টেলিভিশনের টক শোতে কথা বলার সময় তো কেউ গলা টিপে ধরছে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১:৫৪ পূর্বাহ্ণ, মে ৯, ২০১৭

টেলিভিশনের টক শোতে কথা বলার সময় তো কেউ গলা টিপে ধরছে না : প্রধানমন্ত্রী

দেশে বাক স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা আছে বলে উল্লেখ করে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে সম্পূর্ণভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আছে, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা আছে, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার স্বাধীনতা আছে, বাক স্বাধীনতা আছে, ব্যক্তির স্বাধীনতা আছে। তবে স্বাধীনতা ভোগ করতে গেলে দায়িত্ব পালন করতে হয়। স্বাধীনতা ভোগ করতে হলে দায়িত্ববোধ নিয়েই ভোগ করতে হবে। কারো অধিকার ক্ষুন্ন করা কিন্তু স্বাধীনতা নয়। টেলিভিশনের টক শোতে সরাসরি কথা বলা হচ্ছে, তাতে কেউ তো গলা টিপে ধরছে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সোমবার জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৩৪টি টেলিভিশন ও ৭৫০টি দৈনিক পত্রিকা রয়েছে। অ্যামনেস্ট্রি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এ দেশে বাক স্বাধীনতা নেই। যারা এ রিপোর্টটি লিখেছে তাদের বলবো, এই যে টিভি চ্যানেলে বসে বসে রাত দিন যে আমাদের বিরুদ্ধে সমানে কথা বলা হচ্ছে, টক শো, আলোচনায় সরাসরি অনুষ্ঠানে কথা বলা হচ্ছে। কই, কেউ গিয়ে কি তাদের গলা টিপে ধরে যে, এ কথা বলা যাবে না? কেউ তো তা করে না। সংবাদপত্র তো লিখে যাচ্ছে। হ্যাঁ কেউ যদি হলুদ সাংবাদিকতা করে, মিথ্যা, অসত্য তথ্য দেয়, কারো যদি চরিত্র হরণ করে, নিশ্চয়ই তার তা থেকে পটেকশন নেয়ার অধিকার সকলেরই আছে। সেখানে একেবারে স্বাধীনতা নাই তা বলা যায় না।

তিনি আরো বলেন, যে কোন সাধারণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেউ যদি অসত্য তথ্য দেয়, আর সে যদি সম্মানহানির জন্য মামলা করে, সেটার জন্য দোষ কিভাবে দিবে? নিজেকে যদি কেউ মনে করে অপরাধী না, তাহলে সে মামলা মোকাবেলা করতে পারে। সে প্রমাণ করবে সে অপরাধ করে নাই। সেটা প্রমাণ করার সাহসও নাই, হলুদ সাংবাদিকতা তো করে ফেলেছে। এখন আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে গিয়ে বাংলাদেশে বদনাম করা, এটাই হয়ে গেছে তাদের চরিত্র। বদনাম করতে পারলেই মনে হয়, তারা এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে। সে আশায় গুড়ে বালি। সেটা আর বাংলাদেশে হবে না।

তিনি বাক স্বাধীনতা সর্ম্পকে  বলেন, বাংলাদেশে সম্পূর্ণভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আছে, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা আছে, , ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার স্বাধীনতা আছে, বাক স্বাধীনতা আছে, ব্যক্তির স্বাধীনতা আছে। তবে স্বাধীনতা ভোগ করতে গেলে দায়িত্ব পালন করতে হয়। স্বাধীনতা ভোগ করতে হলে দায়িত্ববোধ নিয়েই ভোগ করতে হবে। কারো অধিকার ক্ষুন্ন করা কিন্তু স্বাধীনতা নয়।

প্রধামন্ত্রী আরো বলেন, অন্যের কাছে বদনাম করে কতটুকু অর্জন করতে পারবে তা জানি না। ইর্মাজেন্সী থাকলে কি বাক স্বাধীনতা থাকে? যারা আমাদের বিরুদ্ধে বদনাম করে তারা ইমাজেন্সী আসলে বাকবাকুম করতে থাকেন। কিছুটা ছিটিয়ে দিলে তারা কিছুটা খেতে পারবে।

তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সর্ম্পকে বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই প্রধানবিচাপতি কিভাবে বললেন সেটা আমি জানি না। একটি মামলায় ১৪০দিন সময় দেয়া হলে বুঝা যায় স্বাধীনতা আছে। আমাদের হস্তক্ষেপ থাকলে তো এত সময় দেয়া হতো না। একটি মামলায় ৪০-৫০বার রিট করা হয়। তা নিষ্পত্তি করা হয়, তাতেই তো বুঝা যায় বিচারবিভাগের স্বাধীনতা আছে। আর আজকে দেশে আইনের শাসন না থাকলে, জঙ্গীবাদ বিশ্বব্যাপী সমস্যা, এটা বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।

আইনের শাসন আছে বলেই এটা সম্ভব। জঙ্গিদের সাথে গুলাগুলি করে যদি কেউ মারা যায়, সেটা মানবাধিকার লংঘন নয়, একটা মানুষের জন্য শত শত মানুষকে পঙ্গু বা মৃত্যুবরণ করা হতো। তাদেরকে ধরলেই নিজেরা বোমা মেরে সুইসাইট করে যাচ্ছে, তারা মরলেই বিএনপি নেত্রীদের প্রাণ কাদেঁ, আরো অনেকের প্রাণ কাঁদে কেন? তাদের সাথে কী গোপন যোগসূত্র আছে কি না? তিনি বোমা হামলায় নিহতদের কথা উল্লেখ করেন। সেই সাথে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন হামলা কথা উল্লেখ করেন।

দেশের তথ্য প্রযুক্তির বিস্তারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষনা দিয়েছিলাম। এখন সব জায়গায় ইন্টারনেট পৌঁেছ দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করা হবে। বাংলাদেশে ১৩ কোটি মোবাইল ফোনের সীম ব্যবহার করা হচ্ছে। মোবাইল ফোনেই সকল সেবা নিতে পারছে। পরীক্ষার রেজাল্টসহ ভর্তি কার্যক্রমও অনলাইনে হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি জেলা ও উপজেলা মসজিদ ও কালচারাল সেন্টার করে দিবো। ইসলামের প্রকৃত মর্মবানী যেন মানুষ বুঝতে পারে। নবী করিম সা. বলেছেন আর কুরআনেও বলা আছে মানুষ হত্যা করলে জাহান্নামে যাবে। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি হাওর এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আসন্ন রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার আহ্বান জানিয়ে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, ‘সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াসহ মুসলিম দেশগুলোতে রোজার সময় পণ্যের দাম কমে যায়। আর বাংলাদেশে বাড়ে। ছোলাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে। এ সময় তিনি রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন।

বেগম রওশন এরশাদ বলেন, আইপিইউ ১৩৮ বছরের একটি সংস্থা। এই ধরনের আয়োজন (সম্মেলন) বাংলাদেশে প্রথম। ১৩২টি দেশের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও এমপিরা অংশ নেন। আইপিইউ সভাপতি ও সিপিএ চেয়ারপার্সন আমাদের দেশ থেকেই নির্বাচিত হয়েছেন। এটা যদি (আইপিইউ সভাপতি-সিপিএ চেয়ারপার্সন) না হতোএবং আইপিইউ সম্মেলন যদি ঢাকায় অনুষ্ঠিত না হতো তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠতো। সম্মেলন ফলপ্রসূ হয়েছে। তারপরেও কেন প্রশ্ন উঠছে-এটাই আমার প্রশ্ন।

সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা তার বক্তৃতায় আরো বলেছেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা বিজয় দিবস কবে জানে না, রাষ্ট্রপতির নাম জানে না। আমার মনে হয় শিক্ষা পদ্ধতিটা ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে হবে। যাতে জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।