যেভাবে স্বর্ণ মন্দিরে ঢুকেছিল ভারতীয় সেনা ট্যাঙ্ক

প্রকাশিত: ১১:০১ অপরাহ্ণ, জুন ৬, ২০১৯

যেভাবে স্বর্ণ মন্দিরে ঢুকেছিল ভারতীয় সেনা ট্যাঙ্ক

নয়াদিল্লী : ১৯৮৪ সালের ছিল ৩১ মে। উত্তরপ্রদেশের মীরাটে অবস্থানরত সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল কুলদীপ বুলবুল বরাড় স্ত্রীকে নিয়ে পরের দিন ম্যানিলা ভ্রমণে যাবেন। তারই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, সন্ধ্যেবেলায় হঠাৎই ফোন এল, যে পরের দিন সকালে চন্ডীগড়ে একটা জরুরি বৈঠকে হাজির হতে হবে আমাকে। খবর বিবিসি বাংলার

সেদিনই বিকেলে দিল্লি থেকে আমাদের প্লেন ধরার কথা ম্যানিলা যাওয়ার জন্য। ট্র্যাভেলার্স চেক কিনে ফেলেছিলাম। কিন্তু আদেশ পালন করতেই হবে। তাই সড়কপথে দিল্লি গিয়ে সেখান থেকে বিমানে চন্ডীগড় পৌঁছলাম। সোজা হাজির হলাম পশ্চিম কমান্ডের সদর দপ্তরে।

সেই সময়টায় পাঞ্জাবে বিচ্ছিন্নতাবাদের আগুন জ্বলছিল। শিখ সম্প্রদায়ের গুরদোয়ারাগুলোতে পাঞ্জাবকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে পৃথক খালিস্তান সৃষ্টির পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছিল।

এটাও বলা হচ্ছিল যে প্রয়োজনে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সংগ্রামে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

পাঞ্জাবের পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো হয়ে উঠছিল যে দিল্লির কর্তাদের কপালে তা ভাঁজ ফেলছিল।

সরকারের শীর্ষস্তর থেকে একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যে শিখদের সবথেকে পবিত্র তীর্থস্থান স্বর্ণ মন্দিরে সেনাবাহিনীর অভিযান চালানো হবে। ওই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছিল অপারেশন ব্লু স্টার।

তারই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মেজর জেনারেল বরাড়কে। তিনি বলেন, আমাকে বলা হয়েছিল যত দ্রুত সম্ভব অমৃতসর পৌঁছতে হবে। সেখানকার পরিস্থিতি খারাপ। স্বর্ণ মন্দির কব্জা করে নিয়েছেন ভিন্দ্রানওয়ালে। পাঞ্জাবের আইন শৃঙ্খলা সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। অবস্থা সামলাতে না পারলে পাঞ্জাব হয়তো আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।

তার ছুটি বাতিল করে পাঠিয়ে দেওয়া হল অমৃতসরে।

ভিন্দ্রনওয়ালের সঙ্গে কংগ্রেসের যোগ
জার্নাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালেকে কংগ্রেসই গোড়ার দিকে উৎসাহ দিয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল যে আকালীদের বিপরীতে এমন একজন শিখ নেতা তৈরি করার প্রয়োজন, যে শিখ সম্প্রদায়ের দাবি দাওয়া নিয়ে সরব হতে পারবে, অন্যদিকে আকালীদের জনসমর্থনও কিছুটা কমানো যাবে।

ভিন্দ্রানওয়ালে নানা স্পর্শকাতর বিষয়ে উত্তেজক ভাষণ দিতে শুরু করেন। কিন্তু একটা সময়ে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকেও নিশানা করতে থাকলেন।

পাঞ্জাবে হিংসাত্মক ঘটনা বাড়তে থাকল।
১৯৮২ সালে ভিন্দ্রানওয়ালে চক গুরদোয়ারা ছেড়ে প্রথমে স্বর্ণ মন্দির চত্বরে গুরু নানক নিবাসে আশ্রয় নিলেন, আর তারপরে, কয়েক মাসের মধ্যেই আকাল তখত থেকেই তিনি নিজের মতামত ব্যক্ত করতে শুরু করলেন।

অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়ার সংবাদদাতা সতীশ জেকব বেশ কয়েকবার ভিন্দ্রানওয়ালের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি যখনই ওখানে যেতাম, ভিন্দ্রানওয়ালের দেহরক্ষীরা আমাকে দেখেই বলতে শুরু করতেন, আয়োজী, আয়োজী, বিবিজী আগয়ে (আসুন আসুন বিবিজী)। তারা কখনই বিবিসি বলত না! সোজা ভেতরে চলে যেতে বলত আমাকে। সন্তজী ভিন্দ্রানওয়ালেকে সন্ত বা শিখ গুরু বলে মনে করতেন অনেকে।

