জিয়াউর রহমানের ৩৮তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ১:৩০ পূর্বাহ্ণ, মে ৩০, ২০১৯

জিয়াউর রহমানের ৩৮তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ

আজ ৩০ মে, আমাদের জাতীয় জীবনে খুবই শোকাবহ দিন। ১৯৮১ সালের এই কালো রাতে চট্টগ্রামের অভিশপ্ত পুরোনো সার্কিট হাউসে ঘুমন্ত অবস্থায় দেশি বিদেশি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের ক্রীড়ানক কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’-এর কালজয়ী দর্শন ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, আধুনিক স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্থপতি এবং ইতিহাসের রাখাল রাজা খ্যাত দেশের প্রথম নির্বাচিত সফল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সততার প্রতীক। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে এদেশের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তেন না। জাতি যখন নেতৃত্বশূন্য দিশেহারা তখনই জিয়াউর রহমান উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আবির্ভূত হলেন। তার নাম সরকার পাঠ্যপুস্তকসহ সকল স্থাপনা থেকে মুছে ফেলেছে। কিন্তু শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তার নাম মুছে ফেলা যাবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। গতকাল বুধবার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৩৮তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার জীবনাদর্শ ব্যাখ্যা করে বলেন, আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা থেকে জিয়াউর রহমানের জন্ম হয়েছে। যখন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে, তখন জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র মতায় এসেছেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সততার প্রতীক। দেশে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে জিয়াউর রহমান সাহেবের অবদান নেই। যারা সেদিন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছিল, তারাই আজকে দেশনেত্রীকে কারাগারে আটকিয়ে রেখে এদেশের মানুষের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করে নিয়েছে। : প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৮তম শাহাদাতবার্ষির্কীর শোকাবহ দিনটি স্মরণে বাংলাদেশ জাতিয়তাবাদী দল বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন এবং অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করছে। আজ প্রাণপ্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর অশ্রুসিক্ত নয়নে স্মরণ করবে দেশের কোটি কোটি মানুষ। এ উপলক্ষে শেরে বাংলানগরের জিয়া উদ্যানে শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত, কোনআন খানি, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, কালো পতাকা ও দরিদ্রদের মাঝে ইফতার বিতরণসহ ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি ও এর অংগ সহযোগী সংগঠনগুলো। : বাংলাদেশ ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এক সংগে গাঁথা । আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুনঃ মহা বিপ্লব হেতু…। আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্রন্তিকালে বিদ্রোহী কবির ধূমকেতুর মতোই ত্রাতার ভূমিকায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব ঘটেছিল। তিনি একজন সৈনিক থেকে ক্রন্তিকালে স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ, যুদ্ধ শেষে সেনাবাহিনীতে ফিরে যাওয়া, ক্রান্তিকালে দেশের দায়িত্বগ্রহণ, প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হওয়া এবং সর্বোপরি একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এদেশের সমৃদ্ধির প্রতিটি েেত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। জিয়াউর রহমানের সততা ও দেশপ্রেম ছিল সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে ও ঈর্ষণীয়। তার দেশপ্রেমের প্রকৃষ্ট উদাহরণই হলো ‘বাংলাদেশ’। তার সততা নিয়ে তার চরম শত্রুও কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি। একজন সাধারণ মেজর হয়েও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের সময়ে প্রাণ বাঁচাতে অনেকে যখন পালিয়ে গিয়েছিল এর বিপরীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে আজো দেশবাসীর হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন। : মহান এই দেশদরদী নেতা ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার নিভৃত পল্লী বাগবাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব ও কৈশোরে তিনি কমল নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর পিতা মনসুর রহমান সরকারি চাকরির জন্য প্রথমে কলকাতায় ও ’৪৭ সালে দেশ ভাগের পর করাচি শহরে অবস্থান করায় সেখানেই তাঁর লেখাপড়া। শিক্ষাজীবন শেষ করে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুলে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তিনি কমিশন লাভ করেন। পাক-ভারত যুদ্ধে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসাবে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তিনি এই যুদ্ধে কোম্পানির সর্বোচ্চ খেতাব ও ১টি বিশেষ উপহার লাভ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে হানাদার পাকবাহিনী মারণাস্ত্র নিয়ে মুজিব-ভুট্টো আলোচনারত অবস্থায় হঠাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে নিহত হয় হাজার হাজার মানুষ। শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতারের পর পাকিস্তান পাঠানো হয়। হানাদারদের অতর্কিত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ। চট্টগ্রামে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান এ রাতেই ষোলশহরে সেনাবাহিনীর ৮ম ব্যাটালিয়নের সব