশপুর থানায় ‘আঞ্চলিক নায়ক’ এবং পরবর্তীতে ‘জেলা নায়ক’ পদে দায়িত্ব নিয়ে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।

একটি পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৭ম সেমিস্টার পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন শফিউল মোযনাবীন তুরিন। ২০১০ সালে তার দুই বন্ধুর মাধ্যমে ‘আল্লাহর দল’ জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করেন। ২০১৭ সালে নিবার্হী পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

র‍্যাব অধিনায়ক আরও জানান, ১৯৯৫ সালে মতিন মেহেদীর নেতৃত্বে ‘আল্লাহর দল’ নামক জঙ্গি সংগঠনটি গড়ে ওঠে এবং ২০১৪ সালে মতিন মেহেদীর গোপন নির্দেশে এটি ‘আল্লাহর সরকার’ নামকরণ করা হয়।

তাদের মতে, বর্তমানে যুদ্ধাবস্থা চলছে বিধায় তারা ঈদ, কোরবানি, হজ ইত্যাদি পালন করেন না, জুমার নামাজ আদায় করেন না এবং প্রতি ওয়াক্তে শুধুমাত্র ২ রাকাত নামাজ আদায় করেন। এমনকি ইসলামের কালেমার সাথে শেষ নবীর নাম যুক্ত করার ক্ষেত্রেও তাদের ভিন্নমত রয়েছে।

তারা মনে করেন, বর্তমান সময়ের জন্য মতিন মেহেদী আল্লাহর বিশেষ দূত হতে পারেন। এই সংগঠনটি গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের সংবিধানে বিশ্বাসী নয়।

তাদের মূল লক্ষ্য অনুকূল পরিবেশে দেশের মধ্যে ব্যাপক নাশকতায় লিপ্ত হয়ে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের মাধ্যমে শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা এবং তাদের নিজেদের কাঠামো অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

আটকের সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি পেনড্রাইভ, ১২টি মোবাইল ফোন, ‘আল্লাহর দল’ সংগঠনের লিফলেট, দাওয়াতপত্র ও আয়-ব্যয়ের হিসাবের একটি টালি খাতা উদ্ধার করা হয়।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট