২০শে জানুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই মাঘ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০১৭
সোয়া সাত বছর পর এই প্রথম কোনও দ্বিপাক্ষিক সফরে ভারতে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা – আর তাকে স্বাগত জানাতে যথারীতি হোর্ডিং, জাতীয় পতাকা আর ব্যানারে সেজে উঠছে দিল্লির রাজপথ।
তবে এটা যে বিদেশি সরকারপ্রধানদের আর পাঁচটা রুটিন সফরের মতো একেবারেই নয় – বরং সফরটা ঐতিহাসিক করে তুলতে দুদেশের কর্মকর্তারাই রাতদিন এক করে তুলছেন, তা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।
এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র গোপাল বাগলে যেমন বলছিলেন, ‘দেখবেন এটা কিন্তু সত্যিকারের একটা ল্যান্ডমার্ক ভিজিট বা অবিস্মরণীয় সফর হয়ে উঠবে।’
তিনি বলেন, ‘এই সফর থেকে যাতে অর্জনগুলোও বড় মাপের হতে পারে, তার জন্য আমরা দুপক্ষই এখন নিবিড়ভাবে ও সক্রিয়ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সফরে ঠিক কী কী হবে তার বিস্তারিত অবশ্য আমি এখনই প্রকাশ করতে পারছি না।’
সরকারি কর্মকর্তারা বেশি ভেঙে বলতে চান না, তবে দুদেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে বিশেষ সমঝোতা হতে চলেছে এবং তিস্তা নিয়ে চুক্তির আশা একেবারেই ক্ষীণ – দিল্লিতে পর্যবেক্ষকরা তা মোটামুটি ধরেই নিয়েছেন।
দিল্লির নামী থিঙ্কট্যাঙ্ক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো জয়িতা ভট্টাচার্য যেমন বলছিলেন, ‘অতীতে অনেকবারই দেখা গেছে বাংলাদেশে যখনই ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক একটা ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে গেছে। কিন্তু যদি সেই সম্পর্কটাকে প্রতিরক্ষা সমঝোতার মতো কোনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যায় তাহলে আশা করা যায় সেই সম্পর্কে অনেক বেশি স্থিতিশীলতা আসবে।’
তিনি আরও বলছেন, ‘এই সফরটা হল আমাদের পথকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সফর। এটা পরস্পরকে নতুন ভাবে দেখার ও সহযোগিতার নতুন পথ খুঁজে বের করার সফর। আর তিস্তা চুক্তি যাতে আগামীতে হয় সেদিকেও ভারতের গুরুত্ব থাকবে।’
দিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের মতো বিদেশনীতি চর্চার মূল কেন্দ্রগুলোতেও দুদেশের সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা চলছে – এবং অনেকেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রয়োজনটা আসলে এক সুতোয় গাঁথা।
ঢাকায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত ভিনা সিক্রির কথায়, ‘এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ – এবং আমি মনে করি ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েই এটা উপলব্ধি করে যে প্রতিরক্ষা তথা নিরাপত্তা খাতে হাত মিলিয়ে চলাটা সহযোগিতার একেবারে কোর ইস্যু!’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নিরাপত্তা সমস্যা যে কত বিশাল, হোলি আর্টিজানের ঘটনাই তা দেখিয়ে দিয়েছে। জঙ্গি সংগঠনগুলো সেখানে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে, আর ভারতের সমস্যাও অবিকল একই রকমের।’
