২৬শে জানুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই মাঘ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:১৩ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৬, ২০১৬
বাংলাদেশের আকাশসীমা ও বিমানবন্দর ব্যবহার করতে ভারত সরকার বাংলাদেশের কাছে ওপেন স্কাই সুবিধা চাওয়ার দাবিকে দেশের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসেবেই দেখছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন, ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশের সাথেই বাংলাদেশের আকাশ চুক্তি আছে। কিন্তু কোনো দেশের সাথেই মুক্ত আকাশ সুবিধা দেয়ার চুক্তি নেই। এতে বাংলাদেশের কোনো লাভ হবে না, এমনকি প্রয়োজনও নেই। শুধু ভারতের স্বার্থে সরকার এ চুক্তি করতে পারে। এতে বিমান ব্যবসা একচেটিয়াভাবে ভারতের কাছে চলে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের বাইরে নিজস্ব ফ্রিকোয়েন্সিতে ভারত বাংলাদেশের বিমানবন্দর ও আকাশ ব্যবহারের ফলে নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমাদের দেশের বিমান অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা এখনও সে পর্যায়ে যায়নি। আমাদের অবকাঠামো, দক্ষ জনশক্তি পর্যাপ্ত নয়। এখনই গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং-এ বিমান ফেল করে। আমাদের এভিয়েশন সিকিউরিটিতেও দুর্বলতা রয়েছে, যার কারণে আমাদের দেশ থেকে কোনো কোনো দেশে কার্গো সুবিধা বন্ধ রয়েছে। এমনিতেই অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে নিরাপত্তা হুমকিতে রেড এলার্ট জারি করেছে। দেশের প্রখ্যাত রাষ্ট্র্রবিজ্ঞানি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড: এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সাথে একের পর এক চুক্তি করে যাচ্ছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা সংসদে পাস করছে না। এমনকি জনগণের সামনেও উন্মুুক্ত করছে না। সরকার যদি দেশের সার্থে কোনো চুক্তি করে তাহলে সংবিধান অনুযায়ী করুন। হঠাৎ করেই ভারতকে দেশের মুক্ত আকাশ সুবিধা দেয়ার চুক্তি নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। তা বিবেচনা করেই আলোচনা করা উচিত। বাংলাদেশ সরকারের সাবেক বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, সরকার ভারতের স্বার্থেই ট্রানজিট, নৌ বন্দর, রেল ট্রানজিটের পাশাপশি এবার মুক্ত আকাশ সুবিধা দেয়ার জন্য চাচ্ছে। এতে বাংলাদেশের মানুষের কোনো লাভ হবে না। ববং বাংলাদেশের আকাশ ও বিমান বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারত নিজস্ব ফ্রিকোয়েন্সি নিলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। ভারতের সাথে সরকারের আকাশ চুক্তির উদ্যোগ অসাংবিধানিক, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে। বিমানবন্দর যেকোন দেশেরই খুবই স্পর্শকাতর নিরাপত্তামূলক স্থান। এটাকে মুক্তভাবে ব্যবহারের সুযোগ দিলে অবশ্যই নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। এমনিতেই বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহারে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো রেড এলার্ট ঘোষণা করেছে। : জানা যায়, বাংলাদেশের আকাশসীমা ও বিমানবন্দর ব্যবহার করতে ওপেন স্কাই সুবিধা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে এ বিষয়ে আলোচনা করতেও কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে আলোচনাও করেছেন। : বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা গত ২১ নভেম্বর সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে এভিয়েশনের সেক্টরে কোনো প্রকল্প, প্রস্তাবনা, এজেন্ডা তুলে ধরা হবে কিনা এ বিষয়েও খোঁজ নেন হাইকমিশনার। ভারতীয় হাই কমিশনার ওপেন স্কাই সুবিধা দিতে প্রস্তাব তুলে ধরেন। সর্বশেষ গত ১ ডিসেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানেও ভারতের হাইকমিশনার ওপেন স্কাইয়ের বিষয়ে প্রস্তাব করেন। সে অনুষ্ঠানে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত নতুন পলিসিতে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ওপেন স্কাই সুবিধাকে বাড়াতে যাচ্ছে। এতে করে দু দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটবে।’ হাইকমিশনারের বক্তব্যের জবাবে একই অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘হাইকমিশনার ওপেন স্কাইয়ের কথা বলেছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্র্যাকটিকাল ওপেন স্কাই হয়েই আছে। প্রধানমন্ত্রী ১৭-১৮ ডিসেম্বরের দিকে ভারত সফরে যাবেন। এবার যে আলোচনা হবে, তাতে যেন আমাদের এভিয়েশন সেক্টর যুক্ত থাকে সেজন্য আমরা কাজ করেছি।’ : অন্যদিকে এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্টরাও ওপেন স্কাই সুবিধা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের দেয়া ঠিক হবে না বলে মত দিয়েছেন। এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি দেশের বেসামরিক বিমান পরিবহনে অন্যদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করতে অনুমতি লাগে। তবে ওপেন স্কাই চুক্তি থাকলে এ ক্ষেত্রে আলাদা অনুমতির দরকার হয় না। ওপেন স্কাই চুক্তি দুটি দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা ততোধিক দেশের মধ্যেও হতে পারে। এ চুক্তির মাধ্যমে আকাশসীমা ব্যবহারের পাশাপাশি বিমানবন্দর ব্যবহারের সুযোগ থাকে। এছাড়া বিমানবন্দরে উড়োজাহাজের যাত্রীদের বোর্ডিং ছাড়া জ্বালানি সংগ্রহ, যাত্রীদের অন্য ফ্লাইটে কানেকটিং করার সুবিধা থাকবে। : এ প্রসংগে বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ বলেন, বিষয়টি নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত। তবে সরকার যদি কম্প্রোমাইজ করে আমাদের বলার কিছুই নেই। ভারতের সাথে মুক্ত আকাশ সীমা ব্যবহারের চুক্তি করলে সংকটের সময়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়তে পারে। প্রশ্ন হলো এমন কী প্রয়োজন হলো যে, তারা বাংলাদেশের মুক্ত আকাশ সুবিধা চায়। ভারতের পক্ষ থেকে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। ভারত যদি সুবিধা চায় তাহলে বাংলাদেশকেও দিতে হবে। বাংলাদেশের স্বার্থও দেখতে হবে। : এভিয়েশন খাত বিশেষজ্ঞ উইং কমান্ডার (অব.) এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ওপেন স্কাই সুবিধা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের দেয়া ঠিক হবে না। কারণ আমরা প্রস্তুত না। আমাদের অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা এখনও সে পর্যায়ে যায়নি। আমাদের অবকাঠামো, দক্ষ জনশক্তি পর্যাপ্ত নয়। এখনই গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং-এ বিমান ফেল করে। আমাদের এভিয়েশন সিকিউরিটিতেও দুর্বলতা রয়েছে, যার কারণে আমাদের দেশ থেকে কোনো কোনো দেশে কার্গো সুবিধা বন্ধ রয়েছে।’ সব কিছু বিবেচনায় বাংলাদেশ এখনও প্রস্তুত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুবাইতে ওপেন স্কাই সুবিধা রয়েছে, ভারতেও আছে। তবে ভারত মাঝে মাঝে পর্যটনবর্ষ উদযাপনের সময় কয়েকটি নির্দিষ্ট বিমানবন্দরের জন্য এ সুবিধা নির্ধারিত সময়ের জন্য দিয়ে থাকে।’ : নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল সৈয়দ ইব্রাহিম বলেন, এসকল সংবাদ উদ্বেগ উৎকণ্ঠা সৃষ্টিকারী সংবাদ। বিজয়ের মাসে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে স্ববিশেষ সচেতন থাকতে হবে। বন্ধুত্বের খাতিরে ভারতের সঙ্গে এমন কোনো চুক্তি করা ঠিক হবে না যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার কোনো ক্ষত সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়টিও হালকাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
EDITOR & PABLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Executive Editor : M A Malek
UK Correspondent : Moheuddin Alamgir USA Correspondent : Abul Kashem Murshed
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01711912127
Design and developed by M-W-D