দুধ-দইয়ে ভয়ঙ্কর রাসায়নিক

প্রকাশিত: ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ, মে ৯, ২০১৯

দুধ-দইয়ে ভয়ঙ্কর রাসায়নিক

বাজারে প্রচলিত তরল দুধের ৯৬টির মধ্যে ৯৩টির নমুনায় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দই ও পশুখাদ্যেও ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন হাইকোর্টে। তবে কোন কোন কোম্পানির দুধে এসব ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে তা সুনির্দিষ্ট না করায় ওইসব কোম্পানির নাম আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয়।

একই সঙ্গে কারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের নাম-ঠিকানাও দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ মের মধ্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে এ তালিকা দাখিল করতে বলা হয়। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম এ আদেশ দেন।

এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশানুযায়ী বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদনটি দাখিল করে। প্রতিষ্ঠানটি ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরিতে দুধ, দই ও পশুখাদ্য পরীক্ষা করে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ আদালতের কাছে তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, কাঁচা তরল দুধে ৯৬টি নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তার মধ্যে অণুজৈবিক বিশ্লেষণ রিপোর্ট অনুযায়ী ৯৩টির নমুনায় টিপিসি ও কলিফরম কাউন্ট ক্ষতিকর মাত্রায় বিদ্যমান।

একটি নমুনায় সালমোনেলা পাওয়া গেছে। রাসায়নিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী ৫টি নমুনায় সিসা, ৩টিতে আফলাটক্সিন, ১০টিতে টেট্রাসাইক্লিন, ১টিতে সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং ৯টিতে পেস্টিসাইট (এন্ডোসালফান) ক্ষতিকর মাত্রায় পাওয়া যায়। প্যাকেটজাত তরল দুধের ৩১টি নমুনার (দেশি ২১টি এবং আমদানি ১০টির) মধ্যে ১৭টি দেশি দুধের নমুনায় টিপিসি ও কলিফরম কাউন্ট, ১৪টিতে মোল্ডস এবং আমদানি করা ১টির নমুনায় কলিফরম কাউন্ট ক্ষতিকর মাত্রায় বিদ্যমান। রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশি দুধের একটির নমুনায় আফলাটক্সিন, ৬টিতে টেট্রাসাইক্লিং এবং আমদানি দুধের তিনটিতে টেট্রাসাইক্লিং ক্ষতিকর মাত্রায় রয়েছে। এ ছাড়া দইয়ের ৩৩টি নমুনার ১৭টিতে টিপিসি, ৬টিতে পলিফরম কাউন্ট, ১৭টিতে ইস্ট/মোল্ড এবং ১টিতে সিসা ক্ষতিকর মাত্রায় বিদ্যমান। পশুখাদ্যের ৩০টির মধ্যে ১৬টিতে ক্রোমিয়াম, ৪টিতে আফলাটক্সিন, ২২টিতে টেট্রাসাইক্লিং, ২৬টিতে এনরোফ্লক্সাসিন, ৩০টিতে সিফরোফ্লক্সাসিন এবং ২টিতে পেস্টিসাইট (এন্ডসালফান) ক্ষতিকর মাত্রায় বিদ্যমান।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আদালতের আদেশের পর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. মাহবুব কবিরকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে। এই কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছেÑ চার সপ্তাহের (গত ২৪ এপ্রিল থেকে আগামী ২২ মে) মধ্যে কাঁচা তরল ও পাস্তুরিত দুধের নমুনা সংগ্রহ, গবেষণাগারে পরীক্ষা ও কমিটি কর্তৃক ফল পর্যালোচনা; দুই. পশুখাদ্যের নমুনা সংগ্রহ এবং গবেষণাগারে পরীক্ষা ও কমিটি কর্তৃক ফল পর্যালোচনা (২৩ মে থেকে ২২ জুনের মধ্যে); তিন. (২৩ মে থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে) প্রাথমিক উৎপাদন ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ, ফলসমূহের তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং কমিটি কর্তৃক যথাযথ সুপারিশ প্রণয়ন।

কমিটির আহ্বায়ক স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কমিটির সদস্যদের নামের তালিকাও আদালতে দাখিল করা হয়। তবে প্রতিবেদনে কোনো কোনো কোম্পানির দুধে এই ভেজাল বা রাসায়নিক দ্রব্য রয়েছে তাদের নাম-ঠিকানা না দেওয়ায় আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে আদালত কোম্পানিগুলোর নাম-ঠিকানা আগামী ১৫ মের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফরিদুল আলম।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের আদেশেÑ ঢাকাসহ সারাদেশে দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্য ও গো-খাদ্যপণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসাসহ বিভিন্ন রাসায়নিক মেশানো রয়েছে এবং কোন কোন কোম্পানির দ্রব্যে কী পরিমাণ রয়েছে তা নিরূপণ করে একটি জরিপ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এসব খাদ্যপণ্যে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিকসহ নানা উপাদান রয়েছে মর্মে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর নজরে আসার পর উপরোক্ত বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ জারি করেন।

একই সঙ্গে নিরাপদ দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্য ও গোখাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ও ভেজাল প্রতিরোধে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে রুল জারি করেন। পাশাপাশি দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্য ও গোখাদ্যে ভেজাল মেশানোর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়। ওই আদেশ অনুযায়ী গতকাল প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।