কাঁটাতারই বুঝাল বন্ধুত্বের আসল পরিচয়!

প্রকাশিত: ৪:২৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০১৯

কাঁটাতারই বুঝাল বন্ধুত্বের আসল পরিচয়!

আয়াজ উর রাহমান : পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কটা দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের মনে হলেও আসল চিত্রটা ভিন্ন। নিজ স্বার্থ আর জাতীয়তাবাদের বিষয়ে বাংলাদেশকে একবিন্দু ছাড় দিতে সব সময়ই নারাজ ভারত। এ জন্যই নতুন করে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ভারত বুঝিয়ে দিয়েছে, সম্পর্কটা যতই বন্ধুত্বের হোক সীমান্তের সম্পর্কটা ভিন্ন।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভারত সফরে দেশটি সীমান্তের পুরোটাতেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কঠোর এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। শুধু তাই নয় এবার সরাসরি ভারত অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর বিষয়ে বাংলাদেশকে চাপ প্রয়োগ করেছে। এটার মাধ্যমেই কি তবে ভারত তাদের সাম্প্রতিক এনআরসি ইস্যুতে পুশ ইন নীতির ইঙ্গিত দিচ্ছে?

গত মঙ্গলবার তিন দিনের সফরে ভারতে যান বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সফরকালে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্‌র সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল উভয় দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোসহ সীমান্তে চোরাচালান, সীমান্তে পাচার, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, জাল মুদ্রা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মতো বিষয়ে আলাপ আলোচনা।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারত বাংলাদেশিদের অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে তা ঠেকাতে সীমান্তে বাংলাদেশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। এছাড়া ভারত সীমান্তের পুরোটাতেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে চায় বলে জানিয়েছে।

ভারতের আনা অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জবাবে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে কোনো বাংলাদেশি ভারতে যায় না। যারা যায় তারা ভিসার মাধ্যমে যায়। এছাড়া তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘আমাদের দেশ থেকে তোমাদের দেশে বেড়াতে যায়, চিকিৎসা সেবা নিতে যায় বা শিক্ষা সফরে যায়। নেক্সটডোর নেইবার (প্রতিবেশী) তোমরা, সেজন্যই যায়।’

সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘আইন অনুযায়ী করা হলে তাতে বাংলাদেশের আপত্তি করার কিছু নেই। জয়েন্ট বাউন্ডারি অ্যাক্ট অনুযায়ী যেভাবে আগে তারা করেছে সেভাবেই বাকিটা করলে আমাদের অসুবিধা নেই।’

এদিকে অনুপ্রবেশ ইস্যু যৌথ বিবৃতিতে রাখার বিষয়ে ভারত বাংলাদেশকে এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করেছে বলে সফররত বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন।

তারা বলেছেন, অনুপ্রবেশ ইস্যু যৌথ বিবৃতিতে রাখার ব্যাপারে ভারতের দিক থেকে একটা চাপ তৈরি করা হয়েছিল। দিল্লীর বৈঠকে এসব আলোচনা হলেও অনুপ্রবেশ ইস্যুতে কোনো ঐকমত্য না হওয়ায় কোনো যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়নি। দুই দেশ আলাদা আলাদাভাবে বক্তব্য তুলে ধরেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যদিও অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়টি এবার বাংলাদেশ এবং ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠকের আলোচ্য-সূচিতে ছিল না, কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের গুরুত্ব দিয়ে তোলা হয়। তবে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে বাংলাদেশ ভারতের বক্তব্য গ্রহণ করেনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতকে জানিয়েছেন, ‘অনুপ্রবেশের ব্যাপারে তারা যেটা আমাদেরকে বলছেন, যেটা ওনারা বলতে চাচ্ছেন, যে তোমাদের দেশ থেকে তো বহুলোক আসে। আমি সেখানে বলেছি, আমাদের দেশ থেকে এখন আর অবৈধভাবে যায় না। ভিসা নিয়েই যায়। অবৈধভাবে যাওয়ার কোন প্রশ্ন আসে না কারণ আমাদের দেশে মাথাপিছু আয় বেড়ে গেছে। প্রবৃদ্ধি বেড়ে গেছে।’

ভারতের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গত বছর ২৩ লক্ষ লোক বৈধভাবে গিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘তারাই স্বীকার করলেন, গত বছর নাকি আমাদের ১৪ লক্ষ লোককে তারা ভিসা দিয়েছেন। আর মাল্টিপল ভিসা দেয়া ছিল। সব মিলিয়ে ২৩ লক্ষ বাংলাদেশের নাগরিক গত বছর ভারত গিয়েছিল।’

এছাড়া ভারতের পক্ষ থেকে পশ্চিমবাংলায় সামনের বিধানসভা নির্বাচনের সময় সীমান্তে নজরদারির জন্য বাংলাদেশকে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, ‘ওনারা (ভারত) বলছিলেন যে, পশ্চিমবাংলায় ইলেকশন হবে, সেই সময় বর্ডারটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমি বলেছি, বর্ডার আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।’

এদিকে ভারত দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করছে, তাদের দেশে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী রয়েছে। তারা এও দাবি করেছে, ১৯৭১ সালে বহু বাঙালি পূর্ব পাকিস্তানে নির্যাতনের শিকার হয়ে ওই সময় ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল।

বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ্‌ ভারতে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত ও বহুবার দিয়েছেন। এছাড়া প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর আগে ভারতে ভোটের প্রচারে নেমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, ক্ষমতায় এলে তার সরকার অবৈধ বাংলাদেশিদের লোটাকম্বল নিয়ে ফেরত পাঠাবে।

মূলত ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশটিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর অমানবিক নির্যাতন বেড়েছে। গো-রক্ষার নামে মুসলিমদের নির্যাতন হত্যার মতো চিত্র বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়া মুসলিমদের জোড়পূর্বক ‘জয় শ্রীরাম’ বলার চিত্রও সাম্প্রতিক আলোচনায় আসে। জয় শ্রীরাম বলে মুসলিম হত্যার ঘটনাও ঘটে ভারতে।

জয় শ্রীরাম না বলায় ভারতে মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গত সেপ্টেম্বরে অবৈধ অভিবাসীদের ‘উইপোকা’ বলে সম্বোধন করে অমিত শাহ্‌ বলেছিলেন, বিজেপি সরকার অবৈধ মুসলিম অভিবাসীদের এক এক করে খুঁজে বের করবে এবং তাদের বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেবে। তবে তিনি বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখদের নাগরিকত্ব দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত দৈনিক অধিকারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ভারতে রয়েছে বলে ইঙ্গিত দেন। তারই সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশ থেকে ৩৭ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ গুম হয়েছে বলে দাবি তুলেন।

তার এই দাবি মিথ্যা বলে জানিয়ে রানা দাশগুপ্ত বলেন, প্রিয়া সাহা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্যাম্পের কাছে যদি স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের গুম বা নিখোঁজ অর্থে বলে থাকেন তবে তা অসত্য।

তবে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর বিষয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের এই নেতা বলেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের সনাক্তের নির্দেশ দিয়েছে। খুঁজে বের করা শুরু হয়ে গেছে। আসামে ৪০ লক্ষকে খুঁজে পেয়েছে। তার মধ্যে ১৭ লক্ষ মুসলিম এবং ২৩ লক্ষ হিন্দু সম্প্রদায়ের।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৪৭ সালে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ছিল ৯৮ দশমিক ৪ ভাগ আজকে সেটা নেমে এসেছে ৪৮ থেকে ৪৯ ভাগে।

বাকিগুলো গেল কই বলে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ভারতে এখন যে জনগণনা হচ্ছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে, এর মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে অনুপ্রবেশকারী কারা?

সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেবে ভারত বলে বিজেপি সরকার যে ঘোষণা দিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা অনুপ্রবেশকারীদের ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন টানছেন। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি।

তিনি আরও বলেন, গত নির্বাচনে তারা বলেছেন ২০১৪ সাল পর্যন্ত যারা গেছে তাদেরকে তারা শরণার্থী মর্যাদা দিয়ে নাগরিকত্ব দেবে। আমরা বলতে চাই যদি তারা এমনটি করে তবে বাংলাদেশে একটি সংখ্যালঘুও থাকবে না।

সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগে উৎসাহিত করার বিপক্ষে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান পরিষদের অবস্থান বলেও জানান সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক।

সীমান্ত হত্যায় চুপ ভারত 

সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের গুলিতে প্রতিবছর নিরীহ বাংলাদেশি মারা যাচ্ছে। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ থাকলেও কমেনি সীমান্ত হত্যা। মূলত বাণিজ্যিক খাতিরে সীমান্তের এপার ওপারের (ভারত-বাংলাদেশ) বসবাসকারীদের যাতায়াত রয়েছে। তবে সেটা শুধুমাত্রই আসা যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু এক্ষেত্রে দুই দেশের মানুষের আসা যাওয়া থাকলেও বাংলাদেশিরাই ভারতের সীমান্তরক্ষীদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে সীমান্তে গরু চোরাকারবারি বলে বাংলাদেশি হত্যা যেন প্রতিনিয়তই দেখা যায়। কিন্তু মাদক চোরাকারবারির ক্ষেত্রে এ চিত্র আবার নেই বললেই চলে।

গত একদশকে সীমান্তে ২৯৪ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। সংসদে দাঁড়িয়ে এ তথ্য দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল৷

কাঁটাতারই বুঝাল বন্ধুত্বের আসল পরিচয়!  