তিনি আমার সঙ্গে বেশ শান্তভাবেই কথা বলতেন। একবার মার্ক টালিকেও নিয়ে গিয়েছিলাম ওর কাছে। ভিন্দ্রানওয়ালে মার্কের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি কোন ধর্মের মানুষ। মার্ক টালি উত্তর দিয়েছিলেন তিনি খ্রিস্টান। উত্তর শুনে ভিন্দ্রানওয়ালে বলেছিলেন, তার মানে আপনি যিসাস ক্রাইস্টকে মেনে চলেন? মার্ক বলেছিলেন, হ্যাঁ। ভিন্দ্রানওয়ালে এটা শুনে বলেন যিসাস ক্রাইস্টের তো দাড়ি ছিল। আপনার দাড়ি নেই কেন?

সতীশ জেকব জানান, এমন প্রশ্নে মার্ক উত্তর দিয়েছিলেন, এরকমই পছন্দ আমার। ভিন্দ্রানওয়ালের জবাব ছিল, আপনি বোধহয় জানেন না, দাড়ি ছাড়া আপনাকে মেয়েদের মতো দেখতে লাগে! মার্ক হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন কথাটা।

ভারত-পাকিস্তান সীমানা
একবার ভিন্দ্রানওয়ালের সঙ্গে আমার দীর্ঘ কথোপকথোন হচ্ছিল স্বর্ণ মন্দিরের ছাদে। সেখানে কেউ খুব একটা যেত না। চারদিকে অসংখ্য বানর ঘুরে বেড়াচ্ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি যা যা করছেন, তাতে আপনার বিরুদ্ধে যদি কোনও অ্যাকশন হয় তাহলে কী করবেন?

তার কথায়, ছাদ থেকে সামনের দিকে ইশারা করে ভিন্দ্রানওয়ালে বলেছিলেন সামনে চাষের ক্ষেত। সাত-আট কিলোমিটার গেলেই পাকিস্তান। কোনও অ্যাকশন শুরু হলে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে সীমানা পেরিয়ে পাকিস্তান চলে যাব, সেখান থেকেই গেরিলা কায়দা সংঘর্ষ চলতে থাকবে। এই কথাগুলো শুনে আমার মনে হচ্ছিল লোকটি আমাকে খুব বিশ্বাস করে নিজের প্ল্যান বলে দিচ্ছে। এমনকি এটাও বলে নি যে এই কথাগুলো যেন আমি না লিখি কোথাও।

অপারেশন শুরুর আগে নজরদারি
চৌঠা জুন থেকে ভিন্দ্রানওয়ালের লোকেরা কোথায় আছে, সেটা জানার জন্য একজন অফিসারকে সাদা পোশাকে স্বর্ণ মন্দিরের ভেতরে পাঠানো হয়েছিল।

পরের দিন, পাঁচ তারিখ সকালে অপারেশনে অংশ নেবে সেনাবাহিনীর যে সদস্যরা, তাদের সবাইকে মেজর জেনারেল বরাড় নিজে ব্রিফ করেন।

তার কথায়, পাঁচ তারিখ ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ আমি প্রত্যেকটা ব্যাটালিয়নের কাছে গিয়ে সেনা সদস্যদের সঙ্গে প্রায় আধঘন্টা করে কথা বলি। আমি তাদের স্পষ্ট বলেছিলাম, স্বর্ণ মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করার সময়ে এটা মাথায় রাখার দরকার নেই যে তারা কোনও পবিত্র তীর্থে ঢুকছে। এটা মনে রাখতে বলেছিলাম যে আমরা স্বর্ণ মন্দিরে যাচ্ছি ভেতরটা পরিষ্কার করতে। যত কম মৃত্যু হয়, ততই মঙ্গল।

মেজর বরাড় বলেন, আমি সেনাদের বলেছিলাম, কারও যদি স্বর্ণ মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে আপত্তি থাকে, সেটা নির্দ্বিধায় জানাতে পারে। কমান্ডিং অফিসারদের জানিয়ে দিয়েছিলাম কেউ আপত্তি জানালে তাকে যেন জোর করে ভেতরে না পাঠানো হয় আর তার বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও না নেওয়া হয়।

তিনটে ব্যাটালিয়নের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে কেউই আপত্তি জানায় নি।

