নতুন ইতিহাস গড়ল টাইগাররা

প্রকাশিত: ৭:২৯ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০১৯

নতুন ইতিহাস গড়ল টাইগাররা

অপেক্ষাটা ছিল বহুদিনের। ২০০৯ সালে দেশের মাটিতে প্রথম কোনো ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মুত্তিয়া মুরালিধরনের বোলার থেকে ব্যাটসম্যান বনে যাওয়ায় প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা হারানোর দুঃখে পোড়ে বাংলাদেশ।

এরপর আরো পাঁচবার তীরে এসে তরী ডুবেছে টাইগারদের। অবশেষে দীর্ঘ ১০ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শিরোপা-খরা ঘোচাল বাংলাদেশ। শুক্রবার আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েই নতুন ইতিহাস গড়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।

এমন একটি জয়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল যেন গোটা জাতি। তবে বারবার শিরোপার কাছাকাছি এসেও যেন খেই হারিয়ে ফেলছিল বাংলাদেশ দল। দেশের মাটিতে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে যে আক্ষেপের শুরু হয়েছিল, ১০ বছর পর হাজার হাজার মাইল দূরে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ঘুচল সেই আক্ষেপ আর অপেক্ষার অবসান। তবে আগের ছয় ফাইনালের মতো এবারও উৎকণ্ঠায় প্রতিটি মুহূর্ত কাটাতে হয়েছে টাইগার ভক্তদের।

ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ওঠার পর থেকেই প্রতীক্ষায় ছিল ক্রিকেটভক্তরা। পুরো সিরিজে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, তাই ফাইনালে ফেভারিট ছিল মাশরাফি বাহিনীই। সমর্থকরা আশায় বুক বেঁধেছিল, এবার হয়তো ফাইনালে হারের হতাশায় ভুগতে হবে না। ডাবলিনের ম্যালাহাইড ক্রিকেট গ্রাউন্ডে নির্ধারিত সময়েই (বাংলাদেশ সময় বিকেল পৌনে ৪টায়) শুরু হয় বহুল প্রতিক্ষিত ম্যাচটা। ম্যাচের আগে টস-ভাগ্যটাও বাংলাদেশ অধিনায়কের দিকে চেয়েই হাসে। মেঘলা আবহাওয়া আর সহায়ক কন্ডিশনে প্রথমে বোলিং বেছে নেন টাইগার দলপতি। কিন্তু বাংলাদেশ দল এবং টাইগার সমর্থকদের হতাশায় নিমজ্জিত করে অসাধারণ সূচনা করে দুই ক্যারিবীয় ওপেনার।

ইনিংসের প্রথম ২০ ওভারে মোটামুটি ভালো একটা ঝড় তুলে বিনা উইকেটে ১৩১ রান তুলে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার। এরপর আসে বৃষ্টির বাধা। বৃষ্টির কারণে একপর্যায়ে খেলা হবে কি হবে না, সেই দ্বিধায় পড়ে যায় ক্রিকেটভক্তরা। অবশেষে, দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টায় শুরু হয় খেলা। ম্যাচের লম্বা সময় বৃষ্টির কারণে নষ্ট হওয়ায় ২৪ ওভারের খেলা নির্ধারিত হয়। নির্ধারিত ২৪ ওভারে ১৫২ রান তুলে বিরতিতে যায় ক্যারিবীয়রা।

কিন্তু বিরতির পর বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তদের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয় বৃষ্টি আইনের কারণে। ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১০ রান। একদিকে ফাইনাল ম্যাচের চাপ, অন্যদিকে মাত্র ২৪ ওভারে ২১০ রান করার চ্যালেঞ্জ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ হয়ে যায় ম্যাচ জেতাটা। তবে সম্ভবত অন্যরকম এক প্রতিজ্ঞায় নিজেদের উজ্জীবিত করে মাঠে নেমেছিলেন টাইগাররা। তাই শুরু থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার।

উদ্বোধনী জুটিতে ৫.৩ ওভারে ৫৯ রান তুলে বিদায় নেন তামিম ইকবাল। একই ওভারে সাব্বির রহমানও বিদায় নেন। তবে লক্ষ্যে অবিচল থেকে নিজের খেলাটা খেলতে থাকেন সৌম্য। তাঁকে যথার্থ সাহচর্য দিতে থাকেন মুশফিকুর রহিম। তবে ৬৬ রান তুলে সৌম্য এবং ৩৬ রান করে বিদায় নেন মুশফিক। বাংলাদেশ ভক্তদের চোখেমুখে সংশয়ের অন্ধকার নেমে আসে কিছুক্ষণ পর মোহাম্মদ মিঠুনও বিদায় নিলে। একপর্যায়ে রান আর বলের ব্যবধান বেড়ে যায় বেশ খানিকটা।

তবে অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সম্ভবত ইতিহাস গড়ার চিন্তা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। বাঁহাতি স্পিনার ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের এক ওভারে ২৫ রান তুলে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন মোসাদ্দেক। বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে তৃতীয় দ্রুততম ফিফটির (২০ বলে) রেকর্ডটাও করে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত ২৪ বলে অপরাজিত ৫২ রানের অবিস্মরণীয় এক ইনিংস খেলে দলকে জয়ের বন্দরে ভেড়ান ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান, সঙ্গী হিসেবে ছিলেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সাত বল বাকি থাকতেই পাঁচ উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ দল।

এই একটি জয়ের সঙ্গে সঙ্গেই নতুন করে রচিত হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাস। সপ্তম ফাইনালে এসে প্রথম জয় পায় টাইগাররা। আর প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা নিশ্চিত করে ইতিহাস গড়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।