জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দল গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি, অন্তর্দ্বন্দ্বে আ.লীগ

প্রকাশিত: ৩:৩৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৯, ২০১৭

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দল গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি, অন্তর্দ্বন্দ্বে আ.লীগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে, আর মাত্র দেড় বছর বাঁকি। সে লক্ষে দল গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। অপরদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে আসন ও আধিপত্য নিয়ে চলছে  শীতল যুদ্ধ।

সারা দেশে দলের কার্যক্রম চাঙ্গা করতে ৫১টি টিম গঠন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এসব টিম সারা দেশে কর্মিসভা ও দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশনা দেবে।

সারা দেশে প্রতিটি জেলায় কর্মিসভা করবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে তারা জাতীয় রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করবেন, সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও আলোচনা করবেন। সারা দেশে বিএনপির ৭৫টি রাজনৈতিক জেলায় এ ৫১টি টিমের নেতারা কর্মিসভায় অংশ নেবেন।

এলাকাভেদে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা হলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং মানিকগঞ্জ, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ এবং মহানগর, মির্জা আব্বাস বরিশাল উত্তর ও দক্ষিণ এবং মহানগর, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রাজশাহী জেলা ও মহানগর, আবদুল মঈন খান নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর, নজরুল ইসলাম খান রংপুর ও মহানগর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সিলেট ও মহানগরে কর্মিসভা করবেন।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের ও সংসদীয় আসন ভাগাভাগি নিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে । জেলা ও থানায় দলীয় কোন্দলে মারামারি, হানাহানি ও সংঘর্ষের ঘটনা এখন নিয়মিত। সম্প্রতি অন্তত ২০ জেলায় দলীয় কোন্দল গড়িয়েছে মারামারি-প্রাণহানির পর্যায়ে।

এ কারণে তৃণমূলের সাংগঠনিক রাজনীতি অনেকটাই নাজুক হয়ে পড়েছে। তৃণমূলের এমন পরিস্থিতিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এতটাই শঙ্কিত যে, বিরোধপূর্ণ জেলাগুলোয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে  তারা বৈঠকেও বসতে শুরু করেছেন। তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এসব ঘটনাকে কোন্দল বলতে নারাজ। তাদের দাবি, এসব ঘটনা ‘বড় পরিবারের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝি’। এগুলোটা ‘ঠাণ্ডা লড়াই মাত্র।

বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠনের মধ্যে চলা কোন্দলের মধ্যে সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের ঘটনা।

স্থানীয় সংসদ সদস্যকে এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না করা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। জেলার বিজয়নগরে নবনির্মিত উপজেলা প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্বোধনের পূর্ব-নির্ধারিত তারিখ ছিল ২৩ এপ্রিল। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের বিজয়নগর সফর কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয় আগেই। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে আমন্ত্রণ না জানানোর অভিযোগ তুলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ এই সফরের বিরোধিতা করে। তারা কর্মসূচি বর্জনের পাশাপাশি মন্ত্রীর সফর ঠেকাতে হরতালের ডাক দেয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।

আর চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুলের নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবিতে ঘেরাও কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশের গুলিতে আহত হন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের ২৫ নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির সুইমিংপুল নির্মাণের পক্ষে। অন্যদিকে, সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর অবস্থানের বিপক্ষে। জেলার দুই শীর্ষ নেতার বিরোধিতার জের ধরেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের রক্ত ঝরেছে।

এছাড়া, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কোন্দলে জর্জরিত সাংগঠনিক জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, খুলনা জেলা, রাজশাহী জেলা, নাটোর, নওগাঁ, বরিশাল মহানগর, ভোলা, পিরোজপুর, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র গত তিন বছরে রাজনৈতিক কোন্দল ও অন্যান্য ঘটনা নিয়ে হত্যাকাণ্ডের যে বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাতে দেখা যায়, ২০১৬ সালে রাজনৈতিক সংঘাতে দেশে ১৭৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহতদের ৮৩ জন আওয়ামী লীগের। ২০১৫ সালে রাজনৈতিক সংঘাতে প্রাণ হারানো ১৫৩ জনের মধ্যে ৩৩ জন এবং ২০১৪ সালে নিহত ১৪৭ জনের মধ্যে ৩৪ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। তাদের বেশিরভাগই দলীয় কোন্দলে নিহত হয়েছেন বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আগামী নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত করতে তৃণমূলের এসব দ্বন্দ্ব, কোন্দল, বিবাদ-বিরোধ দূর করতে উদ্যোগ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। নির্বাচনের আগেই তৃণমূলের এই কোন্দল  নিরসনে প্রতিটি জেলা-থানার নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রবিবার থেকে শুরু হওয়া এই উদ্যোগে এরই মধ্যে তিন জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষও করেছেন তিনি।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট