যে-কোনো মুহূর্তে বিনা ভোটের সরকার হুড়মুড় করে পড়ে যাবে : রিজভী

প্রকাশিত: ৩:৩৮ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০১৮

দেশের মানুষের মনে ঈদের কোনো আনন্দ নেই দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একদিন পরই মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। ঈদ মানেই উৎসব, ঈদ মানেই আনন্দ। কিন্তু মানুষের মনে ঈদের কোনো আনন্দ নেই। দেশে যে ভয়াবহ দুঃশাসন ও স্বৈরশাসন চলছে এর যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে গোটা জাতি আজ আতঙ্কিত-উৎকণ্ঠিত। গতকাল সোমবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, আর একদিন পরই মুসলিম বিশ্বের আরেকটি বড় উৎসব ঈদুল আজহা। ঈদ মানেই উৎসব, ঈদ মানেই আনন্দ। কিন্তু মানুষের মনে কোনো ঈদের আনন্দ নেই। দেশে যে ভয়াবহ দুঃশাসন ও স্বৈরশাসন চলছে এর যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে গোটা জাতি আজ আতঙ্কিত-উৎকন্ঠিত। এমনিতে অবৈধ সরকারের দুর্নীতি, টাকা পাচার, লুটপাট, চাঁদাবাজি, দখলবাজিতে মানুষ অতিষ্ঠ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষ দিশেহারা। বাড়িভাড়া বেড়েছে, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে দফায় দফায়, মানুষের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। এরই মাঝে যোগ হয়েছে মামলা-হামলাসহ নানা আতঙ্ক। শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক আওয়ামী ভাবাপন্ন লোক হয়ত তাদের নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারে, কিন্তু বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, দেশের সাধারণ মানুষ, শিক্ষক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা এখন অবৈধ সরকারের নানা বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত, ক্ষতবিক্ষত। এতদিন শুধু বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, হামলা, জেল-জুলুম, নির্যাতন-নিপীড়নের খড়গ চলছিল। চলছিল অপহরণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা। এখন হামলা, মামলা, রিমান্ড এমনকি তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ শিক্ষার্থীদের। এমনকি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরাও রেহাই পাচ্ছে না অবৈধ শাসক গোষ্ঠীর হিংস্র আক্রমণ থেকে। নিরীহ ও নিরপরাধ শিক্ষার্থীরা ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিক আন্দোলনে অংশ নিয়ে ন্যায্য দাবিতে প্রতিবাদ করে এখন তারা কারাবন্দি। যদিও গতকাল কিছু শিক্ষার্থী জামিন পেলেও এখনও বহু নিরপরাধ শিক্ষার্থী কারাগারে বন্দি। মাথার ওপর মিথ্যা মামলার খড়গ ঝুলছে। : তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের জামিন মেলেনি এখনও। তাদের এবং তাদের অভিভাবকদের আহাজারি আর কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। অভিভাবকরা এক থানা থেকে আরেক থানা, আদালত থেকে আদলতে ছোটাছুটি করেও জামিন করাতে পারেননি সন্তানদের। সরকারের কাছে মিনতি জানিয়ে জনসমর্থনহীন সরকারের পাষাণ হৃদয় গলেনি। অজ্ঞাতনামা মামলার নামে হাজার হাজার জনকে আসামি করে মামলা দায়েরের ঘটনায় ঢাকাসহ সারাদেশের অভিভাকরা অজানা আতঙ্কে আছেন। বন্ধুরা, ছাত্ররা তাদের সহপাঠীদের জীবন বাঁচাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ করেছিল সেটা কি অপরাধ? শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত কোটা সংস্কার আন্দোলন কি অপরাধ? অন্যায়ের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করা কি অপরাধ? বেআইনি অস্ত্রে সজ্জিত হেলমেটধারী সরকারি দলের ক্যাডাররা ধাওয়া করে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে রক্তাক্ত করা কি ন্যায়সঙ্গত? আওয়ামী ক্যাডারদের হাতে আইন তুলে নেয়া কি বৈধ কাজ? তাদের নামে মামলা কেন হলো না! তারা কেন গ্রেফতার হলো না! গ্রেফতারের পর তাদের রিমান্ড হলো কেন! তারা কেন এখন কারাগারে নেই! মনে হয় সরকারি দলের ক্যাডারদের প্রকাশ্যে সহিংস সন্ত্রাসের জন্য লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। সে কারণে তারা আইনের ঊর্ধ্বে। সেজন্যেই প্রধানমন্ত্রী নিজ দলীয় ক্যাডারদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন অথচ আহত কোমলমতি শিক্ষার্থী ও আহত সাংবাদিকদের না দেখতে গিয়ে অবজ্ঞা করেছেন। তবে এ অনাচারগুলোর উত্তর একদিন ক্ষমতাসীনদের দিতেই হবে। জবাবদিহিতার দিন ঘনিয়ে