অবশেষে হেরেই গেল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:২৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৬

ঢাকা: নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে শততম জয় পাওয়া হলো না বাংলাদেশের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয়টিতে তিন উইকেটে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় টাইগারদের। ফলে শততম জয় পেতে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে মাশরাফি বাহিনীর।
বাংলাদেশের দেওয়া ২০৯ রানের টার্গেট ৪৯.৪ ওভারে আট উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় আফগানরা।

ইনিংসের শেষ ওভারে জয়ের জন্য আফগানদের ১ রান প্রয়োজন ছিল, ঠিক সেই সময় উইকেট নেন তাসিকিন নাজিবুল্লা জাদরানকে ফেরান তিনি। শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এর আগে রশীদ খানকে ‍আউট করে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। ৪৫ ওভারের চতুর্থ বলে রশীদকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে চতুর্থ উইকেট নেন বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার।

৪০তম ওভারের প্রথম বলে বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ৪৯ রানে ব্যাট করা মোহাম্মদ নবীকে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচে পরিণত করান টাইগার অধিনায়ক।পরের ওভারেই ৫৭ রানে ব্যাটিং করা আসগর স্তানিকজাইকে ফেরান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।

পঞ্চম উইকেট জুটিতে আসগর স্তানিকজাই ও মোহাম্মদ নবী এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন সফরকারীদের। তারা ১০৭ রানের জুটি গড়েন। তবে মাশরাফি নবীকে আউট করে ম্যাচে স্বাগতিকদের ফিরিয়েছেন ।

মোহাম্মদ শাহাজাদকে আউট করেন সাকিব আল হাসান। ১৬তম ওভারের প্রথম বলে তাসকিনের ক্যাচে পরিণত হন আফগান ওপেনার। এটি সাকিবের তৃতীয় উইকেট। ৩৫ বলে সমান ৩৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে প্যাভিলিওনে ফেরেন শাহাজাদ।

ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে নিজের প্রথম বলেই উইকেট প‍ান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। দলীয় ১৪তম ওভারের প্রথম বলে হাসমতউল্লা শহীদিকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন এ অলরাউন্ডার।

বাংলাদেশের দেওয়া ২০৯ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই সাকিব আল হাসানের বলে দুই উইকেট হারিয়েছে আফগানিস্তান। নিজের দ্বিতীয় ওভারে নওরোজ মঙ্গলকে তাইজুল ইসলামের ক্যাচে পরিণত করে প্যাভিলিওনে ফেরান সাকিব আল হাসান। আর ওভারের শেষ বলে রহমত শাহকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার।

এর আগে স্পিনারদের সামলাতে না পেরে বিপদে পড়া বাংলাদেশ মোসাদ্দেক হোসেনের দৃঢ়তাভরা ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানকে ২০৯ রানের লক্ষ্য দেয়।

বুধবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে চার বল আগে অলআউট হওয়ার আগে ২০৮ রান করে বাংলাদেশ।

অফ স্পিনার মোহাম্মদ নবিকে দিয়ে এদিন বোলিং আক্রমণ শুরু করে আফগানিস্তান। নতুন বলে পেসার দৌলত জাদরানও আঁটসাঁট বোলিংয়ে বেঁধে রাখেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারকে।

শুরুর সতর্ক ব্যাটিংয়ে ১০ ওভার নিরাপদেই কাটিয়ে দেন বাংলাদেশের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। বিপত্তিটা হয় এর পরেই। মিরওয়াইস আশরাফের পরপর দুই ওভারে বাজে শট খেলে ফিরে যান তামিম ও সৌম্য।

শর্ট বলে চড়াও হতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন তামিম। রানে ফেরার লড়াইয়ে থাকা সৌম্য অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে কাভারে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেন। ৫ রানের ব্যবধানে দুই ব্যাটসম্যানকে হারানো বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দুই ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে। ইমরুল কায়েস বাদ পড়ায় তিনে উঠে আসেন মাহমুদউল্লাহ, চারে খেলেন মুশফিক।