কাঁটাতারে ঝুলছে ফেলানির লাশ

জাতীয় সংসদে পরিসংখ্যান তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালে সীমান্তে নিহত হয়েছিলেন ৬৬ জন। এরপর ২০১০ সালে ৫৫ জন, ২০১১ সালে ২৪, ২০১২ সালে ২৪, ২০১৩ সালে ১৮, ২০১৪ সালে ২৪, ২০১৫ সালে ৩৮, ২০১৬ সালে ২৫, ২০১৭ সালে ১৭ ও ২০১৮ সালে তিনজন নিহত হয়েছেন৷ (সূত্র: বণিক বার্তা, ১২ জুলাই ২০১৯)

গত বছরের চেয়ে এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের পরিমাণ আরও বেড়েছে৷ যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসেনি৷ প্রথম পাঁচ মাসে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা ১৫৷

গত ১৫ জুন ঢাকার পিলখানা সদর দপ্তরে বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে তিনদিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ বিএসএফের মহাপরিচালক রজনীকান্ত মিশ্র জানান, ‘হত্যাকাণ্ড’ শব্দের বদলে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু’ বলতে চান তিনি৷ তবে স্বীকার করেন, তার ভাষায় ‘অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু’র সংখ্যা বেড়েছে৷

ওইদিন রজনীকান্ত আরও জানান, ‘এ কারণে সীমান্তে মারণাস্ত্র ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত রয়েছে৷ বিএসএফকে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে৷ তবে পরিস্থিতি মাঝে মধ্যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়৷ কোনো বিকল্প না থাকায় প্রাণে বাঁচতে অল্প কিছু ঘটনায় বিএসএফ মারণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।’

যদিও ফেলানী হত্যাকাণ্ড আর মেহেরপুরে আম পাড়তে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে নিহত কিশোর হত্যার বিচার হয়েছে কিনা- তার উত্তর থাকে না বিএসএফ মহাপরিচালকের কাছে৷ তারা শুধু বন্ধু রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই দেখে৷

বিশেষজ্ঞদের মতামত 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটা শুধু মাত্রই স্বার্থের। ভারত সব সময়ই তাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। আর এটাই মূলত তাদের বন্ধুত্বের অস্ত্র।

তারা আরও মনে করেন, বাংলাদেশের ওপর ভারত সব সময়ই নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চায়। যেটা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নিতে পারছে না। আর কোনো স্বাধীন দেশের নাগরিকই নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্যের কর্তৃত্ব মেনে নেবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুখসানা কিবরিয়া মনে করেন, সীমান্তে মানুষ হত্যাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে ঢেকে দেয়ার জন্যই ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়কে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এনেছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. জমির বলেন, ভারত কখনোই চায় না যে বাংলাদেশ তার কোণায় বসে এমন একটি অস্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছুক যেটি ভারতকেও প্রভাবিত করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে অনেকেই মনে করেন, গত নয় বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের স্বার্থকে যতটা প্রাধান্য দিয়েছে, বিনিময়ে ভারত বাংলাদেশকে ততটা মূল্যায়ন করেনি।

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির মনে করেন, দুই দেশের সরকারের মধ্যে ভালো সম্পর্কের পাশাপাশি জনগণ সেটিকে কিভাবে মূল্যায়ন করছে সেটিও বিবেচনা করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘কোনো স্বাধীন দেশের মানুষই তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য একটি দেশের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ পছন্দ করে না। দুটা স্তরে সম্পর্কটা তৈরি হয়। একটা হচ্ছে, সরকার এবং সরকার এবং অপরটি হচ্ছে জনগণের এবং জনগণের মধ্যে। সম্পর্ক যদি টেকসই হতে হয়, দীর্ঘমেয়াদি এবং বিশ্বাসযোগ্য হতে হয় তাহলে দুই দেশের মানুষকে মনে করতে হবে যে এ সম্পর্কে আমি লাভবান হচ্ছি।’

জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান দৈনিক অধিকারকে বলেন, অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার যে প্রচেষ্টা বিজেপি সরকারের সেটা থেকে মূলত তারা কখনোই পিছপা হবে না। এটা তারা বার বারই বলছে। কাশ্মীর ইস্যুতে সেটা স্পষ্ট। কাজেই ভারত তার পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভূটান, নেপালে নিজেদের ডমিনেশনকেই এগিয়ে নিতে চায়। আর এটাই তাদের মূল বন্ধুত্বের অস্ত্র।