২৮শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:১২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৯, ২০১৭
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৫ আগষ্টের খুনিরা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গমাতার অবদান সম্পর্কে জানতো, তাই তাকেও নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, ঘাতকের দল জানতো এদেশের স্বাধীনতার পেছনে আমার মায়ের অবদান। তাই আমার মায়ের ওপরও তাদের আক্রোশ ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৭ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। খবর বাসসের।
মহিলা এবং শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বঙ্গমাতার ৮৭ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়েজন করে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রেবেকা মোমেন।
ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী অনুষ্ঠানে মূল প্রকন্ধ উপস্থাপন করেন এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার জীবন ও কর্মের ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে আমার আব্বা মায়ের মতন একজন সাথী পেয়েছিলেন বলেই কিন্তুু তিনি তার সংগ্রাম করে সফলতা অর্জন করতে পেরেছিলেন। জীবনের সব আশা আকাঙ্খা বিসর্জন দিয়ে, সব ভোগ বিলাস বিসর্জন দিয়ে আমার বাবার পাশে থেকে এদেশের মানুষকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, আমার মা।’
প্রধানমন্ত্রী ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের পর বাধ্য হয়ে ৬ বছর বিদেশে অবস্থানের পর তার দেশে ফেরা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি যখন বাংলাদেশে ফিরে আসি তখন শুধু একটা জিনিসই চেয়েছি, আমার বাবাতো এই দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। যখন একটু কাজ করি মানুষ একটু ভালো থাকে, তখন আমার ঐটুকু মনে হয় যে হয়তো আমার বাবা-মায়ের আত্মাটা শান্তি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘বাবার পাশে থেকে মা যদি ত্যাগ স্বীকার না করতেন তাহলে হয়তো আজকে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পারতাম না।’
স্কুল কলেজের প্রথাগত শিক্ষা অর্জন করতে না পারলেও বেগম মুজিব স্বশিক্ষিত ছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মায়ের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল, নিজে নিজে পড়াশোনা করতেন। আব্বা যখন আসতেন মায়ের জন্য বই নিয়ে আসতেন। পড়ার এবং শেখার অত্যন্ত আগ্রহ ছিল যেকারণেই- সবসময় বই পড়াটা আমাদের একটা অভ্যাসই ছিল। পড়ার বইয়ের পাশাপাশি গল্পের বই পড়া-এটা আমাদের বাসাতে একটা প্রথাই ছিল এবং এ বিষয়ে আমার মায়ের সব থেকে বেশি আগ্রহ ছিল।
বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী ১৫ আগষ্ট এবং মক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিনি বঙ্গমাতা সম্পর্কে বলেন, তাঁর সম্পর্কে মানুষ খুব সামান্যই জানে। তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে ও প্রচার বিমুখ ছিলেন। তাই বঙ্গমাতার অবদান লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে গেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বেগম মুজিব খুব অল্প বয়সে মা-বাবাকে হারান। আমার দাদা-দাদীর কাছে বেড়ে ওঠার সময় অল্প বয়সে তাঁর মধ্যে সাহস, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা গড়ে উঠেছিল।
বঙ্গমাতাকে প্রধানমন্ত্রী স্বামী-সংসার অন্তঃপ্রাণ বাঙালি নারী এবং শোষিত-নিপীড়িত জনসাধারণকে মুক্তির চেতনায় জাগিয়ে তোলার সংগ্রামে স্বামীর পাশে থাকা সহযোদ্ধা আখ্যায়িত করে বলেন,‘আম্মা অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে আব্বাকে সহায়তা করতেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আম্মা জেলখানায় দেখা করতে গেলে আব্বা তাঁর মাধ্যমেই দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজখবর পেতেন। আব্বার দিক-নির্দেশনা আম্মা নেতাকর্মীদের পৌঁছাতেন। আব্বা কারাবন্দী থাকলে সংসারের পাশাপাশি সংগঠন চালানোর অর্থ আম্মা যোগাড় করতেন।
বাবার প্রতিকাজেই মা প্রতিবন্ধক নয়, সহায়ক ছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আম্মা চাইলে স্বামীকে সংসারের চার দেয়ালে আবদ্ধ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি কখনও ব্যক্তিগত-পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে তাকাননি। ফলে আমরা সন্তানরা বঞ্চিত হয়েছি এবং আম্মাকেই সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘বাবাকে কখনও টানা দু’বছরও আমাদের মাঝে পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘আম্মা মানুষের মুক্তির জন্য আব্বার সংগ্রামী চেতনা বুঝতেন এবং সহযোগিতা করতেন। আব্বাও আম্মার সাহস, মনোবল, ত্যাগ, বিচক্ষণতা, দুঃখ-কষ্ট সব বুঝতেন।’
আম্মার উৎসাহেই জাতির পিতা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ লিখেছিলেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
জাতির এক সন্ধিক্ষণে বেগম মুজিবের একটি সিদ্ধান্ত বঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় প্যারোলে মুক্তি নিতে চাপ দেওয়া হয়। মা’কে ভয় দেখানো হয়েছিল-‘পাকিস্তানীদের শর্ত না মানলে তিনি বিধবা হবেন’। কিন্তু মা কোন শর্তে মুক্তিতে রাজী হননি। আব্বাও প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। শেষ পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানে পাকিস্তান সরকার আব্বাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মায়ের মেসেজ ঠিক সময়ে বাবাবে জানাতে পারায় এবং বাবা পাকিস্তানীদের প্যাারোলে মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সে সময় অনেক আওয়ামী লীগ নেতাই আমাকে বলেন- তুমি কেমন মেয়ে হে, বাবার মুক্তি চাও না।’
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস আম্মার যে মনোবল দেখেছি, তা ছিল কল্পনাতীত। স্বামীকে পাকিস্তানীরা ধরে নিয়ে গেছে। দুই ছেলে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করছে। তিন সন্তানসহ তিনি গৃহবন্দী। যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন কিন্তু আম্মা মনোবল হারাননি।
তিনি বলেন, অসীম সাহস এবং ধৈর্য্য নিয়ে আম্মা সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন। তিনি আল্লাহকে স্মরণ করতেন। ’৭১’র মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে বন্দী অবস্থায় আম্মা অধিকাংশ সময় হাতে তসবিহ নিয়ে পড়তেন।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণও তাঁরই অণুপ্রেরণায় বঙ্গবন্ধু নিজের মন থেকে উৎসারিত করেছিলেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ঘাতকচক্র ভীত ছিল, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কেউ বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের মানুষ আবার ঘুরে দাঁড়াবে। তাই খুনীরা গৃহবধু, অন্তঃসত্ত্বা মা, শিশু কাউকে বাঁচতে দেয়নি।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎ করতে জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। তার পর ঘাতকরা দেশটাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টোরথে চড়িয়ে দেয়। দেশ বিরোধী সেই ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মা কোনদিন কিছু চান নি। আমার বাবা মন্ত্রী ছিলেন, এমপি ছিলেন, এমএলএ ছিলেন। জাতীয় পরিষদে অংশ গ্রহণ করতে তাঁকে প্রায়ই করাচিতে যেতে হত। কিন্তুু আমার মা কিন্তুু কোনদিন ঐ পশ্চিম পাকিস্তানে যাননি, যেতেও চাননি। এ দেশের স্বাধীনতার জন্য সব সময় তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা। যা পৃথিবীতে বিরল।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গমাতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সকলের কাছে তার জন্য দোয়া কামনা করেন।
EDITOR & PABLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Executive Editor : M A Malek
UK Correspondent : Moheuddin Alamgir USA Correspondent : Abul Kashem Murshed
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01711912127
Design and developed by M-W-D