মুশফিক ক্রিজে আসতেই দুই প্রান্তে লেগ স্পিনার নিয়ে আসেন আফগান অধিনায়ক। তবে তাদের ফাঁদে পা না দিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক।

দুই জনের দৃঢ়তায় এক সময়ে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২ উইকেট ১১১ রান। সেখান থেকে এক ধসে ৪০ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে স্বাগতিকরা।

ধসের শুরু ৬১ রানের জুটি ভেঙে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে। পেসার নাভিন উল হকের স্টাম্পের বাইরের বল টেনে এনে বোল্ড হন তিনি।

এরপর বেশিক্ষণ টিকেননি মুশফিকও। লেগ স্পিনার রহমত শাহর বলে সুইপ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন ৩৮ রান করা এই ব্যাটসম্যান।

বাংলাদেশের দুই ভরসা সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমান ফিরেন আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে।

জীবন পাওয়ার পর নবির সেই ওভারেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন সাকিব। টিভি রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে, এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের কানায় লেগেছিল বল।

রশিদের লেগ স্পিনে আবার বিদায় হন সাব্বির। প্রথম ম্যাচের মতো এবার গুগলিতে বিতর্কিত এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন তিনি। টিভি রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে বল তার ব্যাটের কানায় লেগেছিল।

উইকেটে বল একটু থেমে আসছিল। বল খানিকটা ঘুরছিল। নিয়মিত উইকেট পতনের মধ্যে দুর্বোধ্য হয়ে উঠছিলেন আফগান স্পিনাররাও। বিশেষ করে গুগলি বুঝতে খুবই সমস্যা হচ্ছিল ব্যাটসম্যানদের।

ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমে দলকে ভীষণ বিপদে দেখেন মোসাদ্দেক। এই তরুণের ওপর চাপ কমাতে গিয়ে আফগান বোলারদের ওপর চড়াও হতে চেয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। সফল হননি, নবির বলে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি।

তাইজুল ইসলামের কাছ থেকে কিছুটা সঙ্গ পান মোসাদ্দেক। ঠাণ্ডা মাথায় দলের সংগ্রহ যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নেওয়ার দিকে ছিল তার মনোযোগ। জুটিটা সবে জমে উঠছে এমন সময়ে রশিদের ফ্লিপারে এলবিডব্লিউ হয়ে যান তাইজুল।

পরের বলে আরেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তাসকিন আহমেদকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রশিদ। তার হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেওয়া রুবেল হোসেন খেলেন ছোট্ট কিন্তু কার্যকর এক ইনিস।

সাত নম্বরে নামা মোসাদ্দেক ছোট্ট ইনিংসেই দেখিয়েছেন নিজের টেম্পারমেন্ট-সামর্থ্যের প্রমাণ। নিজে খেলেছেন, খেলিয়েছেন ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান রুবেলকে।

স্কুপ করে ছক্কা, কাট করে চারে গ্যালারিতে থাকা ভক্তদের জাগিয়ে তোলেন মোসাদ্দেক। ৪৯তম ওভারে দৌলতের শর্ট বলে পুল করে যে ছক্কা হাঁকান সেটি ইনিংসেরই সেরা শট। সেই শটেই দুইশ’ পার হয় বাংলাদেশের সংগ্রহ।

শেষ ওভারে রুবেল রান আউট হওয়ার আগে দশম উইকেটে তার সঙ্গে ৪৩ রানের জুটি গড়েন মোসাদ্দেক। ওয়ানডেতে নিজের প্রথম ইনিংসে ৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন এই তরুণ। তার ৪৫ বলের ইনিংসটি গড়া ৪টি চার ও দুটি ছক্কায়।

৩৫ রানে তিন উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানের সেরা বোলার রশিদ। দুটি করে উইকেট নেন নবি ও আশরাফ।