সমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগে টানাপড়েন

প্রকাশিত: ১:৪০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮

সমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগে টানাপড়েন

আগামী শনিবার ১৪-দলীয় জোটের সমাবেশ নিয়ে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে জোটের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগে। দলটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা গেছে বিএনপির সঙ্গে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ‘পাল্টাপাল্টি’ সমাবেশ নিয়ে। বিষয়টি গড়িয়েছে নিউইয়র্কে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কান পর্যন্ত।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের অনেকেই এ সমাবেশের বিপক্ষে। অন্যদিকে ১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমসহ অনেকেই সমাবেশের পক্ষে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, শেষ পর্যন্ত শনিবার ১৪ দলের কর্মসূচি হবে কি না তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

আগামী শনিবার বিকালে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশ হওয়ার কথা। একই দিনে রাজধানীতে দুটি সমাবেশ হলে সহিংসতার আশঙ্কা থেকে আওয়ামী লীগের অনেকেই এ কর্মসূচির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এই পক্ষের নেতারা, সরকারের ভাবমূর্তি ইতিবাচক করার জন্য বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দীতে অনুমতি দিয়ে ১৪ দলের কর্মসূচি স্থগিত চান।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী শনিবার ১৪ দল ও বিএনপির সমাবেশের বিষয়টি জানিয়ে নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল সকালে টেলিফোনে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় দলীয় সভাপতির নির্দেশনা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুধু তাই নয়, বিষয়টি জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর এক ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে দিয়েও আওয়ামী লীগের ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমকে ফোন করানো হয়। তারা ধারণা করেছিলেন, ১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্র নিজেই সংবাদ সম্মেলন করে সমাবেশ স্থগিতের খবরটি জানাবেন। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যায়ও তিনি জানান শনিবার ১৪ দলের কর্মসূচি হবে।

দলটির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা না করেই শনিবারের কর্মসূচি ঘোষণা করেন মোহাম্মদ নাসিম। যে কারণে দলের নেতাদের অনেকেই বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখেননি। শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীন জোটের সমাবেশ রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের মতো ছোট জায়গায় অনুষ্ঠিত হবে এ বিষয়টিও মেনে নিতে পারেননি আওয়ামী লীগের ওই নেতারা।

তাদের বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে বড় সমাবেশ হতে হবে ১৪-দলীয় জোটের। কিন্তু জাতীয় ঐক্যের নেতারা যে স্থানে সমাবেশ করেছে প্রায় ১০০০ আসন সম্পন্ন মহানগর নাট্যমঞ্চের অডিটোরিয়ামে, সেখানে আর যাই হোক ১৪-দলীয় জোটের সমাবেশ হতে পারে না। ১৪-দলীয় জোটের সমাবেশ হবে বড় আকারে, ঢাকা শহরজুড়ে।

অন্যদিকে ১৪ দলের সমাবেশের পক্ষের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছেন, ১৪ দল একটা আদর্শিক জোট। জোটের একটা কর্মসূচি ঘোষণার পর সেখান থেকে সহজেই সরে আসা যায় না। এতে অন্য শরিকদের আস্থা নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। তা ছাড়া ১৪ দলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে আগেই। বিএনপি বরং ১৪-দলীয় জোটের কর্মসূচি ঘোষণার পর তাদের কর্মসূচির দিন পাল্টেছে। তাই বিএনপির ভয়ে ১৪ দলের কর্মসূচি স্থগিতের কোনো অর্থই হয় না।

গতকাল দুপুরে রাজবাড়ীর পাংশার এক জনসভায় কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি না দেওয়ার ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেবে না। পাল্টা কর্মসূচি দেয় তারা, যারা ভয় পায়। আমরা ভয় পাই না। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অবশ্য বলেন, কিন্তু আপনারা রাজপথে থাকবেন। কাউকে রাজপথ দখল করে সভাসমাবেশ করতে দেওয়া হবে না।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের পর অনেকের মনেই প্রশ্নের দেখা দেয়Ñ শেষ পর্যন্ত ১৪ দলের কর্মসূচি হচ্ছে কিনা? এর পর এ বিষয়ে খোঁজ নিলে আওয়ামী লীগের কোনো দায়িত্বশীল নেতা স্পষ্ট কিছু বলতে চাননি। এমনকি গণমাধ্যমে উদ্ধৃত হয়েও কেউ কথা বলতে চাননি। তারা সবাই ১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। শেষ পর্যন্ত শনিবার ১৪ দলের কর্মসূচি হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাদের মনে।

গতকাল সন্ধ্যায় আমাদের সময়ের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আগামী শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চে ১৪ দলের সভা হবে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, আমরা কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিইনি। রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে ২৯ সেপ্টেম্বর ১৪ দলের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি। বিএনপির সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কর্মসূচি ছিল ২৭ সেপ্টেম্বর। তারা (বিএনপি) কারও সঙ্গে কোনো কথা না বলেই তাদের কর্মসূচির সময় পরিবর্তন করেছে। তারা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাচ্ছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি আমরা দিইনি। বিএনপিই দিয়েছে।

১৪-দলীয় জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, আগামী শনিবার কর্মসূচি সফল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। কর্মসূচি স্থগিতের কোনো খবর এখনো পাননি। জাসদ একাংশের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আরেকাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া এবং ঢাকা মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক শাহে আলম মুরাদ তিনজনই বলেছেন, কর্মসূচি স্থগিতের কোনো খবর তারা জানেন না।

অবশ্য শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, আসলে ওইদিন ১৪ দলের কোনো সমাবেশ নেই। মহানগর নাট্যমঞ্চে আমাদের যৌথ কর্মিসভার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কর্মিসভার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। আমাদের কর্মিসভা হবে নাট্যমঞ্চের ভেতরে, বাইরে কোনো কর্মসূচি নেই।

এর আগে প্রথমে বৃহস্পতিবার পরে শনিবার ঢাকায় জনসভার ঘোষণা দেয় বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার ১৪ দলের এক সভায় শনিবারই ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে জোটের সমাবেশের ঘোষণা দেন ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম। বলেন, নেতাকর্মীরা এলাকায় প্রস্তুত থাকবেন। কারও নামে বা কোনো দলের নাম উল্লেখ না করেই নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নাসিম বলেন, ওই অপশক্তি যেন মাঠে নামতে না পারে। ওদের মাঠে প্রতিহত করবেন, রাস্তায় প্রতিহত করবেন। নাসিমের ওই বক্তব্যের পর দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বেশ উত্তাপ ছড়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট