৪ঠা মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:০৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৭, ২০১৭
মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। কেননা, সেটা ছিল একটা পাতানো নির্বাচন। তবে আন্দোলনের কর্মসূচীর বিষয়ে তাদের ভুল ছিল।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আরটিএনএনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ৫ জানুয়ারির অনেক আগেই আমি ম্যাডামকে এমন একটি নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নভেম্বরেই সরাসরি মাঠে নামার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কেননা, ওই সময় খালেদা জিয়া নিজে রাস্তায় নেমে গেলে সারাদেশে আন্দোলনে নতুন গতি পেত, রক্তপাত হলেও আন্দোলনের ফসল গড়ে উঠতো। কিন্তু তারা কী করলো, ডিসেম্বরের শেষের দিকে গিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি দিল। সরকার খালেদা জিয়াকে গুলশান অফিসে বালুভর্তি ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখলো আর নেতাকর্মীরা ঘরে ঢুকে গেল। এতে সরকার নতুনভাবে শক্তি সঞ্চয় করে যেনতেনভাবে নির্বাচনটা করে নিল।
তিনি বলেন, সরকারকে এই সুযোগটা মূলত বিএনপিই করে দিয়েছে। কেননা, তারা আগে থেকে শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। এমন কি নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের মেসেজ না দিয়ে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালো। সবমিলেই তখন বিএনপি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি।মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠক বলেন, এ ধরনের একটা তরফা নির্বাচন করা আওয়ামী লীগেরও কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। সাময়িকভাবে তারা লাভবান হলেও প্রকৃত বিচারে তাদের ক্ষতি হয়েছে। দেশ ও গণতন্ত্রের বিশাল ক্ষতি হয়েছে। এ ধরনের একটি শঠতার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার প্রতি জনগণের আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, যেমনটি হয়েছিল ১৯৭৫ সালে বাকশাল কায়েমের পর।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এটা একটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন, সংবিধানের বাধ্যবাধকতার নির্বাচন। পরে না হয়, আরেকটি নির্বাচন করে নেয়া যাবে। কিন্তু আমরা কী দেখলাম- নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা তার সেই অবস্থান থেকে সরে গেছেন। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা জাতির সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা করেছেন। যদি তিনি আরেকটি মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে দিতে পারতেন তবে তার ও তার দলের জন্য খুবই ভাল হতো। তাহলে জনগণের আস্থার জায়গা তৈরি হতো।
আওয়ামী লীগ তথা সরকার পক্ষ যে বলছে বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবি মেনে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের এ দাবি ঠিক নয়, কারণ সংবিধান তো এমন কোনো ধর্মগ্রন্থ নয় যা পরিবর্তন করা যায় না। তারা ইচ্ছা করলেই যে কোনো সময় করতে পারে। কিন্তু তারা তা করতে চাচ্ছে না। সেটাও তাদের এক ধরনের ভুল ধারণা।
কেননা, ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যতের জন্য আরো বেশি ক্ষতি হবে। যে ক্ষতি তারা কোনোভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারবে না। আর দেশের রাজনীতিতে আবারো অরাজকতার সৃষ্টি হবে। এর জন্য বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ বেশি দায়ী হবে। তাই সরকারের উচিত একটা রাজনৈতিক সমঝোতায় গিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করা। আর ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করাও যে তাদের পক্ষে সহজ হবে সেটাও আমি মনে করছি না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়াকে দেশে ফিরে মাঠে নামার তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘প্রতিবাদ সভা-বিক্ষোভের মত নিরামিষ কর্মসূচি দিয়ে কিছু হবে না, খালেদা জিয়াকে রাস্তায় নামতে হবে।’
তিনি বেগম জিয়ার প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আর কত ঘরে অন্তরীণ থাকবেন? সময় থাকতে রাস্তায় নামুন, অন্যথায় কোনোভাবেই ক্ষমতার পট পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
তিনি বিএনপির উদ্দেশ্যে আরো বলেন, দেশের চার থেকে ছয় কোটি মানুষের খালেদা জিয়ার উপর আস্থা আছে, জনগণের এমন আস্থাকে কাজে লাগাতে হবে। তাই এই অবস্থায় খালেদা জিয়াকে রাজপথে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে ক্ষমতাসীন জোটের কয়েকটি ছোট ছোট দল ছাড়া প্রায় সবাই আন্দোলনের জন্য মুখিয়ে আছে, কিন্তু তারা কোনো প্ল্যাটফর্ম পাচ্ছেন না। তাই বিএনপিকে রাজনীতিতে ভালো কিছু করতে হলে এই সুযোগটি গ্রহণ করতে হবে। বিএনপির জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। সবাইকে গুছিয়ে শক্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আসতে পারে। সেরকম শক্ত আন্দোলন গড়তে পারলে সরকারের গদি নড়ে যেতে পারে। কেননা, এ সরকারের নৈতিক ভিত্তি খুবই দুর্বল।
তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে দেশের যে অবস্থা তাতে বিএনপির একার পক্ষে রাজনীতিতে পরিবর্তন আনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়, যদি না তারা কৌশলী হয়।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বিএনপি বড় দলের আমিত্ত ছেড়ে দিয়ে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক মোর্চা গঠন করতে পারলেই দেশের রাজনীতিতে ও ক্ষমতার পালা বদলের হাওয়া লেগে যাবে। আর এমনটি করলে সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ পড়বে। এক পর্যায়ে দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই রাজনৈতিক মোর্চার ছায়াতলে একত্রিত হতে পারবে। যেটা অতীতেও হয়েছে।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, শুধু রাজনৈতিক মোর্চা গঠন করলেই হবে না, সর্বদলীয় সরকার গঠন এবং কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সুস্পষ্ট অঙ্গিকারও থাকতে হবে। অবশ্য বেগম জিয়া তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে ইতোমধ্যে একটি রূপারেখা দিয়েছেন। কিন্তু রূপারেখা দিয়ে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নেমে সরকারের কাছ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করতে হবে।
পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ, সব স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক সময়ের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকারী এই প্রবীণ ব্যক্তিত্ব আক্ষেপ করে বলেন, গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে। আমরা অনেক আন্দোলনে শরীক হয়েছি, আমাদের অনেক সহকর্মী আন্দোলনে রক্ত দিয়ে গেছেন। বিশেষ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের চোখের সামনে অনেকেই দেশ ও দেশের মানুষের জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। তাদের একটাই প্রত্যাশা ছিল এদেশে গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।
কিন্তু আজ অনেক সময় গড়িয়েছে কিন্তু আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তাই জীবনের এই শেষ বেলায় এসে আমার চারটি প্রত্যাশা।
আরটিএনএনের মাধ্যমে তিনি তার এই প্রত্যাশার কথা দেশের জনগণের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, জীবনের পড়ন্ত বেলায় এইগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে বলে যদি দেখে যেতে পারতাম। তবে অনেক শান্তি পেতাম।
এক. এদেশের কোনো মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না এমন ব্যবস্থা যদি দেখে যেতে পারতাম।
দুই. দেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করে তাদের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা হবে।এখানে তারা কোনো হয়রানির শিকার হবে না যদি দেখে যেতে পারতাম।
তিন. সত্যিকার অর্থে দেশে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। যেখানে মানুষের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। মানুষ মুক্তভাবে তার কথা বলতে পারবে- যদি এমন পরিবেশ দেখে যেতে পারতাম।
চার.এ দেশে সাহসী বিবেকবান বিচারক থাকবেন। যারা ন্যায় বিচার করবেন। আর এই ন্যায় বিচারের মাধ্যমে গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।
EDITOR & PABLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Executive Editor : M A Malek
UK Correspondent : Moheuddin Alamgir USA Correspondent : Abul Kashem Murshed
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01711912127
Design and developed by M-W-D