তবে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশে যে অনেক সংশয় ও প্রশ্ন আছে দিল্লি সে বিষয়েও অবহিত – যদিও সাবেক কূটনীতিকরা অনেকেই মনে করছেন এই সব আপত্তি আমল না-দিলেও চলবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘যে কোনও গণতন্ত্রেই আসলে কিছু ‘নে-শেয়ার’ বা যারা সব বিষয়ে বিরোধিতা করে এমন লোকজন থাকে। এরা শুধু প্রতিরক্ষা নয়, সব বিষয় নিয়েই আপত্তি তোলে। আমি তো নিজের চোখেই দেখেছি ঢাকা-কলকাতা বাস চালু করার সময় কিছু লোক কীভাবে তার প্রতিবাদ করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘আর তা ছাড়া যেহেতু বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বেশ বড় একটা অংশ চীন থেকে আসে তাই সেখানে চীনেরও একটা বড়সড় লবি আছে। ভারতের সঙ্গে সমঝোতা হলে তারা বিরোধিতা করতে চাইবে এটাই তো স্বাভাবিক’, বলেন চক্রবর্তী।
সাত বছর আগে শেখ হাসিনা যখন দিল্লিতে এসেছিলেন, ভারতের ক্ষমতায় তখনও কংগ্রেস সরকার। এখন দিল্লিতে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে – তবে ভারতের বাংলাদেশ নীতি একই রকম আছে।
কিন্তু এই লম্বা সময়ের মধ্যেও মীমাংসা হয়নি তিস্তার – সফরের আগে এটাই শুধু একটা বড় আফসোস।
দিল্লিতে বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি যে কারণে বলছিলেন, ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বাধার কারণেই যে আজ পর্যন্ত তিস্তা চুক্তি সম্পাদিত হয়নি সেটা আমরা সবাই জানি। আমরা আশা করব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার যে একান্ত আলোচনা হবে তখনই মি মোদি ব্যাখ্যা করবেন সেই বাধা দূর করার জন্য তারা ঠিক কী করছেন বা কতদূর এগিয়েছেন!’
তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের দিক থেকে আমরা চুক্তির জন্য পুরোপুরি রেডি আছি। আর এখানে আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার – তিস্তায় যা জল আছে তার অর্ধেক ভাগাভাগি করতে হবে। আট আনা পানি থাকলে চার আনা-চার আনা ভাগ হবে, আর যদি ছ-আনা থাকে তাহলে ভারত পাবে তিন আনা আর আমরা তিন আনা। এটা নিয়ে তো কোনও তর্কই হতে পারে না!’
গঙ্গা-চুক্তি সফলভাবে কুড়ি বছর পেরিয়ে এলেও তিস্তা নিয়ে কেন আজো চুক্তি সই পর্যন্ত করা গেল না, দিল্লির কাছে তার অবশ্য নানা ব্যাখ্যা আছে। এবং মমতা ব্যানার্জির বাধাই অনেকের মতে চুক্তি না-হওয়ার একমাত্র কারণ নয়।
ভিনা সিক্রি যেমন বলছিলেন, ‘তিস্তা নিয়ে একটা বড় সমস্যা হল এই নদীতে শুষ্ক মরশুমে ঠিক কতটা জল থাকে সেই পরিসংখ্যানটাই নেই।’
তিনি বলেন, ‘গঙ্গার ক্ষেত্রে এই সমস্যা ছিল না, সেই ঔপনিবেশিক আমল থেকে সেখানে জলপ্রবাহের রেকর্ড ছিল, যা চুক্তি করতে অসম্ভব সাহায্য করেছিল। তিস্তার ভাগাভাগির ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু তাই জলের পরিমাণটা বলতে পারি না, শুধু শতকরা হিসেবটা বলি।’
তবে আজ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে শুকনো অঙ্কের হিসেবটাই সব নয়, ভরসার জায়গা সেখানেই। যেমন সে কারণেই প্রোটোকল ভেঙে আগামী তিন-চারদিন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ঠিকানা হবে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন, কোনও পাঁচতারা হোটেল নয়।
এই ভবনে এখন যিনি থাকেন, সেই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ‘কাকাবাবু’ বলে ডাকেন।
আর এই ধরনের আন্তরিক আবেগ আর ব্যক্তিগত হৃদ্যতার জোরে সফরে অনেক বাধাই অনায়াসে অতিক্রম করা যাবে – দিল্লির এমনটাই বিশ্বাস।
বিবিসি অবলম্বনে
EDITOR & PABLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Executive Editor : M A Malek
UK Correspondent : Moheuddin Alamgir USA Correspondent : Abul Kashem Murshed
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01711912127
Design and developed by M-W-D