এখন দলীয় আইনজীবীরা এপিপি হন : প্রধান বিচারপতি

প্রকাশিত: ৫:৩৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭

এখন দলীয় আইনজীবীরা এপিপি হন : প্রধান বিচারপতি

প্রতিটি জেলার প্রখ্যাত আইনজীবীদের বদলে এখন দলীয় আইনজীবীরা এপিপি হন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

তিনি বলেন, ‘আগে প্রতিটি জেলায় প্রখ্যাত আইনজীবীরা ফৌজদারি মামলায় এপিপি হিসেবে নিয়োগ পেতেন। এ নীতি বেশ কিছু সময় চলার পর এখন আর দেখা যাচ্ছে না। এখন এপিপি বলতে যেকোনো সরকারি দলের, যে-ই থাকে, তাদের একটি প্যানেল লিস্ট করা হয়। এর বাইরে নিয়োগ দেয়া হয় না।’

শনিবার সকালে এক মতবিনিময় ও প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।

সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ও লিগ্যাল এইড কমিটি অসহায়, অসচ্ছল ও সুবিধাবঞ্চিতদের সরকারি অর্থে আইনি সহায়তা দিয়ে থাকে।

লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবীদের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট মামলায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা করেন উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তখন ভারসাম্য থাকে না।’

তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে খাটো করার জন্য বলছি না। একপক্ষে প্রথিতযশা ও অভিজ্ঞরা থাকেন। অন্যপক্ষে মোটামুটি প্রখ্যাত না, অনভিজ্ঞরা থাকেন। এ ক্ষেত্রে খাপ খায় না। এর ফলে সরকারি তহবিল থেকে টাকা চলে যাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে দুস্থরা বিচার পাচ্ছেন না। বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তুলছে। এজন্য আইনজীবীদের সহযোগতা প্রয়োজন।’

লিগ্যাল এইডের মামলার তহবিল গঠনের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি একটি তহবিল গঠন করবো। সেই তহবিল থেকে যেসব মামলায় প্রখ্যাত আইনজীবী আছেন, তাদের বিপরীতে লড়ার জন্য অন্য প্রখ্যাত আইনজীবী নিয়োগে অর্থ দেয়া হবে।’

দুস্থ ব্যক্তিদের কাছে আইনগত সেবা পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এবং আইনের আশ্রয় সমানভাবে পাওয়ার অধিকারী- এটি শুনে আসছি আমাদের সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে। এটি কত দূর দিতে পেরেছি? আমি বলব, পারিনি। এটি আমাদের অপারগতা।’

২৬ জানুয়ারি গাজীপুরের কিশোর ও কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সেখানে শুধু গরিবেরা নয়, ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেমেয়েরাও ষড়যন্ত্রের কারণে আছে। সেখানে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থারও একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে। দেখলাম, কেউ কেউ আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার পরীক্ষার্থী, তাদের যেন জামিনের ব্যবস্থা করা হয় তা বলেছি। সেখানেও আইন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিশোর-কিশোরীরা ধনাঢ্য ব্যক্তি, আবার প্রভাবশালীর চাপে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্য অপরাধীদের সঙ্গে খারাপ অবস্থায় আছে।’

বাংলাদেশে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় নিম্নহারে কর আরোপ করা হয়েছে, তারপরও শত শত কোটি টাকার মালিকেরা আয়কর দিচ্ছেন না বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি।

তার ভাষায়, ‘আমাদের দেশে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় নিম্নহারে কর আরোপ করা হয়েছে, যা একেবারে নগণ্য। তারপরও একাধিক গাড়ি ব্যবহার করছেন, শত শত কোটি টাকার মালিক- আমার জানামতে এমন অনেকে আছেন, যারা একেবারেই আয়কর দিচ্ছেন না।’

সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান এম ইনায়েতুর রহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসূফ হোসেন হুমায়ুন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্যসচিব টাইটাস হিল্লোল রেমা।