খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন না এটা কোনো আহাম্মকও বিশ্বাস করে না

প্রকাশিত: ১১:৪৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০১৭

খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন না এটা কোনো আহাম্মকও বিশ্বাস করে না
সরকারি নির্যাতনে পঙ্গু ও নিহতদের স্বজনদের অনুদান অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল

আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাদেরকে (আওয়ামী লীগ) নির্মূল করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পালিয়ে গেছেন দেশ থেকে- এটা তো কোনো আহম্মকও বিশ্বাস করবে না। আমরা বলতে চাই, মিথ্যা প্রচারণা করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে আর দেশের তি করবেন না। বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্যে যদি কারো সত্যি বেশি অবদান থাকে, যদি কেউ সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করে থাকেন, গণতন্ত্রের জন্য যিনি আপোসহীন নেত্রী উপাধি পেয়েছেন সেই নেত্রী তো বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বন্দুকের নল নিয়ে মতায় আসেননি। রাজপথে ছাত্র-জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে তিনি এসেছেন। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান ও পরবর্তীকালে গণতন্ত্রের যতগুলো ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া করেছেন। : গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন সেমিনার কে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের উদ্যোগে ‘আর্থিক সহায়তা প্রদান’ উপলে এই আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিরোধী আন্দোলনের সময়ে মতাসীন দলের হামলায় যুবদলের নিহত রংপুরের মোশারফ হোসেন পদ্ম, খুলনার নজরুল ইসলাম, ছাত্র দলের পঙ্গু ময়মনসিংহের মেহেদি হাসান, পাবনার ছাত্রদলের মাসুদ বিল্লাহ ও সিলেটের মো. বদরুল আলম- এই পাঁচ পরিবারের সদস্যদের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়। ২০১৪ সালে গঠিত জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল এ পর্যন্ত বিগত আন্দোলনে ‘নিখোঁজ’ ও ‘খুন’ হওয়া ৮৭ পরিবারকে সহায়তা প্রদান করে। : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ যাতে কোনোদিন জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে ভোট নিয়ে ফিরে না আসতে পারে সেজন্য জনগণকে সর্তক করতে হবে। আন্দোলন বলেন আর নির্বাচন বলেন সংগঠন ছাড়া হবে না। আমি জিনিসে বিশ্বাস করি, কখনোই কোনো অন্যায়, কোনো দুঃশাসন চিরদিনের জন্য টিকে থাকতে পারে না। বাংলাদেশের ইতিহাস তা বলে না। আমরা নিশ্চয় রুখে দাঁড়াবো, আমরা নিশ্চয় সোচ্চার হবো। আমরা জনগণের সম্মিলিত শক্তি দিয়ে তাদের পরাজিত করবো। : একাদশ নির্বাচন নিরপে করতে সরকারকে আবারো সংলাপে বসার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখনো সময় আছে। আসুন আলোচনা করুন, কথা বলুন। বাংলাদেশের মানুষ এখন একটা নির্বাচন চায়, সেই নির্বাচনটা তারা চায় যে একটা নিরপে সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক- এটাই আমরা চাই। সেভাবে ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় ঠিকই পালাবার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না। : বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে যে, এই সরকার মতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) মতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সেজন্য একটি সহায়ক সরকারের কথা বলা হয়েছে, দেশনেত্রী বলেছেন। সরকারকে বলব, আসুন কথা বলুন। কীভাবে সেই সরকার গঠন করা যেতে পারে, কীভাবে আমরা আগামী নির্বাচনটা সকলে অংশগ্রহণ করে জনগণের ভোটের অধিকারকে নিশ্চিত করে একটা নির্বাচন করতে পারি। জনগণ যাকে চাইবেন, তারাই সরকার গঠন করবেন-এটাতে আসুন। তিনি বলেন, নিরপে নির্বাচন অনুষ্ঠান হলে দেশের মঙ্গল হবে, জনগণের মঙ্গল হবে, আপনাদেরও মঙ্গল হবে। আপনারা যে ভয় পেয়েছেন পরাজিত হলে পালাবার পথ-টথ খুঁজে পাবেন না। এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারি বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের সব কিছু দেখবে এবং দেশে শান্তি বিরাজ করার পরিবেশ তারা সৃষ্টি করবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হোক- এটাই আমরা চাই, সেইভাবে ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় ঠিকই পালাবার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না। : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে মতাসীনদের ‘আয়নায়’ নিজেদের চেহারা দেখতে বলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পালিয়ে গেছেন দেশ থেকে- এটা তো কোনো আহম্মকও বিশ্বাস করবে না। আমরা বলতে চাই, এ সমস্ত কথা বলে, মিথ্যা প্রচারণা করে, মিথ্যা ছড়িয়ে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে আর দেশের তি করবেন না। আজকে যারা এই ধরনের কথা বলছেন, তাদের নিয়ে আমরা ইউটিউবে বিভিন্ন রকম ছবি দেখতে পাই। আমি সত্য-মিথ্যা বলতে পারবো না। কিন্তু দেখা যায় তারা কি ধরনের বিবৃতি দিচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে। আমরা শুনেছি যে, জেলে যারা ছিলেন ওই সময়ে, তারা কান ধরে উঠ-বস করে বলেছিলেন আর কোনো দিন রাজনীতি করবো না। সুতরাং এই ধরনের কথা বলার আগে প্রত্যেকের উচিত আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখা এবং এই কথা চিন্তা করা যে অতীতে আমি যে সমস্ত কথা-বার্তা বলেছি, তার