সক্ষম ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের তাগিদ

প্রকাশিত: ১২:১৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৮, ২০১৬

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য করতে একটি শক্তিশালী ও সক্ষম নির্বাচন কমিশন গঠনে জোর দিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক প্রতিনিধিদল। এজন্য প্রতিনিধিদলটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিরও তাগিদ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক কমিটির একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় ইইউ দূতাবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলে।

সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিটির প্রধান বারন্ড লাঙ্গা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) পর্যায় থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটলে ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে পরিবর্তন আসবে। ওই সময়টাতে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য-সুবিধা বাদ দিয়ে জিএসপি প্লাস কর্মসূচিতে বাংলাদেশকে যুক্ত হতে হবে। এতে যুক্ত হতে হলে বাংলাদেশকে ২৭টি আন্তর্জাতিক সনদে সই করতে হবে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনাই ছিল ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের সফরের মুখ্য বিষয়। তবে এর বাইরে স্বল্প পরিসরে তারা রাজনীতি, বিশেষ করে আগামী নির্বাচন, পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন, মৌলিক ও রাজনৈতিক অধিকার—এ বিষয়গুলো নিয়েও সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক কমিটির প্রধান জিন ল্যামবারটের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মৌলিক অধিকার—এসব বিষয় নিয়ে এই সফরে কী আলোচনা হয়েছে? আর বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতিকে তারা কীভাবে দেখছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে জিন ল্যামবারট বলেন, ‘সাধারণ পরিস্থিতি নয়, এই সফরে আমাদের মূল বিবেচ্য ছিল বাণিজ্য। কাজেই রাজনীতি নিয়ে আমাদের মধ্যে কম আলোচনা হয়েছে। অবশ্যই আমরা একটি শক্তিশালী ও সক্ষম নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছি, যাতে করে নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণ আস্থা রাখতে পারে। নির্বাচন পরিচালনার সময় কমিশনকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে, যা একপর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অপছন্দের কারণ হতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করাটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব।’

পরবর্তী নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের নেতা বারন্ড লাঙ্গা বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবশ্যই স্থিতিশীল। নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে। যথাযথ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মেনেই এটি গঠন করার ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।’

জিন ল্যামবারট মনে করেন, বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক করার বিষয়ে তারাও একমত। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক দলের। তবে এটি এমন একটি পরিবেশে হতে হবে, যাতে করে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।

মৃত্যুদণ্ড প্রথা বজায় থাকলে বাংলাদেশ জিএসপি প্লাস সুবিধার আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে কি না জানতে চাইলে বারন্ড লাঙ্গা বলেন, মৃত্যুদণ্ড প্রথা বাতিল করা দর-কষাকষির একটি বড় বিষয় হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়ার ঠিক আগে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন। তারা সকালে সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক, দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সঙ্গে কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের পর প্রতিনিধিদলটি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে তার গুলশানের কার্যালয়ে যায়।