চিরনিদ্রায় বীর মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবি

প্রকাশিত: ১১:৩১ অপরাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০১৮

চিরনিদ্রায় বীর মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবি

মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবির জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের জিরারগাঁও গ্রামের নিজ বাড়িতে তাঁকে দাফন করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টায় লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশের মাঠে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা সম্পন্ন হয় কাঁকন বিবির।
এসময় পুলিশের একটি দল কাঁকন বিবিকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার বরকত উল্লাহ খান, দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক, দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজ, দোয়ারাবাজার উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সালেহা বেগম, সহকারী পুলিশ সুপার দোলন মিয়া, হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ খসরু, আব্দুল মজিদ বীর প্রতীক,।এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন, আব্দুল হালিম বীর প্রতীক, মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার নূরুল মোমেন, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল হক, বোগলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম জুয়েল, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা শামীম আহমদ চৌধুরী, নোয়ারাই ইউপি চেয়ারম্যান পীর আব্দুল খালিক রাজা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাজাহান মাস্টার, দোয়ারাবাজার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার সফর আলী প্রমুখ।
জানাজা শেষে কাঁকন বিবির মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ সহ এলাকার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
প্রসঙ্গত, বুধবার (২১ মার্চ) রাত ১১টা ৫মিনিটে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবি। বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে কাঁকন বিবির মরদেহ তার মেয়ের কাছে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারপর বেলা সোয়া ১১টায় কাঁকন বিবির মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের ঝিরাগাঁও গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে ওসমানী হাসপাতালের অভ্যন্তরে কাকন বিবিকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সিলেটের জেলা প্রশাসন, সিলেট মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, গত ১৯ মার্চ (সোমবার) নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কাঁকন বিবি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে কাঁকন বিবি শ্বাসকষ্ট সহ হৃদরোগে রোগে ভুগছিলেন বলে জানান চিকিৎসকরা। সোমবার রাতে তাঁর অবস্থা বেশি খারাপ হলে তাঁকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল।
এর আগে গত বছরের ২১ জুলাই ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে ওসমানী মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছিলেন কাঁকন বিবি। কয়েকদিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
কাকন বিবির জন্ম মেঘালয়ের নেত্রাই খাসিয়া পল্লীতে বলে জানিয়েছে সুনামগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দ। কাকন বিবির স্বামী সাঈদ আলীও প্রয়াত হয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ী সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার ঝিগারগাঁও গ্রামে।
১৯৭১ সালে ৩ দিনের নবজাতক কন্যাকে রেখে যুদ্ধে চলে যান কাকন বিবি। জুন মাসে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন তিনি। ব্যাংকারে আটকে দিনের পর দিন তাকে নির্যাতন করে পাক বাহিনী। ছাড়া পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর কাছে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেন কাকন বিবি। রহমত আলীর দলে সদস্য হয়ে সশস্ত্র যুদ্ধ করেন তিনি। একইসঙ্গে চালিয়ে চান গুপ্তচর বৃত্তির কাজ। নভেম্বর মাসে ৫নং সেক্টরের সেলা সাবসেক্টরের অধীনস্থ টেংরাঠিলার সম্মুখ যুদ্ধে কয়েকটি গুলি তার শরীরে বিদ্ধ হয়। পরে আমবাড়ী, বাংলাবাজার, টেবলাই, বালিউড়া, মহব্বতপুর, বেতুরা দুর্বণটিলা ও ছাতক পেপার মিলের যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে তাকে বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট