১৭ই মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:২৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০১৬
ইস্তাম্বুল : তুরস্কের গাজিয়ানটেপ শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে শনিবার রাতে স্থানীয় বাসিন্দা নিউরেটিন ও বিসনা আকদোগান নামে যুবক-যুবতীর পূর্ব নির্ধারিত বিয়ে অনুষ্ঠান বেশ ধুমধামের সঙ্গেই চলছিল। উভয়পক্ষের দুই শতাধিক স্বজন সমবেত হন সেখানে। অনুষ্ঠানস্থ উপচে পাশের রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে লোকজনের ভিড়।
উভয়পক্ষের স্বজন ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন স্থানীয় কুর্দিজনগোষ্ঠীর গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। তাদের প্রচলিত রীতিতেই বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা এবং খাওয়া-দাওয়ার পর্বও শেষ। সবাই একে অপরের সঙ্গে বিদায় শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণের বিকট শব্দ, বোমা বিস্ফোরণের শব্দটি শহরের সকল প্রান্ত থেকে শোনা যায়। মুহূর্তের মধ্যে অনেকের রক্তাক্ত দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে, অনেকেই রক্তমাখা দেহ নিয়ে দৌড়াচ্ছেন আবার অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন। তখন সেখানে বেঁচে যাওয়া স্বজনদের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক ও শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
( ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া নবদম্পতি নিউরেটিন ও বিসনা আকদোগান)
বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ৩০ জনের মত। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত তিনদিনে আরো ২৪ জনের মৃত্যু হয়। এখনো হাসপাতালে ৬৬জন চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ১৪জনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক বলে বিবিসির খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। যাদের বয়স ৪ থেকে ৩৮ বছরের মধ্যে। আর এমন নারকীয় ও বর্বরোচিত ঘটনা ঘটিয়েছে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী এক আত্মঘাতী কিশোর। এমন আলামত পাওয়ার কথা বলছে তুর্কি পুলিশ।
তবে এ ঘটনায় ৫৪ জনের প্রাণহানি হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান নবদম্পতি নিউরেটিন ও বিসনা আকদোগান। বিয়ের পর যে নবদম্পতির ঘরে আনন্দ-খুশির ঢেউ খেলার কথা আজ সেখানে চলছে শোকের মাতম। গত তিনদিন ধরে ওই বাড়িতে চলছে স্বজন হারানো শোকের বিলাপ। নবদম্পতি থেমে থেমে বারবার কেঁদে উঠছেন হারানো স্বজনদের জন্য। তাদের বিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে প্রাণ হারানো স্বজনদের স্মরণ করে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন এই নবদম্পতি। এতো স্বজনের মৃত্যু তারা যেন কোনো মতেই মেনে নিতে পারছেন না। তবে এ পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠি এই হামলার দায়-দায়িত্ব স্বীকার করেনি।
ঘটনার তিনদিন পর আজ মঙ্গলবার নবদম্পতি ও স্বজন হারানো লোকজনের সঙ্গে কথা বলে গাজিয়ানটেপ শহর থেকে একটি ফলোআপ প্রতিবেদন করেছেন বিবিসির মার্ক লুয়েন। এছাড়াও আনাদোলু’র খবরে ঘটনা পরবর্তী চিত্র উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত বিবিসির খবরে বলা হয়, তুরস্ক সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের সীমান্তে একটি আইএস অধ্যষিত জুরাবলাস শহরে ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) লক্ষ্য করে হামলা শুরু করেছে। যেখানে তুর্কি বিদ্রোহীদের মদতে বেশকিছু সিরিয়ান বিদ্রোহী আইএস পুনরায় গাজিয়ানটেপ শহরে আক্রমণের জন্য শহরটির বাইরে জমায়েত হয়েছিল বলে দাবি করা হচ্ছে।
এ প্রেক্ষিতে একটি প্রত্যাশিত স্থল আক্রমণের মাধ্যমে সীমান্ত জুড়ে সম্ভাব্য হামলা নস্যাৎ করে দিয়েছে বলে তুর্কি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। সেখানে তুর্কি বাহিনী আইএস এবং সিরিয়ার কুর্দি বাহিনী লক্ষ্য করে গোলা বর্ষণ করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার বিয়ে অনুষ্ঠানের হামলার ঘটনাকে বর্বর বলে আখ্যায়িত করে এ হামলার জন্য ইসলামিক স্টেটকে দায়ী করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান।
রবিবার সকালে এক বিবৃতিতে এরদোগান বলেন, ‘জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট শনিবার বিয়ের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে বহুলোক হতাহত করেছে, এই হামলার পেছনে সম্ভবত তাদের লক্ষ্য ছিল দেশে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি এবং জাতিগত ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে যাতে বিভেদ ছড়িয়ে পড়ে।’
তবে তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বলেছেন, তদন্তকারী দল এখনো ওই ঘটনার প্রকৃত ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি।
এ ঘটনায় স্বজন হারানোদের পাশাপাশি গোটা তুরস্কবাসী শোকাহত। যেখানে হামলা হয়েছে গাজিয়ানটেপ শহরে তা সিরিয় সীমান্ত থেকে দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর বসবাস করছে। গাজিয়ানটেপে আইএস গোষ্ঠির সদস্যরা আছে বলে আগেও জানা গিয়েছিল। এলাকাটিতে তুর্কি কুর্দিবিদ্রোহী গোষ্ঠীরও প্রভাব রয়েছে।
গত বছর থেকে তুরস্কে আইএস গোষ্ঠি ও কুর্দি জঙ্গিগোষ্ঠিরা একাধিক বোমা হামলা চালিয়েছে। সর্বশেষ গত জুনে ইস্তাম্বুল বিমান বন্দরে এক হামলায় ৪০ জন নিহত হয়। এছাড়া গত ১৫ জুলাই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে ঘটনায় ২৪৬ জনের প্রাণহানি হয়। সেই শোক কাটতে না কাটতেই ফের বিয়ের অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটলো।
প্রসঙ্গত, কুর্দি অধ্যূষিত এলাকায় স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে কুর্দি বিদ্রোহীরা ১৯৮৪ সাল থেকে তুর্কি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছে। এতে বিগত প্রায় তিন দশকে উভয়পক্ষে অন্তত ৪০ হাজার লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
বিবিসি ও আনাদোলুর খবর অবলম্বনে
EDITOR & PABLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Managing Editor : Nizam u jaigirdar
Executive Editor : M A Malek
UK Correspondent : Moheuddin Alamgir USA Correspondent : Abul Kashem Murshed
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01711912127
Design and developed by M-W-D