কিন্তু চার নম্বর ব্যাটালিয়নের এক শিখ অফিসার উঠে দাঁড়াতেই বরাড় বলেছিলেন, আপনার আবেগ যখন এতটাই বেশি, আপনাকে ভেতরে যেতে হবে না। কিন্তু সেই অফিসার উত্তর দিয়েছিলেন, আপনি ভুল বুঝছেন স্যার। আমি ভেতরে ঢুকব তো বটেই, সবার সামনে যেতে চাই আমি। আকাল তখতে সবার আগে ঢুকে ভিন্দ্রানওয়ালেকে গ্রেপ্তার করতে চাই আমি।

মেজর বরাড়ের কথায়, আমি ওই ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছিলাম যে ওই শিখ অফিসারের প্ল্যাটুনটাই সবার আগে মন্দিরে ঢুকবে। তারা ভেতরে যেতেই মেশিন গান থেকে অজস্র গুলি ছুটে আসতে থাকে। ওই অফিসারের দুই পায়েই গুলি লেগেছিল। কমান্ডিং অফিসার আমাকে জানান যে তাকে কিছুতেই ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই সেই অফিসার আকাল তখতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন! আমি আদেশ দিয়েছিলাম, তাকে জবরদস্তি উঠিয়ে নিয়ে এসে অ্যাম্বুলেন্সে চড়িয়ে দিতে। পরে তার দুটো পাই কেটে বাদ দিতে হয়েছিল। তার সাহসের জন্য অশোক চক্র পেয়েছিলেন ওই শিখ অফিসার।

অপারেশন শুরু হয়েছিল রাত দশটায়
অপারেশন ব্লু স্টারের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন জেনারেল সুন্দরজী, জেনারেল দয়াল আর জেনারেল বরাড়। তারা ঠিক করেছিলেন যে গোটা অপারেশনটা রাতের অন্ধকারে চলবে। তাই রাত দশটার সময়ে মন্দিরের সামনের দিক থেকে আক্রমণ করা হয়।

কালো পোশাক পরা প্রথম ব্যাটালিয়নের সৈন্যদের সঙ্গেই প্যারাশুট রেজিমেন্টের কমান্ডোরাও ছিল। ভেতরে গিয়েই খুব দ্রুত আকাল তখতের দিকে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল তাদের।

কিন্তু কমান্ডোরা এগোতেই তাদের ওপরে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে গুলিবর্ষণ শুরু হয়।

মাত্র কয়েকজন কমান্ডোই প্রাণে বেঁচেছিলেন। তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন লেফটেনান্ট কর্ণেল ইসরার রহিম খাঁ।

দশ নম্বর ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সিঁড়ির দুদিকে ভিন্দ্রানওয়ালের সঙ্গীদের মেশিনগানগুলো অকেজো করতে পেরেছিলেন, কিন্তু সরোবরের উল্টোদিক থেকে প্রচন্ড গুলিবর্ষণ শুরু হয়।

সেনাবাহিনী আন্দাজও করতে পারে নি যে তাদের এরকম প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হবে।

প্রথম পয়তাল্লিশ মিনিটেই আমরা বুঝে গিয়েছিলাম যে ওদের পরিকল্পনা, অস্ত্র ভান্ডার নিয়ে তারা বেশ শক্তপোক্ত দূর্গই গড়ে তুলেছে। ওদের এত সহজে বাগে আনা যাবে না! আমরা ঠিক করেছিলাম আকাল তখতের ভেতরে স্টান গ্রেনেড ছুঁড়ব। ওই গ্রেনেডে মানুষ মরে না। গ্রেনেডটা ফাটলে গ্যাস বেরয়, যাতে চোখ দিয়ে জল বেরয়, মাথা ঝিম ঝিম করে। কিন্তু গ্রেনেড ছোঁড়ার কোনও জায়গাই পায় নি সেনারা। প্রত্যেকটা জানলা, দরজায় বালির বস্তা রাখা ছিল। তার মধ্যে দিয়ে গ্রেনেড ছুঁড়লে সেগুলো সেনাবাহিনীর জওয়ানদের দিকেই উড়ে আসছিল।

মন্দির চত্বরের উত্তর আর পশ্চিম দিক থেকেই যে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা গুলি চালাচ্ছিল তা নয়। ভূগর্ভস্থ নালাতে যে ম্যানহোল থাকে সেগুলোর ঢাকনা খুলে গুলি চালিয়ে আবারও তারা ভেতরেই লুকিয়ে পড়ছিল।

এক প্রাক্তণ সেনা জেনারেল, শাহবেগ সিং ভিন্দ্রানওয়ালের দলকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।