সঙ্গে আমার এখনকার কথা-বার্তার মধ্যে সামঞ্জস্য আছে কিনা। : ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ওবায়দুল কাদের সাহেবকে একজন রাজনীতিবিদ মনে করি। সম্ভবত তিনি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন আমি ঠিক জানি না। সাহিত্য ও নাট্যচর্চায় তার বিশেষ পারদর্শিতা ছিলো। আমি সেই কারণে তার মধ্যে একটা পরিশীলিত যে সংস্কৃতি সেটার প্রতিফলন দেখার প্রত্যাশী ছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি জানি না যে, ওনার পরিবর্তনটা কেন? সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে উনি এমন ভাষায় কথা বলছেন, যে ভাষায় তার কাছ থেকে কথা শুনিনি। আমরা প্রত্যাশা করি না, এতো বড় একটা রাজনৈতিক দল ও এতো পুরনো একটা রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক এই ভাষায় কথা বলবেন। আমরা যারা রাজনীতি করি, জনগণ আমাদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করবে, অন্যান্য রাজনৈতিক দল সমালোচনা করবে। কিন্তু তার ভাষাটা কী হবে? তার ভাষা কী হবে ব্যক্তিগত আক্রমণ, তার ভাষা কী হবে যে সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলে চরিত্র হনন। এটা ওই স্তরের নেতার কাছে আমরা আশা করি না। : স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ১/১১ সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ে বেগম খালেদা জিয়ার আপোসহীন ভূমিকার কথা ওবায়দুল কাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমি বলি, বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্যে যদি কারো সত্যি বেশি অবদান থাকে, যদি কেউ সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করে থাকেন, গণতন্ত্রের জন্য যিনি আপোসহীন নেত্রী উপাধি পেয়েছেন সেই নেত্রী তো বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বন্দুকের নল নিয়ে মতায় আসেননি, তিনি সোনার চামচ মুখে নিয়েও মতায় আসেননি। রাজপথে ছাত্র-জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে তিনি এসেছেন। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান ও পরবর্তীকালে গণতন্ত্রের যতগুলো ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া করেছেন। সংসদীয় গণতন্ত্র বেগম খালেদা জিয়া করেছেন। ১/১১ তে সম্পূর্ণ অবৈধ ও অনৈতিকভাবে যে সরকার আসলো, সম্পূর্ণ মদদ দিলো আওয়ামী লীগ এবং ঘোষণা করলো যে, এটা আমাদের আন্দোলনের ফসল। সেই সরকারের বিরুদ্ধে নীরবে-সরবে যিনি আন্দোলন করে সেই সরকারকে সরিয়েছেন, জরুরি অবস্থার অবসান ঘটিয়েছেন এবং নির্বাচন দিতে বাধ্য করেছেন- এটাও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আমি আবারো মা চাইতে চাই যে, আমি এভাবে কথা বলতে চাইনি, কথা বলার অভ্যাসও নেই। কিন্তু বার বার আমার নেত্রীকে যারা আঘাত করবেন অন্যায়ভাবে, এর জবাব যদি আমরা না দেই তাহলে সত্যের প্রতি অপলাপ হবে এবং দায়িত্ব থেকে দূরে থাকা হবে। : গত ৮ বছরের শাসনামলে বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে এজন্য সরকারকে অভিযুক্ত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নির্মমতার রোল মডেল আওয়ামী লীগ সরকার। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জামার্নির হিটলারের যে নাৎসী দল ছিলো তাকে অতিক্রম করে চলেছে। কারণ হিটলার তার যে হত্যাযজ্ঞ, অত্যাচার-নির্যাতন- এটা অল্পদিন করার সুযোগ পেয়েছিলো। আর আওয়ামী লীগ গত ৮ বছর ধরে এই হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়ন-নির্মমতা-পাশবিকতা করে চলেছে। আপনি যেখানে যে জেলায় যাবেন একটা-দুইটা-তিনটা-পাঁচটা-দশটা, এই আমাদের ছাত্ররা, আমাদের কর্মীরা, সাধারণ মানুষ তারা আওয়ামী লীগের নির্যাতনে প্রাণ দিয়েছে, পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের বাংলাদেশ। কীভাবে বিরোধী দলকে নির্যাতন করা যায়, কীভাবে ভিন্নমতকে দমন করা যায়, কীভাবে অসহায়-নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে দলন করা যায়, হত্যা করা যায়, কোপানো যায়, তার রোল মডেল হচ্ছে আওয়ামী লীগ, তার রোল মডেল হচ্ছে আওয়ামী লীগের সরকার। : তিনি বলেন, আজকে গোটা জাতি আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের যাঁতাকলে পড়ে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে গোটা জাতিকে অন্ধকারের গহ্বরের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। সুতরাং আমাদেরকেই দাঁড়াতে হবে ঘুরে। আমরা আর চোখের পানি ফেলতে চাই না, আমরা আর বুকের মধ্যে যন্ত্রণা ধারণ করতে চাই না। আমরা এই দুঃশাসনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে চাই। এই যে হত্যা-নির্যাতন-গুম করে দেয়া এর জবাব একটাই- তা হচ্ছে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। প্রত্যেকটি অঙ্গসংগঠনের প্রত্যেকটি ইউনিটে শক্তিশালী সংগঠন করতে হবে। তারা যাতে সাহস না পায় আমাদের ছেলেদের এভাবে হত্যা চালাবার, তারা যেন সেই কুপিয়ে হত্যার সুযোগ না পায়। : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের সদস্য জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের সভাপতিত্বে ও ফেরদৌস মুন্নার পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, ইতালি বিএনপির মান্নান হীরা, হেল্প সেলের রাজিব আহসান চৌধুরী পাপ্পু, মাকসুদ আহমেদ খান রুবেল, ছাত্রদলের পঙ্গুত্ববরণকারী নেতা বদরুল আলম, মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের সংগঠক সুমন মাহমুদ, ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোক্তার হোসেন প্রমূখ।