পুলিশ প্রধানমন্ত্রীর লাঠিয়াল, জনপ্রশাসন নায়েব-গোমস্তা : রিজভী

প্রকাশিত: ৯:৩০ অপরাহ্ণ, মে ৩১, ২০১৮

পুলিশ প্রধানমন্ত্রীর লাঠিয়াল, জনপ্রশাসন নায়েব-গোমস্তা : রিজভী

পুলিশ শেখ হাসিনার লাঠিয়াল, জনপ্রশাসন শেখ হাসিনার নায়েব-গোমস্তা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি এসময় প্রধানমন্ত্রী সমালোচনা করে রিজভী বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী দেশের গণতন্ত্র ও সংবিধানকে কেড়ে নিয়ে নিজের দখলে রেখেছে। দেশে আইনের শাসনের বদলে শেখ হাসিনার নিষ্ঠুর শাসনের বাড় বাড়ন্ত চারিদিকে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় বিচার বহির্ভূত হত্যার নামে অক্লেশে মেরে ফেলা হচ্ছে মানুষ। কপাল জোরে গডফাদার’রা বেঁচে যাচ্ছে-ক্ষমতার কানেকশন মজবুত থাকার কারনে। হত্যা লীলায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রাজনির্দেশ পালনে খুবই তৎপর।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন শেখ হাসিনার একতরফা নির্বাচন ঘোষণার মাইক্রোফোন এবং বিচার বিভাগের একচ্ছত্র প্রভুতে পরিণত হয়েছেন শেখ হাসিনা নিজেই। এমতাবস্থায় জনগণ, ন্যায় বিচার ও সুশাসন আওয়ামী সরকারের বিদ্রুপের পাত্রে পরিণত হয়েছে। আর সেজন্য চলছে বিরোধী দলের শেষ চিহ্ন মুছে দেয়ার মহা আয়োজন। সেজন্য এখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনে স্বস্তি নেই, কেন বেগম জিয়ার প্রতি মানুষের এতো সমর্থন। মিথ্যা মামলায় অন্যায় সাজার অত্যাচারী নিষ্ঠুর বল প্রয়োগ করার পরেও বেগম খালেদা জিয়া এখনো অদম্য ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে সকল নিপীড়নকে সহ্য করছেন। সুচিকিৎসা না দিয়ে প্রতি মুহূর্তে তার মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তার চিকিৎসায় বাধা দেয়া হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে তার শারীরিক ব্যথা যন্ত্রণাকে আরও তীব্র করার জন্যই তাকে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। বেগম জিয়াকে দেয়া চিকিৎসকদের সকল ব্যবস্থা পত্র কারা কর্তৃপক্ষ অগ্রাহ্য করছে। এটিও গণতন্ত্র ও বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার এক গভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ।

নির্বাচন কমিশন শেখ হাসিনার একতরফা নির্বাচন ঘোষণার মাইক্রোফোন এবং বিচার বিভাগের একচ্ছত্র প্রভুতে পরিণত হয়েছেন শেখ হাসিনা নিজেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বৃহস্পতিবার (৩১ মে) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘বুধবার ইফতারির পরপরই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদের চৌধুরীর চট্টগ্রামস্থ গুডহিল পৈত্রিক নিবাসে একদল সশস্ত্র ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসী আক্রমন চালায়। সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপকভাবে গাড়ি ভেঙে চুরমার করা ছাড়াও বাড়ির দরজা-জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এই হামলাটি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আবু সাদেক মো. সায়েমের নেতৃত্বে চালানো হয়। এতে অংশ নেয় চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ, হাজী মো. মহসীন কলেজ ছাত্রলীগ ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের শতাধিক সন্ত্রাসী। এই হামলায় ২০টি ব্যক্তিগত গাড়ি ও নিরাপত্তা প্রহরীদের বাসাসহ মূল ভবনেও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও তারা সেখানে দর্শকের ভূমিকা পালন করে। এ সময় বাসার চারদিকের সিসি ক্যামেরাও ভেঙে ফেলে তারা।’

তিনি বলেন, ছাত্রলীগ সভাপতি আবু সাদাত মো. সায়েম ঔদ্ধত্য সহকারে বলেন ‘২০১০ সালে এলডিপি’র চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের ওপর চট্টগ্রাম আদালতে হামলা চালিয়েছিল। তখন সাদাত বলেছিলেন, যারাই আওয়ামী লীগ ও আমাদের নেত্রীকে স্পর্ধা দেখাবে তাদেরকে সাইজ করা হবে। এই হচ্ছে আওয়ামী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যাডার বাহিনী।