তাদের শেখানো হয়েছিল সেনাসদস্যদের হাঁটুর কাছে গুলি করতে। তাদের ধারণা ছিল সেনাবাহিনী গুলি চালাতে চালাতে এগোবে। সেজন্যই বেশিরভাগ সেনাসদস্যের পায়ে গুলি লেগেছিল।

আর যখন এগোতে পারছিল না সেনাবাহিনী, তখন জেনারেল বরাড় নির্দেশ দেন আর্মড পার্সোনেল ক্যারিয়ার ব্যবহার করতে।

ওই গাড়ি গুলি নিরোধক। কিন্তু গাড়িটা আকাল তখতের দিকে এগোতেই চীনে তৈরি রকেট লঞ্চার দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয় সেটা।

আমরা আন্দাজ করতে পারিনি যে ওদের কাছে রকেট লঞ্চার আছে। গাড়িটা এগোতেই রকেট দিয়ে সেটাকে উড়িয়ে দেয় ওরা। ওই পরিস্থিতিতে ট্যাঙ্ক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন জেনারেল বরাড়।

আগে থেকে ট্যাঙ্ক পাঠানোর কথা ভাবাই হয় নি। কিন্তু আকাল তখতের কাছাকাছিও যখন পৌঁছন যাচ্ছে না দেখেই ট্যাঙ্ক আনার কথা ভাবা হয়। আমাদের আশঙ্কা ছিল ভোর হলেই চারদিক থেকে হাজার হাজার লোক চলে এসে সেনাবাহিনীকে ঘিরে ফেলবে। ভোর হয়ে আসছিল, কিন্তু কিছুতেই এগোন যাচ্ছিল না। তখন ঠিক করি যে ট্যাঙ্ক থেকে আকাল তখতের ওপরের তলাগুলোকে লক্ষ্য করে গোলা ছোঁড়া হবে। ইঁট পাথর ওপর থেকে পড়তে থাকলে ভেতরে অবস্থান করা লোকেরা ভয়ে বেরিয়ে আসবে।

পরে, অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরা যখন স্বর্ণ মন্দির পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন, তখন গোনা হয়েছিল অকাল তখতকে লক্ষ্য করে ভারতীয় সেনাবাহিনী অন্তত চল্লিশটা গোলা নিক্ষেপ করেছিল।

জেনারেল বরাড় বলছিলেন, হঠাৎই দেখা যায় যে ৩০-৪০ জন বাইরে বেরনোর জন্য দৌড়ে আসছে। ওদিক থেকে গুলি চালানোও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমার মনে হল কিছু একটা ঘটেছে ভেতরে। আমি সেনাসদস্যদের আদেশ দিয়েছিলাম ভেতরে প্রবেশ করে তল্লাশি চালাতে। তখনই জানা যায় যে জার্নাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালে আর জেনারেল শাহবেগ সিং নিহত হয়েছেন। তবে পরের দিন গুজব ছড়ায় যে ভিন্দ্রানওয়ালে রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে। পাকিস্তান টিভিও ঘোষণা করে যে ভিন্দ্রানওয়ালে তাদের কাছে আছে। ৩০ জুন তারা নাকি ভিন্দ্রানওয়ালেকে টিভিতে দেখাবে।

জেনারেল বরাড় বলেন, আমার কাছে তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী এইচ. কে. এল. ভগত আর বিদেশ সচিব রসগোত্রার ফোন এসেছিল। তারা জানতে চান, পাকিস্তান টিভি বলছে যে ভিন্দ্রানওয়ালে বেঁচে আছেন আর আমি কীভাবে বলছি যে তারা নিহত! আমি দুজনকেই বলেছিলাম শব শনাক্ত করা হয়ে গেছে। মৃতদেহ তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের অনুগামীরা শবের পা ছুঁয়ে প্রণামও করেছে। আমি নিশ্চিত যে তারা দুজনেই নিহত। পাকিস্তান যা খুশি বলুক।

এই গোটা অপারেশনে ৮৩ জন ভারতীয় সৈনিক নিহত হয়েছিলেন। ২৪৮ জনের গুলি লেগেছিল।

বিচ্ছিন্নতাবাদী মারা গিয়েছিলেন ৪৯২ জন আর দেড় হাজারেরও বেশি লোক গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

অপারেশন ব্লু স্টারের ফলে শুধু ভারতের নয়, সারা বিশ্বের শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছিল।

ভারতীয় সেনাবাহিনী নিশ্চিতভাবেই জয়ী হয়েছিল, কিন্তু রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছিল ভারত সরকারের।

অবশেষে ইন্দিরা গান্ধীকে নিজের প্রাণ দিয়ে এর মূল্য চোকাতে হয়েছিল।