খালেদার দেশে ফেরার খবরে উজ্জীবিত বিএনপি, পাল্টে যাচ্ছে রাজনীতির দৃশ্যপট

প্রকাশিত: ২:৩৭ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০১৭

খালেদার দেশে ফেরার খবরে উজ্জীবিত বিএনপি, পাল্টে যাচ্ছে রাজনীতির দৃশ্যপট

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার খবরে নড়েচড়ে উঠেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। বেগম জিয়ার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনায় সারাদেশেই বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারাও আগের তুলনায় বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

এছাড়া বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, শুধু দলের নেতাকর্মীদের সক্রিয়তাই বাড়েনি, কূটনীতিক পর্যায়েও বিএনপির বেশ অগ্রগতি হয়েছে। ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বৈরি সম্পর্ক কেটেছে বলেও উল্লেখ করছেন। এ ক্ষেত্রে তারা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নভেম্বরে দেশে ফেরার পরিকল্পনা থাকলেও মূলত সুষমা স্বরাজের সাথে ২৩ অক্টোবর বৈঠকের সিডিউল হওয়ার পর তার ফেরার তারিখ পরিবর্তন করে এগিয়ে নিয়ে এসেছেন। এটাকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপক অগ্রগতি হিসেবেই দেখছেন বিএনপি নেতারা।

দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২২ অক্টোবর এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বিএনপি নেত্রী দেশের উদ্দেশে রওনা দিবেন। ফেরার পথে সংযুক্ত আরব আমিরাত বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতিতে দেশটির প্রবাসী বিএনপি নেতাদের এক প্রতিনিধিদলের সাথে দেখা করবেন।

পরদিন শাহ জালাল বিমানবন্দরে পৌঁছলে সেখানে বেগম জিয়াকে দলের পক্ষ থেকে বড় ধরনের সংবর্ধনা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে গুলশান কার্যালয় পর্যন্ত নেতাকর্মীরা সারিবদ্ধভাবে বেগম জিয়া স্বাগত জানাবেন।

শুধু তাই নয়, বিএনপি নেতারা আশা করছেন, বেগম জিয়া নিশ্চয়ই দলের নেতাকর্মীদের জন্য কিছু নতুন দিকনির্দেশনা নিয়ে ফিরছেন। ফলে বেগম জিয়া দেশে ফেরার পর দেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট দ্রুত পাল্টে যাবে এমন বদ্ধমূল ধারণা দলীয় নেতাকর্মীদের।

বিএনপি সূত্রগুলো বলছে, যেকোনো মূল্যে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভারতের সাথে লবিংয়ে মনোনিবেশ করেছেন বেগম জিয়া। ২০১৯ সালের নির্বাচনে যেনো সকল দল অংশ নিতে পারে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা হয় এজন্য বহির্বিশ্বের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবে বিএনপি।

এদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে অপ্রস্তুত রেখে আগাম নির্বাচনের চিন্তা করে ফের বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও ধরপাকড় শুরু করেছে ক্ষমতাসীনরা। হঠাৎ ধরপাকড়ের কারণে রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করেছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা।

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের মতবিনিময় শেষে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ সামনে নিয়ে আসতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। সরকারের তরফে সে সব সংস্কারের প্রস্তাব আইনে রূপান্তর করার পরেই যে কোনো সময় নির্বাচনের তফসিল জারি করা হতে পারে।

সরকার দলীয়সূত্রে জানা গেছে, সব মিলিয়ে নির্বাচনে জয়ের জন্য আওয়ামী লীগের ‘এ’ পরিকল্পনা হল, অপ্রস্তুত অবস্থায় আগামী মার্চে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং এর সাথে যতটা পারা যায় বিভিন্ন মামলার অজুহাতে বিরোধীদের ধরপাকড় চালানো। সেই ধরপাকড় প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে জামায়াতের আমির-সেক্রেটারিসহ শীর্ষ ৯ নেতা ও ২০ দলীয় জোটের কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার হয়েছে। ঢাকার উত্তরা থেকে গত সোমবার রাতে আটক করা হয় জামায়াত নেতাদের। অন্যদিকে স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্রদল নেতা কে এম নাজির উদ্দিন জিহাদের স্মৃতির স্মরণে ঢাকার দৈনিক বাংলা মোড়ে জিহাদ স্কয়ারে ফুল দিতে গিয়ে আটক হয়েছেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পাঁচ নেতাকর্মী।

গত মঙ্গলবার সকালে ওই পাঁচজনকে আটক করে মতিঝিল থানা পুলিশ। আটক নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন, জিহাদের ভাই কে এম সরফ উদ্দিন, ২০ দলীয় জোটের শরিক দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মনজুর হোসেন ঈসা, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান আশিক, সহ সাংগঠনিক আশরাফ ফারুকী হিরা ও তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জুয়েল ভূঁইয়া।

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী কয়েকদিন এই ধরপাকড় অব্যাহত থাকবে। চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন লন্ডনে অবস্থানের পর চলতি মাসে খালেদা জিয়ারও দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তার আগেই কুমিল্লায় বাসে পেট্রোলবোমায় ৮ জন নিহতের মামলায় গত পরশু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এরপর বৃহষ্পতিবার আবার তেজগাঁও থানার মানহানি মামলায় জারি করা হলো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।

আওয়ামী লীগের ‘বি’ এবং ‘সি’ পরিকল্পনাও রয়েছে। সেই পরিকল্পনা হচ্ছে শেয়ারিং এর মাধ্যমে নির্বাচনে জয়ী হওয়া। প্রথমত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের নিয়ে, দ্বিতীয়ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ইসলামী দলগুলিকে নিয়ে।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, তাদের এবং অন্য বিরোধী দলগুলিকে পূর্ণ প্রস্তুতির সুযোগ দিয়ে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগকে তল্পি গুটাতে হবে। এটা যেমন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জানেন, তেমনই জানা রয়েছে আওয়ামী লীগের মিত্র বলে পরিচিত ভারতেরও। বিএনপি নেতাদের ধারণা, আগের মতো একচেটিয়া ভারতীয় সমর্থন থাকলেও সামনের নির্বাচনে তা আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজে নাও লাগতে পারে। আবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমাদের সংশ্লিষ্টতা বেড়ে যাওয়ায় এখানে সামনের নির্বাচন পুরোপুরি ভারতের নিয়ন্ত্রণে হবে তেমনটা আশা করছে না আওয়ামী লীগ।

এদিকে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সেক্রেটারি রাম মাধব ঢাকা সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশের সাথে কাজ করবে না, তা আগেই জানিয়ে দিয়েছে। তাহলে এখন রাম মাধব ঢাকায় কী করতে এসেছেন? তার ঢাকায় আসার দিনেই জামায়াত নেতাদের ধরার ঘটনায় বেশ তাৎপর্য আছে। অনেকের ধারণা, আগাম নির্বাচনের গ্রাউন্ড তৈরি করতেই তিনি এই সফর করতে পারেন। আবার আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও।

নির্বাচন কমিশন সরকারের এজেন্ডা মতো এ মাসেই কথিত সংলাপ শেষ করবে। এটা শেষ করেই নির্বাচনের তফসিলের আকস্মিক ঘোষণা দেয়া হতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ জুলাই চোখের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান বেগম জিয়া। ৩ মাসের বেশি সময় লন্ডনে থাকলেও বেগম জিয়া ব্রিটেনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে এখনো কোনো সভা করেননি। দেশে ফেরার সভা করার সম্ভাবনাও নেই বলে জানা গেছে।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট