২৭শে জানুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই মাঘ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৪, ২০১৭
কক্সবাজার : মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের কেরুনতলী পাহাড়ী এলাকায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত খুইল্যা মিয়াকে (৪০) পুলিশ ‘পরিকল্পিত’ ভাবে খুন করেছে! সকালে বড় মহেশখালী ইউনিয়নের মাঝের ডেইল এলাকার নিজের ঘর থেকে ভাত খাওয়ারত অবস্থায় পুলিশ ধরে নিয়ে তাকে আরেকটি ভিন্ন ইউনিয়ন হোয়ানকে নিয়ে হত্যা করেছে।
নিহত খুইল্যা মিয়ার স্ত্রী শাহেনা আক্তার এমনটাই দাবি করেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘আমার সামনে থেকেই ভাত খাওয়া থেকে তুলে লুঙ্গি পরা অবস্থায় আমার স্বামীকে সিভিল পোষাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। ধরে নিয়ে যাওয়ার পর প্রায় ৩ ঘন্টা মহেশখালী থানায় বসিয়ে রেখে পরে তাকে মাথায় মুখোশ পরিয়ে পুলিশ সদস্যরা আমার স্বামীকে হোয়ানকের কেরুনতলী এলাকায় নিয়ে যায়। ওখানেই তাকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে।’
তিনি শুক্রবার রাতে কক্সবাজার শহরের পালংকি হোটেলের রেষ্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সব বক্তব্য তুলে ধরেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে শাহেনা আক্তার লিখিত বক্তব্যে জানান, শুক্রবার সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে বড় মহেশখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মাঝের ডেইল এলাকায় বাড়ি ঘিরে সাদা পোশাকে তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে মহেশখালী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে কোন অবৈধ অস্ত্র ও গুলি পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সাংবাদিকরাও থানায় গেলে তার স্বামীকে গ্রেপ্তারের কথা পুলিশ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে তাদের ফিরিয়ে দেন।
তার দাবি, হোয়ানক এলাকার সন্ত্রাসীদের গডফাদার মোহাম্মদ ফেরদৌস ও তার সহযোগী মীর কাসেম, আবুল হাসেম ও নুরুল কবির মেম্বার গোপনে সলাপরামর্শ করে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর ১৮-২০ জন প্রত্যেকে দেশী লম্বা বন্দুক ও শত শত রাউন্ড গুলিতে সজ্জিত হয়ে ফেরদৌসের বাড়ির এক-দেড় কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত লম্বাশিয়া নামক পাহাড়ে অবস্থান করে তারা পুলিশের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। আনুমানিক সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটের সময় পুলিশের গাড়িতে তার স্বামীকে কালো টুপি দিয়ে মুখ ও মাথা আবৃত্ত করে গোরকঘাটা-জনতাবাজার প্রধান সড়ক থেকে আনুমানিক এক কিলোমিটার পূর্ব দিকে পূর্ব নয়াপাড়া এলাকার মাষ্টার গোলাম কুদ্দুসের বাড়ি থেকে আনুমানিক ২-৩ শত ফুট দক্ষিণ দিকে তার স্বামীকে নিয়ে পুলিশ বাহিনী উপস্থিত হয়। ওই সময় ফেরদৌস বাহিনীর অস্ত্রধারীরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পর পর আনুমানিক ১৫০ রাউন্ড বন্দুকের গুলি ছুড়ে ত্রাস ও ভয় ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে।
শাহেনা আক্তার বলেন, ‘ওই পরিবেশে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই হারুনুর রশিদ ও আরো ৩-৪জন পুলিশ কর্মকর্তা আমার স্বামীকে পরপর গুলি করে অত্যন্ত নির্মম ও নিষ্টুরভাবে খুন করে।’
