৮ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:০২ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০১৯
বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড র্যাবের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। তবে এ হত্যাকাণ্ডের পর, নয়নের স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার নানা অভিযোগ উঠে আসে। যা নয়নের বন্দুকযুদ্ধে নিহতের পর অনেকটাই থমকে গেল বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও রিফাত হত্যায় জড়িত ও নয়ন বন্ড গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড রিফাত ফরাজী এখনো পলাতক আছেন। যার বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক অভিযোগ।
এই দুই ঘাতক বরগুনার দুই প্রভাবশালী এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছিল জিরো জিরো সেভেন (০০৭) নামে সন্ত্রাসী গ্রুপ। যে গ্রুপের প্রধান ছিল নয়ন বন্ড আর তার অন্যতম সঙ্গী রিফাত ফরাজী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের দুই নেতার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় স্থানীয় থানা পুলিশের কারও কারও সঙ্গেও নয়ন বন্ডের ছিল গভীর সম্পর্ক। স্থানীয় সূত্র বলছে, বরগুনায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দেলোয়ার হোসেন ও এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর মধ্যে বিরোধ রয়েছে। কিন্তু নয়ন বন্ড বাহিনী উভয় শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, মাদক কারবার ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করে আসছিল।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, নয়ন বন্ড অপকর্ম চালাত ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথের প্রভাবে। এমনকি যে কোনো মামলায় আটক বা গ্রেফতার হলে সুনাম দেবনাথের তদবিরেই সুবিধা পেত প্রশাসন থেকে। এমপি পুত্রের কারণেই পুলিশ একাধিকবার নয়ন বন্ডকে আটকের পরও ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ মিলেছে, রাজনীতিক ও প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় নয়ন বন্ডের নেতৃত্বে গঠিত গ্রুপ বরগুনা শহরে নানা ছিনতাই ও নারীদের প্রতারণার ফাঁদে আটকে অপকর্ম চালাত। বিভিন্ন মেসে প্রায়ই নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর বাহিনীর সদস্যরা হানা দিয়ে মোবাইল ফোনসেট ও নগদ অর্থ হাতিয়ে নিত। অনেক মেসে কৌশলে তাদের ভাড়া করা নারী ঢুকিয়ে দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতত।
তবে এসবের বিরুদ্ধে থানায় একাধিকবার অভিযোগ হলেও তারা ক্ষমতার প্রভাবেই ছাড়া পেয়ে যেত। তাদের কিছুই হতো না। রিফাত ফরাজীর আপন খালু বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি স্থানীয় আওয়ামী নেতা দেলোয়ার হোসেন। এলাকার অনেকের অভিযোগ, সুনাম দেবনাথ এবং দেলোয়ার হোসেনের প্রভাবে অপ্রতিরোধ্য ছিল নয়ন বন্ড।
যদিও এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন সুনাম দেবনাথ। তার দাবি, একটি পক্ষ নয়ন বন্ডের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
এ দিকে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় স্থানীয়ভাবে মাদক কারবারির বিশাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করত নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ এ গ্রুপের সদস্যরা।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, একবার রিফাত ফরাজীকে (মামলার অন্যতম প্রধান আসামি) আটক করে থানায় দেওয়ার পরও দেলোয়ার হোসেন তদবির করে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। অন্যদিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, নয়ন বন্ডের গডফাদার তো সুনাম দেবনাথ। এ অঞ্চলে তার মাধ্যমে মাদক ঢুকেছে। এলাকায় আমি জনপ্রিয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আমাকে ভালোবাসে বলে একটি গ্রুপ ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার সুনাম নষ্টে উঠেপড়ে লেগেছে।
এলাকাবাসী জানান, বিভিন্ন সময় নানা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাওয়ায় নয়ন ও রিফাত ফরাজীরা প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত নামের যুবককে খুন করার প্রশ্রয় পেয়ে যায়। কারণ তারা স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যাবে বলেই বিশ্বাস ছিল।
এছাড়া বরগুনায় স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্র ছায়ায় মাদকের অন্যতম বড় সিন্ডিকেট হয়ে উঠে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর গ্রুপ বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তারা বলছেন, পুলিশের সোর্স হিসেবে নয়ন কাজ করে আসছিল। পাইকারি মাদক কারবারি হিসেবে নয়ন খুচরা কারবারিদের কাছে মাদক বিক্রির পর সে পুলিশকে খবর দিত। পরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ধরতে গিয়ে পুলিশ অভিযান চালানোর নামে অনৈতিক বাণিজ্য করত। এভাবে খুচরা মাদক কারবারিদের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে নয়ন পুলিশকে ঘুষ খাওয়ার পথ তৈরি করে দিত।
এজন্য নয়ন পুলিশের কাছেও প্রিয় ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। আরও তিনজন গ্রেফতারে রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামিসহ আরও ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলো- এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি এবং সন্দেহভাজন তানভীর, মো. সাগর ও কামরুল হাসান সাইমুন।
গত রবিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে অলিকে এবং বিকালে অন্য তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারও আগে এজাহারের ৪ নম্বর আসামি চন্দন জয় সরকার, ৯ নম্বর আসামি মো. হাসান ও মো. নাজমুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই হিসাবে রিফাত হত্যা মামলায় গতকাল পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বরগুনা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন গতকাল তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
এ দিকে নয়ন বন্ডের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনায়ও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, নয়ন বন্ডকে বন্দুকযুদ্ধে মারার মাধ্যমে অনেক অপরাধের ঘটনাকেই ধামাচাপা দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে। যেহেতু নয়ন পুলিশেরই সোর্স হিসেবে কাজ করত এবং এতে রাজনৈতিক মদতও ছিল, যা নয়নের গ্রেফতারে ফাঁস হয়ে যেতে পারত। কিন্তু এসব বিষয় এখন অনেকটাই আড়াল হয়ে গেল।
কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত নয়ন বন্ড
বরগুনায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে রিফাত হত্যার ঘটনার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড র্যাবের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। নয়ন বন্ডের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন।
বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার অন্যান্য আসামিরা ধরা পড়লেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল প্রধান দুই আসামি নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী। এর মাঝে মঙ্গলবার (২ জুলাই) কথিত বন্দুকযুদ্ধে নয়নের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করল পুলিশ। তবে রিফাত ফরাজী এখনো পলাতক রয়েছে।
সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবীর হোসেন মাহমুদ বলেন, রিফাত হত্যাসহ ১১ মামলার আসামি নয়নকে গ্রেফতারে বুড়ির চরে অভিযানে গেলে পুলিশের ওপর গুলি চালান নয়ন বন্ড। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে নয়ন বন্ডের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
পরে ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, শর্টগানের দুটি গুলির খোসা এবং দেশীয় তিনটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D