২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:১৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭
৩০ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারী শামিলা তার কন্যাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বর্ণনা করছিলেন কিভাবে মায়ানমারের বর্বর সৈন্যরা তার বাড়িতে ঢুকে সন্তানদের সামনে তাকে গণধর্ষণ করে।
এই কাহিনী বর্ণনা করার সময় মুহূর্তেই তার চেহারায় আতঙ্কের চাপ ভর করে। এমন মর্মান্তিক কাহিনী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে হরমেশাই শোনা যাচ্ছে।
জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছে, তারা মায়ানমারের সাম্প্রতিক জাতিগত সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা অনেক নারীকে দেখেছেন যারা ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
ধর্ষিত এসব নারীদের প্রায় সবাই জানিয়েছে যে, তাদের ধর্ষকরা ছিল ইউনিফর্ম পরিহিত পুরুষ; যাদেরকে মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তাদের রক্ষণশীল মুসলিম সমাজে এসব সামাজিক কলঙ্কের দাগ এবং আশ্রয় ও খাবারের চ্যালেঞ্জের অর্থ হচ্ছে অনেক নারী ও কিশোরী তাদের ধর্ষণের কাহিনী চেপে রেখেছেন।
শামিলা, তার আসল নাম নয়। ধর্ষণের শিকার হওয়া এই নারী জানান, টানা তিন দিন হেঁটে বাংলাদেশে আসার পর অনেক দিন হয়ে গেলেও এখনো তার রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি।
ছয় বছর বয়সী মেয়েকে শক্ত করে ধরে পাশে বসে থাকা এই নারী বলেন, ‘তিনজন সৈন্যের সবাই আমাকে ধর্ষণ করেছে।’ এ কথা বলার সময় তার চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে।
তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের পর তারা যখন চলে যায়, তখন আমি আমার দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি এবং জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের দিকে হাঁটতে শুরু করি।’
সৈন্যদের হামলার সময় শামিলার স্বামী বাইরে ছিল এবং এখনো পর্যন্ত তিনি তার স্বামীকে খুঁজে পাননি। তিনি জানেন না তার অন্য তিন সন্তান কোথায় আছে। সৈন্যরা যখন আসে তখন ওই তিন সন্তান বাইরে খেলা করছিল।
৩০ বছর বয়সী এই রোহিঙ্গা নারী এখন কক্সবাজারের একটি অস্থায়ী শিবিরে বসবাস করছেন।
জাতিসংঘের একজন পর্যবেক্ষক জানান, তারা এখন কঠিন সময় পার করছেন এবং ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তারা বার বার রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরী মেয়েদের ধর্ষণের কাহিনী শুনছেন।
যৌন সহিংসতাসহ মায়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য জাতিসংঘের একটি মিশন উদ্বাস্তু ক্যাম্পে কাজ করছে।
যৌন সহিংসতা তদন্তে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি প্রমিলা প্যাটেন জানান, মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান নিয়ে তিনি অত্যন্ত উদ্বেগের মধ্য রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘যৌন সহিংসতাকে ‘সন্ত্রাসের অস্ত্র’ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে; যাতে টার্গেটকৃত জনসংখ্যা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।’
রোহিঙ্গারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসলেও মায়ানমার সরকারের সাম্প্রতিক রাষ্ট্রীয় বয়ান হচ্ছে- ‘এরা উগ্রবাদী বাঙালী সন্ত্রাসী এবং সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী।’
গত ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া তথাকথিত ‘শুদ্ধি অভিযানে’ সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা ঘরছাড়া। অন্তত কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে।
রাখাইন রাজ্যের অর্ধেক ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও অস্থায়ী ক্যাম্পে মানবেতর পরিস্থিতিতে জীবন যাপন করছে।
‘নারীদের ধর্ষনের আগে নিষ্ঠুরভাবে পিটানো ও কামড়ানো’
ধর্ষণের শিকার হওয়া এসব নারীদের গল্পগুলো অদ্ভূতভাবে একই রকম। এসব নারীদের স্বামী কিংবা পুরুষ আত্মীয় যখন বাড়ির বাইরে থাকে ঠিক তখন বর্মি সেনারা তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে তাদের সন্তানদের সামনেই ধর্ষণ করে।
কক্সবাজারের লেদা শরণার্থী ক্যাম্পে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত একটি ক্লিনিকে কাজ করে নুরাইন তাসনুপা। তিনি জানান, তাদের ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া বেঁচে যাওয়া অধিকাংশ নারীকেই ধর্ষণের আগে নিষ্ঠুর কায়দায় পেটানো হয়েছে।
তিনি বলেন, তিনি নারীদের দেহে আঘাতের চিহৃ এবং তাদের স্তন ও গোপনাঙ্গে কামড়ের দাগ দেখেছেন।
২০১৬ সালের অক্টোবরে রাখাইনের সহিংসতার অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তাসনুপা বিশ্বাস করেন যে অনেক নারী এখনো ধর্ষণের ঘটনা চেপে রেখেছেন।
তিনি এএফপিকে বলেন, ‘মানুষ এই ঘটনাগুলো শেয়ার করতে চায়না, এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে চেপে রাখে।’
তিনি বলেন, ‘গত বছরের অক্টোবরের সহিংসতা খেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা অনেক ধর্ষিত রোহিঙ্গা নারীকে আমরা ঘটনা ঘটনার তিন থেকে চার মাস পরেও চিকিৎসা দিয়েছি।’
গত অক্টোবরের ওই যৌন সহিংসতাকে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত ও নিয়মানুগ আক্রমণের অংশ’ বলে মন্তব্য করে।
‘বেঁচে থাকার লড়াই’
বাংলাদেশে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে সর্বশেষ আগমনকারীদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক ধর্ষিতাই বেঁচে আছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে, ঠিক কতজন নারী ধর্ষিত হয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা কঠিন বলে তারা মনে করছেন।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার নিরাপত্তা কর্মকর্তা আইরিন লরিও বলেন, ‘এই মুহূর্তে এটি হচ্ছে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই।’
লোরিয়া জানান, মায়ানমার সৈন্যদের এবারের ধর্ষণের প্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন হতে দেখা যায় এবং তা আরো সুযোগবাদী হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘পূর্বে মনে হতো ধর্ষণ একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মানুষকে জনসম্মুখে উলঙ্গ করে রাখার মাধ্যমে তাদেরকে অপমানিত করা হতো।’
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কিন্তু এবার মনে হচ্ছে তাদেরকে যথা সম্ভব চাপ দেয়া হয়েছে যাতে তারা চলে আসতে বাধ্য হয়।’
রাখাইন থেকে বাংলাদেশে আসার এক সপ্তাহ পরে লেদা ক্লিনিকে আসা আরেক ধর্ষিত নারী আয়েশা (২০) এএফপিকে জানান, উত্তর রাখাইনের বুথিডাঙ্গ শহরের তাদের গ্রামে যখন সৈন্যরা প্রবেশ করে তখন তার প্রতিবেশিরা পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের গ্রামে সকাল আটটা সময় এসেছিল। পরে তারা আমাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।’
ছদ্মনামে তিনি এএফপিকে বলেন, ‘লোকজন পালাতে শুরু করে কিন্তু আমাকে প্রথমে আমার সন্তানের কথা চিন্তা করতে হয়েছে। সেনারা তার বাড়িতে প্রবেশ করে এবং একজন আমাকে ধর্ষণ করে। এসময় অন্যরা তা প্রত্যক্ষ করে।’
সূত্র : স্ট্রেইটাইমস ডটকম
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D