২০শে জানুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই মাঘ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:২২ পূর্বাহ্ণ, জুন ১১, ২০১৭
মোঃ আবুল কাশেম : ‘মরিলে হইব মাটিতে বাসা, পড়িয়া থাকিবে লক্ষণশ্রী আর রঙ্গের রামপাশা। লোকে বলে বলেরে ঘর-বাড়ি বালানায় আমার। জানত যদি হাসন রাজা বাঁচব কতদিন, হায়রে বাঁচবে কতদিন, বানাইত দালানকোঠা করিয়া রঙ্গিন। মরমী কবি হাসন রাজা তার জীবদ্ধশায় এমনি বেশ কয়েকটি গান রচনা করে ছিলেন। ছন্দে আর গানের কলিতে এক সময়ে জেগে উঠেছিল কবি দেওয়ান হাসন রাজার মরমী সুর। হাসন রাজা তার গানের সাথে মিল রেখে বিশ্বনাথের রামপাশার বাড়ীতে গড়ে তুলেননি কোন রাজপ্রাসাদ। যেটুকু ছিল বর্তমানে ততটুকুই হারিয়ে যাচ্ছে। গানের মতই হাছন রাজার বিশ্বনাথের রামপাশার পৈতৃক বাড়ি এখন অযত্নে অবহেলায় মাটির সাথে মিতালি করে নীরবেই কান্দে।
ক্রমে ক্রমে ধংস হয়ে যাচ্ছে রাজার তৈরি পুরনো ঘর। স্মৃতি ধরে রাখতে উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউ। দিনের পর দিন এভাবেই অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে বিশাল বাড়িটি। যে- বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকেন হাছন রাজার অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী। আগ্রহ নিয়ে হাছন রাজার বাড়ি দেখতে এসে অনেকেই হতাশ হন। যে হতাশা মানুষের মধ্যে কষ্টের পাহাড় জমে থাকে। অথচ এই হাছন রাজাই বিশ্বনাথের রামপাশা গ্রামে জীবন-যৌবন কাটিয়েছেন। বাংলার মরমি সাহিত্যে হাছন রাজার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হাসন রাজার পরিবারের বিশাল ভূসম্পত্তি এখনো বিশ্বনাথের রামপাশায় রয়েছে। বিশেষ করে রামপাশার বাড়িটি এখন অযত্নে-অবহেলায় থাকায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসেছে। তবুও শত শত সাহিত্যপ্রেমী মানুষ এখন একনজর দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে রামপাশায় আসেন। এসে দেখেন একটি জরাজীর্ণ ভঙ্গুর পাকা বাড়ি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির সামনের বিশাল দিঘিসহ এই জমিতে হাছন রাজার স্মৃতির নিদর্শন স্বরূপ অনেক কিছুই করা যেতে পারে। পরিকল্পিতভাবে এই জায়গাকে কাজে লাগিয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য করা যেতে পারে সাংস্কৃতিক স্থান। করা যেতে পারে সাহিত্য সংস্কৃতির মিলনকেন্দ্র।
এ ব্যাপারে হাছন রাজা পরিবারের সদস্য দেওয়ান তালেবুর রাজা চৌধুরীর পুত্র ‘হাছন রাজা সমগ্র’ গ্রন্থের সম্পাদক দেওয়ান তাছাওয়ার রাজা সাংবাদিকদের জানান, শীঘ্রই রামপাশায় সাহিত্য-সংস্কৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি বিশাল কমপেক্স তৈরি করা হবে। যাতে থাকবে লোক সাহিত্য ইনস্টিটিউট, পাঠাগার, জাদুঘর, সেমিনার হল, আর্ট গ্যালারি ইত্যাদি।
শুধু হাছন রাজার পরিবারই নয় সরকারেরও উচিত বাংলা মরমিসাহিত্যের এই কৃতী পুরুষের স্মৃতি অম্লান করে রাখার জন্য এখানে একটি সাংস্কৃতিক কলেজ কিংবা মরমি সাহিত্য জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা। বর্তমানে হাছন রাজার বাড়িটি রামপাশার যে জায়গায় আছে, সেখান থেকে সড়কপথে যোগাযোগের জন্য একদিকে বিশ্বনাথ হয়ে সিলেট, অন্যদিকে গোবিন্দগঞ্জ হয়ে সুনামগঞ্জের সাথে যোগাযোগ রাখা যায়।
বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, হাছন রাজার বাড়িতে অনেক কিছু করার চিন্তা আছে। রাজা পরিবার যদি লিখিতভাবে সরকারকে দেয়, তাহলে মরমিকবি হাছন রাজার পিতৃভূমিতে বিনোদনের স্থায়ী ব্যবস্থা, একটি অডিটোরিয়াম, শিশুদের বিনোদনের জন্য একটি শিশুপার্কসহ অনেক কিছু করা যাবে। তিনি এ ব্যাপারে রাজা পরিবারের সহযোগিতা কামনা করেন।
জানা যায়, মরমী কবি হাসন রাজা প্রায় পাঁচ লক্ষ বিশ হাজার বিঘা সম্পত্তির মালিকও ছিলেন। দুঃখ্যজনক হলেও সত্য যে, কবি হাসন রাজার কোন উত্তরসূরী না থাকায় রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলোর দেখার মত পূর্বের পরিবেশ না থাকায় আগের মত কোন পর্যটক সেখানে যাননি। ওই বাড়ীতে রয়েছে শুধু দু’টি জরাজীর্ণ কুটির ও খাজনা আদায়ের একটি বৈঠকখানা। আর ওই বৈঠকখানাটি ১৩৫২ বাংলা সনে নির্মাণ করেছিলেন রাজার প্রথম পুত্র খান বাহাদুর একলিমুর রাজা চৌধুরী।
রক্ষণা বেক্ষনের অভাবে অবহেলা আর অযত্নে পড়ে রয়েছে হাসন রাজার সেই বাড়ীটি। এমনকি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে মরমী কবি হাসন রাজার রেখে যাওয়া পুরোনো স্মৃতি।
EDITOR & PABLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Executive Editor : M A Malek
UK Correspondent : Moheuddin Alamgir USA Correspondent : Abul Kashem Murshed
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01711912127
Design and developed by M-W-D