গুম কি শুধু বাংলাদেশে হয়, আমেরিকার অবস্থা আরো ভয়াবহ : সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১২:৪৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০১৭

গুম কি শুধু বাংলাদেশে হয়, আমেরিকার অবস্থা আরো ভয়াবহ : সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দেশে গুম হওয়া প্রসঙ্গে বলেছেন, জনগণের নিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব তা অস্বীকার করার কিছু নেই। বিরোধী দলীয় নেত্রী বলছেন মানুষ গুম হয়ে যাওয়া। এ গুম তো বহুভাবে হচ্ছে, অনেকে কিন্তু ফেরতও আসছে। যারা ফেরত আসে সেটা কিন্তু বড় নিউজ হয় না। আর কেউ গুম গুম করে বলে যান। কিন্তু এই গুম কি কারণে হচ্ছে, এটা কি শুধু বাংলাদেশে ? বৃটিশ নাগরিকও গুম হচ্ছে, ২০০৯ সালের একটা হিসাব, সেখানে ২লাখ ৭৫ হাজার বৃটিশ নাগরিক গুম হয়ে গেল। আমেরিকার অবস্থা আরো ভয়াবহ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ১৮তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা প্রসঙ্গে বলেন, ক্ষমতায় থাকতে হলে জনগনের প্রতি আস্থা বিশ্বাস থাকতে হবে। জনগনের কল্যাণেই কাজ করা। ক্ষমতাটা যদি কারো কাছে ভোগের বস্তু হয়, তাহলে জনগনকে কিছু দিতে পারে না। তাবে আমাদের কাছে ক্ষমতা ভোগের বস্তু নয়, আমাদের কাছে ক্ষমতাটা হচ্ছে জাতির র্কতব্য পালন করা এবং জাতির উন্নয়ন করা ও জনগনের উন্নয়ন করা। সেটা আমরা করতে পেরেছি বলে আজ বাংলাদেশ বিশে^র কাছে মর্যাদার আসনে আসীন হয়েছে। তিনি সিপিএ ও আইপিএ সংগঠন দু’টি সংগঠনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আসীন হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন এবং সিপিএ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা বিশে^র কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, দেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে, সেটা আর বাড়েনি। গড় আয়ু বেড়েছে। মানুষের আয় ও ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। দিন মজুররা আগে শুধু চাল কিনতে পারলে আর অন্য কিছু কিনতে পারতো না এখন চালের সাথে মাছও কিনতে পারে। আবার কেউ কেউ ভালো চালও কিনতে পারছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বেকারত্ব হ্রাস ও উন্নয়ন গ্রাম পর্যন্ত পৌঁেছ গেছে বলে উল্লেখ করেন।

কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোন ক্ষতি করছে না বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জার্মানীতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোন ক্ষতি করছে না। জার্মানীতেও শহরের ভেতরে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে, কোন ক্ষতি হয় না। আমাদের এখানে কেন ক্ষতি হবে। আসলে আমাদের কাজ কিছু মানুষের কাছে ভালো লাগে না। তাদের কাছে কিছুই ভালো লাগে না। এ জন্য তারা বিরোধীতা করে।