বাংলাভাষী অফিসার ও জওয়ানকে ডেকে একত্র করে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতার ডাক দেন। মেজর জিয়ার এই আহ্বানে গোটা অষ্টম ব্যাটালিয়নে ব্যাপক সাড়া দিয়ে সৈনিক ও অফিসাররা উল্লসিত হয়ে ওঠে। মেজর জিয়াউর রহমান পাকবাহিনীর আক্রমণে নিরস্ত্র জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়ে ২৬ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মেজর জিয়া চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মেজর জিয়ার কণ্ঠস্বর শুনে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে দিশেহারা গোটা জাতি। ‘আমি মেজর জিয়া বলছি…বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি’Ñতাঁর এই অবিস্মরণীয় অবিনাশী ঘোষণায় পথহারা মুক্তিকামী জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে। : জিয়াউর রহমান শুধু মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মেজর জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে কর্নেল এমএজি ওসমানীকে এ দায়িত্ব অর্পণ করার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর বৃহত্তর এলাকায় বীরত্বের সঙ্গে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তিনি চৌকস জেড ফোর্স গঠন ও পরিচালনা করেন। বীরত্বের সঙ্গে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর আবার ফিরে যান ক্যান্টনমেন্টে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী খোন্দকার মুশতাক ক্ষমতা দখল করে প্রেসিডেন্ট হলে সেনাবাহিনীসহ গোটা জাতির ভাগ্যোন্নয়নে তখন বিরাজ করছিল চরম অনিশ্চয়তা। এরই মধ্যে খোন্দকার মুশতাককে পাল্টা আরেক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করে আধিপত্যবাদের ক্রীড়নকরা ক্ষমতা দখল করে। সে সময় কিংকর্তব্যবিমূঢ় নেতৃত্বশূন্য জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্যে জিয়াউর রহমানকে দায়িত্ব দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয় সৈনিক-জনতা। দেশের নেতৃত্ব গ্রহণের পর জিয়াউর রহমান অল্প সময়ের মধ্যেই তলাবিহীন ঝুড়ির বদনামমুক্ত করে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেন। তিনি একদলীয় শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দেশে বাক-ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শনের প্রবক্তা জিয়া জাতির নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরেন। তাঁর অন্যতম উপহার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। তাঁর সুশাসনে উদীয়মান এক অমিত সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় আসন লাভ করে। জিয়াউর রহমান ছিলেন সমৃদ্ধ এবং উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও পথ-প্রদর্শক। তিনি বাংলাদেশকে অধিকতর সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে দেশের সম্ভাবনার প্রতিটি দিককে উন্মোচনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত সততা, পরিশ্রমপ্রিয়তা, কর্তব্যনিষ্ঠা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা, নির্লোভ, নির্মোহ ও গভীর দেশপ্রেমসহ বহু সৎগুণাবলী দিয়ে তিনি জাতির সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এক নতুন জাগরণ সৃষ্টি করেন। স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদি দেশগড়া কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যেই জনগণের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তাঁর বলিষ্ঠ, গতিশীল ও পরিকল্পিত নেতৃত্বে দেশ সত্যিকার উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই দেশবাসীর প্রাণপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নেন। মুসলিম বিশ্বে, জোটনিরপে বলয়ে ও পাশ্চাত্যে তেজদীপ্ত ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালনে, সার্কের সফল স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে শহীদ জিয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের অগ্রভাগে এনে দিয়েছিলেন। জিয়ার ঈর্ষণীয় এই জনপ্রিয়তা ও দেশপ্রেমই তাঁর জন্য কাল হয়েছিল। দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা চট্টগ্রামে তাঁকে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতে গোটা পৃথিবী শোকাভিভূত হয়ে পড়েছিল। এ শোকের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল শেরেবাংলানগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জানাজায়। লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে সেদিন জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাণী : “মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তনকারী, ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ কালজয়ী দর্শনের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, সফল রাষ্ট্রনায়ক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৮তম শাহাদতবার্ষিকীতে আমি তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। শহীদ জিয়ার অমøান আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং দেশীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির রক্ষাকবচ। : তাঁর জীবিতকালে জাতির চরম দুঃসময়গুলোতে জিয়াউর রহমান দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতার বীরোচিত ঘোষণা, স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা এবং রাষ্ট্র গঠনে তাঁর অনন্য কৃতিত্বের কথা আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। ’৭১ সালে সারা জাতি যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, অথচ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ দিশেহারা, ঠিক সেই মুহূর্তে ২৬ মার্চ মেজর জিয়ার কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের অভয়মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। ফলশ্রুতিতে দেশের তরুণ, ছাত্র, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্বাধীনতা-উত্তর শাসকগোষ্ঠীর অগণতান্ত্রিক দমনমূলক শাসন শোষণের যাঁতাকলে মানুষের প্রাণ হয় ওষ্ঠাগত, দেশের মানুষের একের পর এক গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো হরণ করা হয়, দেশ একদলীয় একনায়কতান্ত্রিক শাসনের নিষ্ঠুর কবলে পড়ে পিষ্ট হতে থাকে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে মানুষের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়। সেই সময় দেশের সর্বত্র ভয়াবহ নৈরাজ্য নেমে আসে। গণতন্ত্র হত্যা ও অরাজকতার অমানিশার দুর্যোগের মুখে দেশের সিপাহী-জনতার মিলিত শক্তির মিছিলে জিয়াউর রহমান জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হন। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে ফিরিয়ে দেন বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্র ও নাগরিক স্বাধীনতা। তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা করেন। উৎপাদনের রাজনীতির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করেন। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির আখ্যা থেকে খাদ্য রফতানিকারক দেশে পরিণত করেন। ব্যক্তিজীবনেও দুর্নীতি, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও সুবিধাবাদের কাছে আত্মসমর্পণকে তিনি ঘৃণা করতেন। তাঁর অন্তর্গত স্বচ্ছতা তাঁকে দিয়েছে এক অনন্য ঈর্ষণীয় উচ্চতা। তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কারের কারণেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত হয়। : এই মহান জাতীয়তাবাদী নেতার জনপ্রিয়তা দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারী শক্তি কখনোই মেনে নিতে পারেনি। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই অশুভ চক্র তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এই চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে একজন মহান দেশপ্রেমিককে দেশবাসী হারায়। তবে চক্রান্তকারীরা যতই চেষ্টা করুক কোনো ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেই তিনি বিস্মৃত হন না বরং নিজ দেশের জনগণের হৃদয়ে চিরজাগরুক হয়ে অবস্থান করেন। নিখাদ দেশপ্রেমিক এই মানুষটিকে কেউ কখনো তাঁর বিশ্বাস থেকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি। তিনি সারাজীবন আদর্শকে বুকে ধারণ করে নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে গেছেন। : বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকার দেশে একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। কেন্দ্রীভূত স্বৈরতন্ত্রের প্রতিভূ বর্তমান সরকার। এরা নতুন কায়দায় পুরানো বাকশালকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। বিরোধী দলের অধিকার, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভূলুন্ঠিত করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সেজন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সাজানো মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এ যেন গণতন্ত্রকেই কারাগারে আটকিয়ে রাখা। যে নেত্রী বারবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ‘গণতন্ত্রের প্রতীকে’ পরিণত হয়েছেন। সেই কারণেই গণতন্ত্রের শত্রুরা বেগম জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। : জনমনে ভয় আর আতঙ্ক সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ চালানো হচ্ছে। এমতাবস্থায় হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সকল গণতন্ত্রকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার আপোসহীন নেত্রী কারাবন্দি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আবারও তাঁর নেতৃত্বে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। জাতীয় জীবনের চলমান সংকটে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে। : রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, নির্ভীক নির্মোহ রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়ার আদর্শ, দেশপ্রেম, সততা ও কর্মনিষ্ঠা আজ জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রেরণার উৎস। এবার ৩০ মে মহান নেতার শাহাদাতবার্ষিকী সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহসহ সকল স্তরের জনগণের প্রতি আমি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। : কর্মসূচি : মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৩৮তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির উদ্যোগে গতকাল বুধবার রাজধানীর রমনাস্থ ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স-বাংলাদেশ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৩৮তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শেরেবাংলা নগরস্থ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। এছাড়াও যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মহিলাদলসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনও নেতার শাহাদাতবার্ষিকীতে পৃথক কর্মসূচি পালন করবে। শাহাদাত বার্ষিকীর অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে থাকছে- রক্তদান কর্মসূচি, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা। সারাদেশের মহনগর, জেলা ও উপজেলাগুলোতেও অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হবে। : দিনকালে মিলাদ : প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৮তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বাদ আসর দৈনিক দিনকালে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত মিলাদ মাহফিলে দৈনিক দিনকাল সংশ্লিষ্ট সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।