তিনি মনে করেন, পুলিশ হাস্যকর ক্রসফায়ারের নাটক সৃষ্টি করে প্রশাসন তথা উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত ও প্রতারিত করেছে। তার মতে, বিভিন্ন মিডিয়ায় ওই খুনের ঘটনা বিকৃতভাবে প্রচার করার জন্য ওসি প্রদীপ কুমার দাশ প্রচুর টাকা বিলি করার খবর তারা পেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নিহত খুইল্যা মিয়ার ভাই ও সাবেক ইউপি মেম্বার আবদুল খালেক জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তিনি ১০ একর জমি লবণ চাষের জন্য বরাদ্দ পেয়েছেন। ওই জমিতে লবণ চাষ করতে তার ভাই খুইল্যা মিয়া। সেই লবণ মাঠ দখল করার জন্য ফেরদৌস ও মীর কাসেম বাহিনী কয়েক বছর ধরে অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। ওই বাহিনী গত ৭ ফেব্রুয়ারী খুইল্যা মিয়ার লবণ মাঠ থেকে ৩২০ মণ লবণ নিয়ে যায়। এখই বাহিনী গত বুধবার তার লবণ নিয়ে যাওয়া ট্রলার কুতুবদিয়াতে আটকে দেয়। এই নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যকেও অবহিত করা হয়েছে।
নিহত খুইল্যা মিয়ার স্ত্রী শাহেনা আক্তার ও ভাই আবদুল খালেক স্পষ্টতই দাবি করেছেন, খুইল্যা মিয়া কখনোই অস্ত্র কারিগর কিংবা অস্ত্র ব্যবসার মত অবৈধ ব্যবসায় জড়িত ছিলেন না। তিনি একেবারেই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তিনি লবণ মাঠ ও পান চাষ করে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতেন।
তারা এই খুনের জন্য ফেরদৌস ও মীর কাসেম বাহিনী এবং মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দায়ী করেছেন।
তাদের মতে, ইতিপূর্বে খুইল্যা মিয়ার বিরুদ্ধে যে সব মামলা হয়েছে প্রতিটি ছিল জমি-জমা সংক্রান্ত মামলা। এছাড়াও একটি অস্ত্র মামলায় তার ১০ বছরের সাজা হলেও ৫ বছর সাজা ভোগের পর উচ্চ আদালতে আপিলের মাধ্যমে তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হন।
কান্না জড়িত কণ্ঠে ৪ সন্তানের জননী শাহেনা আক্তার সংবাদ সম্মেলনে জানান, তার স্বামী যদি কোন অপরাধ করেও থাকেন, পুলিশ কর্তৃপক্ষের উচিৎ ছিল আইনানুগভাবে তার স্বামীকে স্থানীয় আদালতে সোপর্দ করা।
তিনি মনে করেন, ‘খুন করার কোন আইনগত কর্তৃত্ব মহেশখালী থানার ওসি কেন, বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান আইজিপি সাহেবেরও নেই।’
তিনি ‘নির্মম, জঘন্য ও পরিকল্পিত এবং আইন ও বিচার বহিভূত হত্যাকান্ডে জড়িত প্রদীপ কুমার দাশকে দ্রুত ক্লোজ’ করে এই হত্যাকান্ডে জড়িত সকল ‘খুনিদের’ বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
তিনি প্রশ্ন তুলেন, অস্ত্র কারিগর কিংবা অস্ত্র ব্যবসায়ী না হয়ে তার স্বামীকে যেভাবে বিচারবহিভূত ভাবে হত্যা করা হয়েছে তার দায় কে নেবেন? একই সাথে তিনি তার ২ পুত্র ও ২ কন্যা ৭ম শ্রেণীর ছাত্র মোহাম্মদ সোহেল (১৫), মোহাম্মদ রুবেল (১২), ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী রুমা আক্তার (১০) ও সুমা আক্তারের (২) দায়িত্ব কে নেবেন এই প্রশ্নও ছুড়ে দেন গৃহবধূ শাহেনা আক্তার।
এই ব্যাপারে জানতে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের মোবাইলে রাত সোয়া ৯টার দিকে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তার অফিসিয়াল মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। রাত ১০টার দিকে একই মোবাইলে চেষ্টা করলে ফোন খোলা পাওয়া যায়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
EDITOR & PABLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Executive Editor : M A Malek
UK Correspondent : Moheuddin Alamgir USA Correspondent : Abul Kashem Murshed
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01711912127
Design and developed by M-W-D