অপরাধীকে প্রশ্রয় দিয়ে সরকার সারাদেশে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে বেআইনী পন্থায় মন্তব্য করে রিজভী বলেন, আওয়ামী চেতনায় রাঙ্গানো পুলিশের সাথে সাথে দলীয় অপরাধীদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জীবন, সহায়-সম্পদ সবকিছু বিপন্ন করার। তাই ক্ষমতার শীর্ষ ব্যক্তিদের আশকারা পেয়ে সায়েম’রা এলাকায় এলাকায় মাফিয়া ডন এ পরিণত হয়েছে। আমি দলের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় তীব্র ধিক্কার ও নিন্দা জানাচ্ছি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গতকাল ঢাকার ৭৪, দিলকুশায় শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ সঙ্গে নিয়ে এসে ‘দৈনিক দেশ জনতা’র অফিস উচ্ছেদ করে দিয়েছে। অথচ গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে অফিসের জন্য ভবনটি ভাড়া নেয়া ছিল এবং নিয়মিত ভাড়া পরিশোধিত ছিল। অথচ নোটিশ ছাড়াই ম্যাজিস্ট্রেট পত্রিকাটি উচ্ছেদ করা শুধু বেআইনীই নয় বরং পত্রিকাটি বিরোধী দলের মালিকের হওয়ার কারণেই অবৈধ সরকারের পক্ষ থেকে এটি দখল করা হলো। এটি দেশব্যাপী বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জানমালের ওপর সরকারি হামলার আরেকটি বিভৎস দৃষ্টান্ত। বিরোধী দলের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে চূড়ান্তভাবে দাফন করার জন্যই এই কাজটি করা হয়েছে। অবৈধ সরকার দুর্নীতির মহাসড়কে হাঁটতে গিয়ে বিরোধী দলের সরব প্রতিবাদকে রুদ্ধ করার জন্যই বিরোধী দলের মালিকের গণমাধ্যমকে দখল করে নেয়া হচ্ছে। আমি বিএনপি’র পক্ষ থেকে এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ৩০ মে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর ৩৭তম শাহাদাৎবার্ষিকী পালন উপলক্ষে গতকাল এবং আজ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালনের বাধা প্রদান করেছে পুলিশ। এসময় খাদ্য সামগ্রীসহ জিনিসপত্র কেড়ে নেয়া হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপি মহাসচিব এর কয়েকটি অনুষ্ঠানসহ বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের কয়েকটি অনুষ্ঠানও হামলা করে বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল ওয়ারী, দয়াগঞ্জ এবং আজ এফডিসি’র গেটে জাসাস আয়োজিত কর্মসূচিটি পুলিশ জোর পূর্বক বাধা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়াও ঢাকায় অধিকাংশ এলাকায় ৩০ শে মে উপলক্ষে ইফতার সামগ্রী, খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, দিবসটি উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় সিরাজগঞ্জেও ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সেখানে শান্তিপূর্ণ এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া আচরণ শুরু করেছে। তারা হুংকার দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছে-শাহাদাৎ বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বের হলে পিঠের চামড়া থাকবে না। স্থানীয় এমপি’র নির্দেশে বিএনপি’র তৈরীকৃত মঞ্চ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এছাড়া বরিশাল উত্তর জেলাধীন গৌরনদী উপজেলায় সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর শাহাদাৎবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে তা পন্ড করে দিয়েছে পুলিশ। প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করছে। পুলিশী হামলায় উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন, ছাত্রদল নেতা মোঃ রুবেল এবং এনামসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ছাত্রদল নেতা আবুল হোসেনকে। আমি অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি এবং সন্ত্রাসীদের এ ধরণের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এছাড়াও পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর মো. খাদেমুল ইসলাম খাদেম এর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ হাজারীবাগ থানা বিএনপির সদস্য সচিব মো. আব্দুল আজিজ এর বাসভবনে গিয়ে তার বড় ভাই এবং বাসার সদস্যদের বলে এসেছে যে, তিন দিনের মধ্যে আব্দুল আজিজ থানায় সাক্ষাৎ করতে না এলে তাকে মেরে ফেলা হবে এবং বুলডোজার দিয়ে তার বাড়ী ভেঙ্গে ফেলা হবে। পাশাপাশি আব্দুল আজিজ যেন অবিলম্বে আওয়ামী লীগে যোগদান করে সেটির জন্যও হুমকি দেয়া হয়। আমি বিএনপি’র পক্ষ থেকে পুলিশের এধরণের হুংকার ও বেপরোয়া আচরণের নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি করছি।

এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলছেন তিনি নাকি কিছু জানেন না। গোপনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কি ভয়ংকার অবস্থা। অথচ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী তাকে স্যাঁতসেঁতে ঘরের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। তাকে সঠিক চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে না। এটা কি জনগণের সরকার? এরা তো গডফাদার, সন্ত্রাসী ও বেআইনি কাজের যারা জড়িত তাদের সরকার।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অন্তরের জ্বালা ও বিদ্বেষের কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এসব করা হচ্ছে। যে যতদিন পারা যায় তাকে কষ্ট দাও।

ভারত সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তিনি বলেছেন ভারতকে সব দিয়ে দিয়েছেন। অদ্ভূত কথা। আমরা লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদের, প্রেমের কথা শুনেছি, দেবদাস- পার্বতীর প্রমের কথা শুনেছি। কিন্ত আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ও ভারতের সঙ্গে প্রেম ইতিপূর্বের সকল প্রেমকে হার মানিয়েছে। এত প্রেম এর আগে আমরা দেখিনি। তারা না চাইতেই সবকিছু উজার করে দিয়ে দেন। তারপ্রেম এত গভীর ভারতের জন্য। যার জন্যে যারা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের কথা বলবে তাদের তো জেলে থাকতে হবেই।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদের চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মো. মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, শামসুজ্জামান সুরুজ প্রমুখ।