সাকিব আগুনে ভস্মীভূত অহংকারী আফগান শিবির

প্রকাশিত: ১১:৩৬ অপরাহ্ণ, জুন ২৪, ২০১৯

সাকিব আগুনে ভস্মীভূত অহংকারী আফগান শিবির

ব্যাটে-বলে সাকিব আল হাসানের ক্ষুরধার পারফরম্যান্সে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬২ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। মাশরাফিদের দেওয়া লক্ষ্যটা শুরুতে সহজ করে ফেলেন আগফান ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ১০ ওভারে একটি উইকেটও ফেলতে পারেনি টাইগাররা। সেখান থেকে দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেওয়ার পাশাপাশি জয়ের কৃতিত্ব অর্ধশতক করা সাকিবের। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের ব্যাট-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য বিশ্বকাপের নিজেদের সপ্তম ম্যাচে জয় পেল বাংলাদেশ। এই জয়ে শ্রীলঙ্কাকে হঁটিয়ে পয়েন্ট টেবিলের পাঁচে ওঠে এলো টাইগাররা। সেসঙ্গে বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখল মাশরাফি বাহিনী।

এই ম্যাচে অনন্য এক কীর্তি গড়েন সাকিব। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক হাজার রান ও ৩০ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন তিনি। বিশ্বকাপে দুটি সেঞ্চুরি ও সাতটি হাফসেঞ্চুরি তার। বিশ্বকাপে সপ্তম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষেই টুর্নামেন্টে হাজার রান ও ৩০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। এছাড়া এ ম্যাচেই যুবরাজ সিংয়ের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এক ম্যাচে অর্ধশতক ও পাঁচ উইকেট নেওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

বাংলাদেশের দেওয়া ২৬৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ১০ ওভারে কোনো উইকেট হারায়নি আফগানরা। ইনিংসের ১১তম ওভারে সাকিব দলকে ব্রেক এনে দেন। সাকিবের করা শেষ বলে বাজে শট খেলতে গিয়ে মিড অনে দাঁড়িয়ে থাকা তামিম ইকবালের হাতে তালুবন্দি হয়ে ফেরেন রহমত শাহ। ৩৫ বলে তিনটি চারে ২৪ রান করেন রহমত। ইনিংসের ২১তম ওভারের পঞ্চম বলে হাসমতউল্লাহ শহিদিকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে সাজঘরে পাঠান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩১ বলে ১১ রান।

এরপরই শুরু সাকিবের ঘূর্ণিজাদু। এক ওভারে আফগান শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন তিনি। এতে লণ্ডভণ্ড হয় আফগানদের ব্যাটিং লাইনআপ। ব্যক্তিগত ৪৭ রানে ফিরিয়েছেন আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব ও শূন্য রানে মোহাম্মাদ নবীকে। এক ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আফগানিস্তান।

এরপর দলীয় ১১৭ রানে আফগানদের পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটে। আফগানিস্তানের সাবেক অধিনায়ক আসগর আফঘানকেও আউট করে সাজঘরে ফেরান সাকিব।

আফগানদের ষষ্ঠ উইকেটের পতন হয় দলীয় ১৩২ রানে! লিটনের দুর্দান্ত এক থ্রুতে ইকরাম আলিখি রানআউট হয়ে ফেরেন ব্যক্তিগত ১১ রানে। এরপর সাকিব আর পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন নাজিবউল্লাহ জাদরানকে ফিরিয়ে। দলীয় ১৮৮ রানে ব্যক্তিগত ২৩ রানে ফ্যাভিলিওনে ফিরে যান জাদরান।

এরপর রশিদ খান উইকেটে আসলেও দাঁড়াতে পারেননি। মুস্তাফিজুর রহমানের তোপে মাত্র ২ রান করে মাশরাফির তালুবন্দি হয়ে ফেরেন এই আফগান অলরাউন্ডার। শেষের দুই উইকেটে দৌলত জাদরান ও মুজিবুর রহমান শূন্য রান করে ফেরেন মুস্তাফিজ ও মোহাম্মাদ সাইফউদ্দিনের বলে।

তবে আফগানদের হয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছেন সামিউল্লাহ শেনওয়ারি। ৫১ বলে ৪৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের হয়ে এই ম্যাচে সেরা বোলিং করেছেন সাকিব; ১০ ওভার বল করে ২৯ রান দিয়ে শিকার করেছেন ৫টি উইকেট। এছাড়া মুস্তাফিজ ২টি ও সাইফ -মোসাদ্দেক একটি করে উইকেট নেন।

এর আগে টস হেরে সাকিব-মুশফিকের ব্যাটে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটে ২৬২ রান তোলে বাংলাদেশ। সাউদাম্পটনের রোজ বলের ভেন্যুর সীমানা একটু বড়। রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে স্কোরবোর্ডে রান তুললে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে। কারণ আফগান ব্যাটিং এ বিশ্বকাপে অনেক ছন্নছাড়া। তাই আফগানদের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাটিং পেলেও উজ্জীবিত ছিল বাংলাদেশ। তবে ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত খুব একটা কাজে লাগলো না টাইগারদের। সৌম্য সরকারের বদলে লিটন দাশ নামেন তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে। দারুণ শুরু করলেও লিটন আউট আইসিসির ‘সফট সিগনাল’-এর নিয়মের কারণে। ১৭ বলে ১৬ রানে বিদায় নেন লিটন।

মুজিব উর রহমানের বলে হাশমতউল্লাহ ক্যাচ ধরলে মাঠের আম্পায়ার আউট দেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য তৃতীয় আম্পায়ারের শরণাপন্ন হন তারা। আলিম দার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি বলে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। এরপরই সাকিব-তামিমের ৫৯ রানের জুটিতে ভালো সংগ্রহের ভিত্তি পায় বাংলাদেশ। ২৩ রান করে সাকিব এ বিশ্বকাপে রানের তালিকায় শীর্ষে উঠেন।

একই সঙ্গে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। একপ্রান্তে তামিম ৩৬ রানে নবীর বলে বোল্ড হলেও সাকিব পেয়ে যান হাফসেঞ্চুরি। ৪৫তম হাফসেঞ্চুরিতে মাত্র একটি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। মুশফিকের সঙ্গে সাকিব গড়েন ৬১ রানের জুটি। ওয়ানডে ইতিহাসে এ দুজনের কল্যাণে বাংলাদেশ পেয়েছে তিন হাজার রানের জুটি।

৫১ রানে সাকিব লেগ বিফোর উইকেটে পরিণত হন মুজিবের বলে। সৌম্য পাঁচ নম্বরে নেমে আউট তিন রানে। ষষ্ঠ উইকেটে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর জুটিতে ২০০ রান পার করে টিম টাইগার। ২৭ রান করেন রিয়াদ। অন্যপ্রান্তে ৩৫তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক।

৮৭ বলে চারটি বাউন্ডারি ও এক ছক্কাতে ৮৩ রান করেন টাইগার উইকেটরক্ষক। আর মোসাদ্দেক আউট ২৪ বলে ৩৫ রানে। এতে আফগানদের বিপক্ষে অনায়াসে আড়াইশ পার করে বাংলাদেশ শিবির। ডেথ ওভারে বাংলাদেশ পেয়েছে ৬৯ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : 

বাংলাদেশ : ২৬২/১ (৫০ ওভার)

আফগানিস্তান : ২০০/১০ (৪৭ ওভার)

ফল : বাংলাদেশ জয়ী ৬২ রানে।

ম্যাচ সেরা : সাকিব আল হাসান