প্রধানমন্ত্রী দেশে মানুষ গুম হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, জনগনের নিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব তা অস্বীকার করার কিছু নেই। বিরোধী দলীয় নেত্রী বলছেন মানুষ গুম হয়ে যাওয়া। এ গুম তো বহুভাবে হচ্ছে, অনেকে কিন্তু ফেরতও আসছে। যারা ফেরত আসে সেটা কিন্তু বড় নিউজ হয় না। আর কেউ গুম গুম করে বলে যান। কিন্তু এই গুম কি কারণে হচ্ছে, এটা কি শুধু বাংলাদেশে ? বৃটিশ নাগরিক, ২০০৯ সালের একটা হিসাব, সেখানে ২লাখ ৭৫ হাজার বৃটিশ নাগরিক গুম হয়ে গেল। তার ভেতরে ২০ হাজারের কোন হদিসই পাওয়া গেল না, খোঁজই পাওয়া গেল না। আমেরিকায় গুমের অবস্থা আরো ভয়াবহ। বাংলাদেশ ৫৪ হাজার বর্গমাইলে ১৬ কোটি মানুষের বসবাস। এই টুকু ভৌগোলিক সীমার ভেতরে এত মানুষের বসবাস তাদের সেবা করে যাচ্ছি। অথচ উন্নত দেশে এত মানুষ গুম হয়ে যায়, তার হদিস পাওয়া যায় না। সে তুলনায় আমরা অনেক বেশী নিয়ন্ত্রনে রেখে, কেউ গুম হয়ে গেলে সাথে সাথে আমরা খোঁজ নিচ্ছি।

তিনি ফরহাদ মজহার সর্ম্পকে বলেন, স্বনামধন্য একজন আতেল হঠাৎ গুম হয়ে গেলেন, পরে দেখা গেল তিনি নিজে নিজেই খুলনা গিয়ে ঘুরছেন। পরে তাকে পাওয়া গেল। এ দোষটা কী আমাদের। এ রকম তো ঘটনা অহরহ ঘটে যাচ্ছে। আগে যেখানে প্রতিনিয়ত অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল, এখন তা আর নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি ব্যারিস্টার মওদূদকে ইঙ্গিত করে বলেন, আমাদেরকে নাকি ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবেন। আর যিনি এ কথা বলেছেন, তার চরিত্র হলো তিনি একেক সময় এক দলে ছিলেন। দুর্নীতির কারণে সাজা পেয়ে রাষ্ট্রপতি র্কতৃক ক্ষমা প্রাপ্ত হয়েছিলেন। সুতরাং তিনি তো নেমেই আছেন, আর আমাদেরকে নামানোর কথা বলছেন।

সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিয়ে সংসদে আবারও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেছেন, বলা হয়ে থাকে- বক্স কালর্ভাট করার কারণে রাজধানীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জাতীয় পার্টির আমলে নাকি কিছু বক্স কালভার্ট করা হয়েছিলো। আমরা ক্ষমতায় নাই প্রায় ৩০ বছর হলো। কাজেই এখনকার জলাবদ্ধতার দায় আমাদের (জাতীয় পার্টি) নয়।

রওশন এরশাদ বলেন, ঢাকা শহরকে আমরা তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম। আর এখন এ শহর বসবাসের অযোগ্য। জলাশয়গুলো সব ভরাট হয়ে গেছে, খালগুলো দখলে।

‘আগে ঢাকায় ৫৪টি খাল ছিলো, এখন ৮-১০টিও পাওয়া যায় না। এসব খাল দখল করছে কারা? প্রভাবশালীরা! এই প্রভাবশালী কারা- তার সবই আপনারা জানেন। এরপরও কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না?’

তিনি বলেন, অভিযোগ করা হয়- আমাদের সরকারের (জাতীয় পার্টির শাসনামলে) সময় করা বক্স কালভার্টের কারণে নাকি জলাবদ্ধতা হচ্ছে। তখন ৭-৮ কোটি মানুষ ছিলো। আর এখন এই ঢাকায় ১৮ কোটি মানুষ। তখনকার অবস্থা আর এখনকার অবস্থা এক নয়।

‘তখন বক্স কালভার্ট করা হলেও তা নিয়মিত পরিষ্কার রাখা হতো। কিন্তু এখন পরিষ্কার করা হয় না বলেই জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। তাই এ দায় আমাদের ওপর বর্তায় না। দায় বর্তায় সর্বশেষ সরকারের ওপর।’
একটি পরিসংখ্যান উল্লেখ করে রওশন বলেন, পৃথিবীর ৬০০ কোটি মানুষের ৮০ কোটি মানুষ মাত্র বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারে। আর বাকিরা পান করেন দূষিত পানি।