কবি নজরুল অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে শিখিয়েছেন : ফখরুল

প্রকাশিত: ৫:০৫ অপরাহ্ণ, মে ২৫, ২০১৮

কবি নজরুল অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে শিখিয়েছেন : ফখরুল

কবি নজরুল আমাদের বিদ্রোহ শিখিয়েছেন, অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলতে শিখিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার সকালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদসংলগ্ন কবির কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এসময় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এখনও প্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

ফখরুল বলেন, কবি নজরুল আমাদের বিদ্রোহ শিখিয়েছেন, অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলতে শিখিয়েছেন। পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে আমাদের যে মহান মুক্তিযুদ্ধ, তাতেও ছিল তারই অনুপ্রেরণা। আজ খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ। তাই নজরুল আজও প্রাসঙ্গিক।

গীতিকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ারসহ বিএনপি এবং জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জাসাস) নেতাকর্মীরা এ সময় মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের পক্ষে কবির মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দিন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবদুস সামাদ, অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর, রেজিস্ট্রার এনামুজ্জামান, প্রক্টর একেএম গোলাম রাব্বানিসহ বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা।

প্রসঙ্গত, বিদ্রোহী কবি, সাম্যের কবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ: ২৪ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত।

তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য। বাঙালি মনীষার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন নজরুল। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।

বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে – কাজেই “বিদ্রোহী কবি”, তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।

নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে সম্মানিত মুয়াযযিন হিসেবেও কাজ করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন।

প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মতো কবিতা; ধূমকেতুর মতো সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী, এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালোবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন।

ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল, এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামা সংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুল গীতি” নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়।

মধ্যবয়সে তিনি পিক্স ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।