নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্ত আজ জানাবে ইসি, অধীর অপেক্ষায় দেশবাসী

প্রকাশিত: ১২:০৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০১৮

নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্ত আজ জানাবে ইসি, অধীর অপেক্ষায় দেশবাসী

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ পেছানো হবে কি-না সে সিদ্ধান্ত সোমবার জানানো হবে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট, ঐক্যফ্রন্ট ও বিকল্পধারা নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন পেছানোর দাবির প্রেক্ষিতে রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন পেছানোর দাবি সম্পর্কিত কোনো চিঠি আমার কাছে এখনও পৌঁছায়নি। সোমবার এগুলোদেখে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহনের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন একমাস পেছানোর দাবি জানিয়ে কমিশন সচিবের কাছে চিঠি দিয়েছেন।

এছাড়াও ভোট গ্রহণের তারিখ এক সপ্তাহ পেছানোর অনুরোধ জানিয়ে সিইসিকে চিঠি দেন যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

নির্বাচনের তারিখ এক মাস পেছানো সম্ভব কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এখন তো বলতে পারব না। যেহেতু আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমাদের সাথে এগুলো নিয়ে কথাই হয়নি।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসার বিষয়ে জানতে চাইলেও কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনো আসে নাই। আমি এখনো পাইনি।’ সরকারও নির্বাচন পেছানোর কথা বলেছে, এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলেন, ‘এ খবরটিও আমরা পাইনি।’

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার কাছে চিঠি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রবিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এই চিঠি পৌঁছে দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, সাবেক ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার আবদুল বারী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা শাইরুল কবির খান।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৯ নভেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ।

মির্জা ফখরুল আজ চিঠিতে জানিয়েছেন, এত অল্প সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করে মনোনয়নপত্র দাখিল করা সম্ভব না। তাই, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এই তফসিল এক মাসের জন্য পিছিয়ে দিতে অনুরোধ জানান তিনি।

চিঠিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), ২০ দলীয় ঐক্যজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গণতন্ত্র উদ্ধারের অংশ হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতামতকে উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি করে নির্বাচন কমিশন যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সব রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে মনোনয়নপত্র দাখিল করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যা ইতিমধ্যে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।

অতএব, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনী সিডিউল এক মাস পিছিয়ে দিতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

গত ৮ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি কে এম নুরুল হুদা। তিনি জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৯ নভেম্বর সোমবার। মনোনয়ন বাছাইয়ের শেষ তারিখ ২২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার। ২৩ ডিসেম্বর রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এর পরের দিনই জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে গেলে তিন দিনের মধ্যে জানাতে বলেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ।

এদিকে, আজই বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে আটটি রাজনৈতিক দল নিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। আগামীকাল সোমবার থেকে তাদের মনোনয়নপত্র বিতরণের কথা রয়েছে। দলগুলো হলো- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি, নিবন্ধন নম্বর-৭), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি, নম্বর-১), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি, নম্বর-১৮), খেলাফত মজলিস (নম্বর-৩৮), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা, নম্বর-৩৬), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (নম্বর-৩১), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (নম্বর-৪০) ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (নম্বর-২৩)।

অন্যদিকে রবিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাইলে তফসিল পেছাতে পারে। এটা ইসির বিষয়। পেছালেও দলীয়ভাবে আপত্তি জানাবে না আওয়ামী লীগ। তবে এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন আছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ পেছানোর ব্যাপারে সংসদীয় বোর্ডে আলোচনা হবে।

রবিবার ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন পেছানোর বিষয়টা ইসির। তারা পেছাবেন কি না সেটা তাদের বিষয়। সিডিউলের বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে ইসির এখতিয়ার।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের পেছানোর সময় এবং দাবি যৌক্তিক হতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা সময় ও বাস্তবের দিকে চেয়ে যথাযথভাবে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন সিডিউল পেছালে আমরা আপত্তি করবো না। দলীয়ভাবে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। তবে সব দলের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবে নির্বাচন কমিশন এটা ইসির কথা।

ক্রিকেটার মাশরাফির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক আগে থেকেই মাশরাফির বিষয়টা ভাবা হচ্ছে। মাশরাফি তার নিজ এলাকায় কাজ করছেন। তবে সাকিবকে দেশের স্বার্থে আরও খেলতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মণি, সাংগঠনিক সম্পাদক একে এম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।