আসছে। ঈশান কোণে কালো মেঘ দেখা দিয়েছে, যে কোনো মুহূর্তে কালবৈশাখির মত্ত ঝাপ্টায় বিনা ভোটের সরকার হুড়মুড় করে পড়ে যাবে। : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শুধুমাত্র সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কিভাবে জালনথির ওপর ভিত্তি করে মিথ্যা মামলা দিয়ে সরকার বন্দি করে রেখেছে। তিনি বার বার উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও নতুন নতুন মামলা ও অজুহাত দেখিয়ে তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরও তাকে চিকিৎসা না দিয়ে নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। বিএনপির লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলার খড়গ ঝুলছে। কারাবন্দি আছেন হাজারো নেতা-কর্মী। প্রতিনিয়ত চলছে গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা আর মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার নির্যাতন। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদ নিয়ে মানুষের মনে কোনো আনন্দ নেই, নেই কোনো স্বস্তি। : সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, যদিও এটি কোরবানির ঈদ। তবু বিগত দিনগুলোতে কোরাবানির ঈদেও রাজধানীসহ সারাদেশের মার্কেটগুলো ঈদের আগে জমজমাট থাকত। এক দশকের মধ্যে ঈদ বাজারে এমন মন্দাভাব আগে কখনও দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীরা দোকানে দোকানে ঈদের সামগ্রী তুলে বিপাকে পড়েছেন। বেচা-বিক্রি বন্ধ। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার জন্য ঘরমুখি মানুষরা প্রচন্ড দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। এ হলো দেশের বর্তমান অবস্থা। এ দুঃশাসনের অবসান ছাড়া দেশের মানুষের মুক্তি মিলবে না, মিলবে না স্বস্তি। শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে, সত্যিকারভাবে মানুষ তার পছন্দ অনুযায়ী জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারলেই কেবল মুক্তি মিলবে এ জাতির। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে আবারও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি দাবি করছি। মুক্তি দাবি করছি নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে আটককৃত সকল শিক্ষার্থীর। ড. শহিদুল আলমসহ সকল শিল্পী কুশলীদের মুক্তি দাবি করছি। : সারা দেশের গ্রেফতারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, গত পরশু থেকে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বরেণ্য আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে তার নিজ গ্রামের বাড়িতে পুলিশ অবরুদ্ধ করে রেখেছে, পুলিশ আজও অবরোধ তোলেনি। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশেই ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। নোয়াখালী জেলাধীন কবিরহাট উপজেলার নওরতনপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুবদল ও ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ গতকাল ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার সময় পুলিশ যে নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে তারা হলেন, ওলিউল্লাহ, মোঃ আব্দুল ওয়াহাব ধনু, মোঃ কামরুজ্জামান, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মোঃ মশিউর রহমান, হাফিজ উদ্দিন, সোহাগ মিয়া, মোঃ আঃ লতিফ মাস্টার। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বাড়িতে পুলিশের অবরোধের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবরোধ তুলে নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। আটককৃতদের মুক্তি দাবি করছি। : তিনি আরো বলেন, ফেনী জেলাধীন ছাগলনাইয়া উপজেলার ১০ নং গোপার ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এস এম আরিফকে গতকাল সন্ধ্যায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলার বিএনপি সভাপতি শহিদুল হক বাবুলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আমি উল্লেখিত নেতৃবৃন্দের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তির দাবি করছি। : সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, ড. মামুন আহমেদ, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড. ওবায়দুর রহমান, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মো. মুনির হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট