কবি দিলওয়ার-এর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ১:৫৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০১৭

কবি দিলওয়ার-এর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

গণমানুষের কবি দিলওয়ারের ৫ম প্রয়াণ দিবস আজ মঙ্গলবার। ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর কবি আমাদের শোকাচ্ছন্ন করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অভিভক্ত ভারতবর্ষে কবি দিলওয়ার এর জন্ম। ব্রিটিশ-ভারতের অন্তর্গত শ্রীহট্ট জেলার বর্তমান সিলেট জেলার আওতাভুক্ত সদর থানার খিত্তা পরগণার অন্তর্গত সুরমা নদীর দক্ষিণপারের সবুজে ঘেরা পাখির কুহু-কলতানে ভরপুর ভার্থখলা গ্রামের খান মঞ্জিলে সম্ভ্রান্ত খান বংশের রক্ষণশীল পরিবারে ১লা জানুয়ারি ১৯৩৭ সালে দিলওয়ার-এর জন্ম হয়। পুরো নাম দিলওয়ার খান ডাক নাম দিলু। পিতা মরহুম মৌলভী মোহাম্মদ হাসান খান এবং মাতা মরহুমা মোসাম্মৎ রহিমুন্নেসা।
ঝালোপাড়া পাঠশালা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে রাজা জিসি হাইস্কুল, সিলেট থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন ১৯৫২ সালে। ১৯৫৪ সালে এমসি কলেজ সিলেট থেকে আইএ পাশ করেন। তারপর শারীরিক অসুস্থতার জন্য একাডেমিক পড়াশুনার ইতি টানেন।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা হাইস্কুলের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। শিক্ষকতার স্থায়িত্বকাল মাত্র দুই মাস। তারপর সাংবাদিক জীবন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ দৈনিক সংবাদের সহকারী সম্পাদক, ১৯৬৯-১৯৭১ সম্পাদক সমস্বর। ১৯৭৩-১৯৭৪ দৈনিক গণকন্ঠের সহকারী সম্পাদক। ১৯৭৪-এ সিনিয়র ট্রান্সলেটর মাসিক উদয়ন, বাংলা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঢাকা। ফেব্রয়ারি ১৯৭৫ সম্পাদক উল্লাস, জুন ১৯৭৫ সম্পাদক-মৌমাছি। ১৯৭৬ সম্পাদক গ্রাম সুরমার ছড়া। জানুয়ারি ১৯৮১ সম্পাদক মরুদ্যান ১৯৮৫ সম্পাদক-সময়ের ডাক। ১৯৮৬ প্রধান সম্পাদক-সিলেট পরিদর্শক। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কবি ফ্রিল্যান্স লেখক হিসেবে কলম চালিয়েছেন। ‘তুমি রহমতের নদীয়া’ তাঁর রচিত গান দিয়ে সিলেট বেতার কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-এর প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক, সিলেট খেলাঘর এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি; সিলেট উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি; ভার্থখলা স্বর্ণালী সংঘ’-এর জন্মদাতা এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সফল গীতিকার, অবিধায় চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন গণমানুষের কবি দিলওয়ার।
অতিতরুণ বয়সে ১৯৫৩ সালে বের হয় কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘জিজ্ঞাসা’। কবিতা ‘সাইফুল্লাহ হে নজরুল’ তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা যা প্রকাশ হয় দৈনিক যুগভেরীতে ১৯৪৮/৪৯ সালে। তাঁর ১২টি কাব্যগ্রন্থ, ২টি গানের বই; ২টি প্রবন্ধ গ্রন্থ, ২টি ছড়ার বই, দিলওয়ার রচনা সমগ্র ১ম খন্ড, দিলওয়ার রচনা সমগ্র ২য় খন্ড, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর ডাকে (সংবর্ধনা স্মৃতিচারণ-২০০১) বিভিন্ন সময় প্রকাশ হয়। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ষাটোর্ধকাল কবি দিলওয়ার অসংখ্য লেখা লিখেছেন। বিভিন্ন জনের কাছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এবং যা অপ্রকাশিত। দেশে-বিদেশে তাঁর সাহিত্যকর্ম উচ্চসিত প্রশংসা কুড়িয়েছে। আপাদমস্তক কবি হিসেবে কবি দিলওয়ার দেশ-বিদেশে সুপরিচিত।
ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের সংগে একাত্ম হয়ে সিলেটের কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-শিল্পীদের নিয়ে গঠন করেন ‘সমস্বর লেখক ও শিল্পী সংস্থা’। সংস্থাটি ছিল স্বাধীনতার প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকার তাঁকে রাজনৈতিক পেনশন দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সরকার পেনশনের ধরণ পরিবর্তনের জন্যে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
বাংলাভাষা ও সাহিত্যে কবিতার ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সর্বস্তরের নাগরিকবৃন্দ সম্বর্ধনা প্রদান করেন। যেমন-৭ মার্চ ১৯৭৯-এ তাম্রফলক লিখিত মানপত্র সমেত সিলেটের সর্বস্তরের নাগরিক কর্তৃক সম্বর্ধনা। বাংলা একাডেমী পুরস্কার ১৯৮০; ও বাংলা একাডেমী ফেলোশীপ ১৯৮১; গণসম্বর্ধনা কমলগঞ্জ গণমহাবিদ্যালয় ১৯৮২, সিলেট নাট্যালোক কর্তৃক গুণীজন সংবর্ধনা ১৯৮৫’; ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ কর্তৃক ‘আবুল মনসুর সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮৬’; ‘যুক্তরাজ্য প্রবাসী কর্তৃক সংবর্ধনা ৯ আগষ্ট ১৯৮৭; ‘দেওয়ান গোলাম মোর্তাজা স্মৃতিপদক ও সম্মাননা ১৯৯১’; ‘সাইক্লোন কর্তৃক সংবর্ধনা ১৯৯৫’; ‘কবি সুকান্ত সাহিত্যপুরস্কার ২০০২’; ‘ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী গুণীজন সংবর্ধনা ২০০২’; ‘ত্রিপুরা রাজ্যে ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সংঘ কর্তৃক সংবর্ধনা ২০০১’; ‘নাগরিক সংবর্ধনা শ্রীমঙ্গল ২০০৪’; ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কর্তৃক সংবর্ধনা ১৮ জুন ২০০৭’; ‘…সাহিত্য ক্ষেত্রে কবির গৌরবময় অবদান ও স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক ও সম্মাননা ২০০৮’; ‘কবি দিলওয়ার সংবর্ধনা পরিষদ মৌলভীবাজার কর্তৃক গণসংবর্ধনা ১৯ মার্চ ২০০৮’; ‘সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নাগরিক সংবর্ধনা ১৯ ফেব্রয়ারি ২০০৯’।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্য পুস্তকে কবির রচনা ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯৬০ সালে কবি দিলওয়ার পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন ঊর্দুভাষী আনিসা খাতুনের সঙ্গে। সিনিয়র নার্স আনিসা খাতুন অকালে প্রাণ হারান ২৩ মার্চ ১৯৭৫ সালে। ১৯৭৫ সালে তাঁর মাতৃহারা ৬ সন্তানকে কোলে তুলে কবির সংসারে দ্বিতীয় সহধর্মিনী হিসেবে আসেন আনিসারই ছোট বোন পেশায় শিক্ষিকা ওয়ারিসা খাতুন। তিনিও কবিকে ছেড়ে দূরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০০৩ সালে ইহলোক ত্যাগ করেন। এই দুই শ্রদ্ধেয়া কবিপত্নীর রত্নগর্ভে কবির পুত্র কন্যারা হলেন যথাক্রমে শাহীন ইবনে দিলওয়ার (আশির দশকের কবি, ছড়াকার, নাট্যকার ও লেখক, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার আশির দশকের অন্যতম প্রধান কবি, অকাল প্রয়াত ১১/৬/১৯৬২-০৮/১২/২০০৬), নাহিদ বিনতে দিলওয়ার, রোজিনা বিনতে দিলওয়ার, সাজিয়া বিনতে দিলওয়ার, কামরান ইবনে দিলওয়ার নব্বই দশকের অন্যতম কবি ও লেখক এবং বর্তমানে ব্যাংকার, নৌশাবা বিনতে দিলওয়ার (অকাল প্রয়াত), আলী ইমরান ইবনে দিলওয়ার এবং রিদওয়ান ইবনে দিলওয়ার।
কবি’র ৫ম প্রয়াণ দিবসে কবি দিলওয়ার পরিষদ কবি-র সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন জানাবেন সকাল ৯টায়। এছাড়া দোয়া ও প্রার্থনা সভার উদ্যোগ নিয়েছেন কবি দিলওয়ার পরিষদ।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট