জামিনযোগ্য মামলায়ও জামিন পাচ্ছেন না বেগম খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ২:৪৪ পূর্বাহ্ণ, মে ২০, ২০১৮

জামিনযোগ্য মামলায়ও জামিন পাচ্ছেন না বেগম খালেদা জিয়া

বিএনপি নেতা ও আইনজীবীদের অভিযোগ, নিম্ন আদালতে জামিন না পাওয়া আইনের পরিপন্থী ॥ তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমাবনতিশীল হাত-পায়ের ব্যথা আরো বেড়েছে ॥ সুচিকিৎসা চেয়েও পাননি

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জামিনযোগ্য মামলায়ও জামিন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির দাবি, বেগম খালেদা জিয়াকে জালনথি তৈরির মাধ্যমে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সাজা দেয়ার পর সেই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর এখনও তাকে মুক্তি দিচ্ছে না সরকার। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নেত্রীকে বরং নতুন নতুন জামিনযোগ্য মামলায় আটকানো হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। বিশ^ব্যাপীও আজ নিন্দার ঝড় উঠেছে দেশনেত্রীকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়ার। তিনি যেসব মামলায় অতীতে জামিনে ছিলেন সেসব মামলায়ও তাকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। : এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে গুরুতর অসুস্থ, দিন দিন শারীরিক অবস্থা ক্রমাবনতিশীল। তিনি হাত ও পায়ের ব্যথায় প্রচন্ড কষ্ট পাচ্ছেন। : তিনি ব্যথার যন্ত্রণায় হাঁটতে পারছেন না, ঠিকমত ঘুমাতে পারছেন না। তিনি সুচিকিৎসার দাবি করলেও চিকিৎসা পাচ্ছেন না। সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন দেয়ার পরও কিভাবে একজন বয়স্ক জনপ্রিয় নেত্রীকে কারাগারে আটকে রেখে কষ্ট দেয়া হচ্ছে তা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে, তাকে চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। পবিত্র মাহে রমজানেও তার ওপর সর্বোচ্চ জুলুম চলছে। বিএনপি চেয়ারপারসনকে তিলে তিলে শেষ করে দিতেই শেখ হাসিনার নির্দেশে জামিনযোগ্য মামলায় তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। তিনি যেসব মামলায় জামিনে ছিলেন সেসব মামলায়ও গ্রেফতার দেখাতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী সরকারই নানা ফন্দি-ফিকির করছে কিভাবে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রেখে আবারও ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির মতো প্রহসনের নির্বাচন করা যায়। গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি আগামী নির্বাচন থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব, বিএনপি দূরে সরে যাচ্ছে না বরং আপনারাই নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন ৫ জানুয়ারির পুনরাবৃত্তি করার জন্য। সেজন্য আবাররও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি মাষ্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, সেটিরই আভাস পাওয়া যাচ্ছে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে। বিএনপি চেয়ারপারসনকে মাইনাস করে, বিএনপিকে মাইনাস করে আপনারা নির্বাচন করবেন সেই প্রহসন আর এদেশে হতে দেয়া হবে না। এদেশে যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন জনগণ হতে দেবে না। : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে তরা আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক নতুন মামলা দিয়ে সরকার রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে। নতুন নতুন মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে আটক রাখা সংবিধান পরিপন্থী। সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ। তিনি আর্থ্রাইটিসের ব্যথায় প্রচন্ডভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। তাকে সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। : বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার হাড় ক্ষয় হয়ে নার্ভগুলো চাপা পড়ে গেছে। এতে বাম হাতের শক্তি কমে যাচ্ছে। তিনি বাম হাতে কিছুই ধরে রাখতে পারছেন না। সেখানে প্রচন্ড ব্যথা। কোমরের হাড়ও ক্ষয়ে যাচ্ছে। স্পাইনাল কর্ডেও সমস্যা আছে। এ অবস্থায় শরীরের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারেন তিনি। : চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. কুদ্দুস জানান, ২০১৫ ও গতবছর তার (খালেদা জিয়া) চোখে অপারেশন করা হয়। তার চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়ারও সমস্যা আছে। আমরা শুনেছি বেগম খালেদা জিয়ার চোখ লাল হয়ে গেছে এবং প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে। যদি তার সুচিকিৎসা করানো না হয় চোখের কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিনি অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। : এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের মূল লক্ষ্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অসুস্থ রেখে তাকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখা। তার চিকিৎসা না করার পেছনে একটি নীলনকশা রয়েছে। : তিনি বলেন, বিগত সেনা সমর্থিত কেয়ারটেকার সরকারের সময় বেগম খালেদা জিয়ার নামে চারটি মামলা হয় আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা হয়। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার চারটি মামলা ৩৬টি হয়েছে। আর শেখ হাসিনার ১৫টি মামলার একটিও নেই। এই সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। নতুন নতুন মামলা দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতির মাঠে থাকলে ক্ষমতাসীনদের টনক নড়ে যায়। আর তাই তাকে রাজনীতি থেকে সরাতেই এসব মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে।