১৭ই মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:১২ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০১৬
উত্তম কুমার পাল হিমেল : নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর এলাকার কৃতিসন্তান মুক্তিযুদ্ধের সাবসেক্টর কমান্ডার ও নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনের সাবেক এমপি মাহবুবুর রব সাদী আর নেই।
রোববার (১৬ অক্টোবর) দিবাগত রাত আড়াইটায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লহি………..রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর রোববার হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে আইসিইউতে নেয়া হয়। রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরে তাঁর লাশ নিয়ে আসা হয় জন্মস্থান নবীগঞ্জে।
আজ সোমবার (১৭ অক্টোবর) বেলা ৩টায় নবীগঞ্জ জে.কে সরকারি স্কুল মাঠে প্রথম এবং বিকেল সাড়ে ৪টায় দিনারপুর সাতাইহাল ফুটবল মাঠে দ্বিতীয় জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় জানাযার নামাজে হাজারো মানুষের ঢল নামে। পরে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়।
পরে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকায়।আগামীকাল মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে দাফনের কথা রয়েছে। শারীরিক সমস্যা নিয়ে ৩ দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মাহবুবুর রব সাদী। রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর হার্ট-অ্যাটাক হয়। এরপর চিকিৎসকরা তাঁকে আইসিইউতে নেয়ার পরামর্শ দেন।
মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রব সাদীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে নবীগঞ্জ-বাহুবলে। এই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য সাদী ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন সাধারণ মানুষের কাছে। ১৯৪৫ সালের ১০ মে উপজেলার বনগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন দিনারপুর পরগণার এই উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ আরো বিভিন্ন মহল।
সংবাদপত্রে প্রেরিত এক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ ও নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন- নবীগঞ্জ বাহুবলের সংসদ সদস্য এম.এ মুনিম চৌধুরী বাবু, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাজিনা সারোয়ার, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জীতেন্দ্র কুমার নাথ, উপজেলা জাসদের সভাপতি আব্দুর রউফ, পৌরসভার সাবেক মেয়র ও নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী, পৌরসভার প্যানেল মেয়র এটিএম সালাম, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি প্রভাষক উত্তম কুমার পাল হিমেল প্রমুখ। এছাড়াও বিভিন্ন মহলের লোকজন শোক প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, মাহবুবুর রব সাদী ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্ররাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে ভারতে যান। মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক রূপ পেলে তিনি (৪) নম্বর সেক্টরের জালালপুর সাবসেক্টরের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। তাঁর আওতাধীন এলাকা ছিল আটগ্রাম, জকিগঞ্জ ও লুবাছড়া। উল্লেখিত এলাকা ছাড়াও কানাইঘাট এলাকায়ও অপারেশন করেন। তাঁর নেতৃত্বে বা পরিচালনায় অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য মাহবুবুর রব সাদীকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়।
১৯৭৩ সালের গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৫১। কানাইঘাট থানা আক্রমণে কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য তিনি এ খেতাব পান। ১৯৯২ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা ও পদক প্রদান করে তখন তাঁকেও আমন্ত্রণ জানানো হয় কিন্তু তিনি অংশগ্রহণ করেননি।
তার কারণ, গণবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনে কোনো অংশে নিয়মিত বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে কম ছিলেন না। গণবাহিনীর কাউকেই বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি দেওয়া হয়নি কয়েকজন বীরশ্রেষ্ঠ ও আরও অনেকে বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক উপাধি পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। কিন্তু দেওয়া হয়নি। এ কারণেই এই দেশপ্রেমিক খেতাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।’
যুদ্ধকালীন তাঁর অন্যতম ঘটনা হল ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে এক রাতে ছিল মেঘমুক্ত আকাশ অন্ধকার তেমন গাঢ় ছিল না। দূরের অনেক কিছু চোখে পড়ছিল তার। এমন রাতে বাংলাদেশের ভেতরে প্রাথমিক অবস্থান থেকে মাহবুবুর রব সাদীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা রওনা হয়েছিলেন লক্ষ্যস্থলে।
তিনি ছিলেন সামনে, তাঁর পেছনে ছিলেন সহযোদ্ধারা আর একদম আগে ছিলেন একজন পথপ্রদর্শক।
চা-বাগানের পথ দিয়ে তাঁরা কানাইঘাট যান। তখন চারদিক নিঃশব্দ এবং সবাই গভীর ঘুমে ছিল। পুলিশও জেগে ছিল না। শুধু দুজন সেন্ট্রি জেগে ছিল। আক্রমণের আগে সাদী চেষ্টা করেন সেন্ট্রিকে কৌশলে নিরস্ত্র করে পুলিশদের আত্মসমর্পণ করানোর। এ দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধেই নেন। একজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে তিনি থানায় যান বাকি সবাই আড়ালে তাঁর সংকেতের অপেক্ষায় করছিলেন।
সাদী থানার সামনে গিয়ে দেখেন, সেন্ট্রি দুজন ভেতরে চলে গেছে ফলে তিনি আড়ালে অপেক্ষায় থাকেন একসময় একজন সেন্ট্রি বেরিয়ে আসে এবং তাঁদের দেখে চমকে ওঠে; আচমকা ভূত দেখার মতো অবস্থা সাদী মনে করেছিলেন, সেন্ট্রি ভয় পেয়ে আত্মসমর্পণ করবে কিন্তু সে তা করেনি।
সেন্ট্রি তাঁর দিকে অস্ত্র তাক করে তখন সাদীও তাঁর অস্ত্র সেন্ট্রির দিকে তাক করেন। কিন্তু এর আগেই সেন্ট্রি গুলি করে ভাগ্যক্রমে রক্ষা পান তিনি কেবল তাঁর মাথার ঝাকড়া চুলের একগুচ্ছ চুল উড়ে যায় গুলির শব্দে ঘুমন্ত পুলিশরা জেগে ওঠে এবং দ্রুত তৈরি হয়ে গুলি শুরু করে।
ওদিকে সাদীর সহযোদ্ধারাও সংকেতের অপেক্ষা না করে গুলি শুরু করেন। ফলে সাদী ও তাঁর সঙ্গে থাকা সহযোদ্ধা ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়ে যান। তাঁদের মাথার ওপর দিয়ে ছুটে যায় অসংখ্য গুলি। অনেক কষ্টে তাঁরা থানার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। পরে তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালায়। পুলিশরা পালিয়ে যায়।
মাহবুবুর রব সাদী স্বাধীনতার পর ব্যবসার পাশাপাশি জাসদের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এছাড়া তিনি একবার হবিগঞ্জ এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
EDITOR & PABLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Managing Editor : Nizam u jaigirdar
Executive Editor : M A Malek
UK Correspondent : Moheuddin Alamgir USA Correspondent : Abul Kashem Murshed
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01711912127
Design and developed by M-W-D