২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:০৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৯, ২০১৯
বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংসহ রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার বুয়েটের অনেক শিক্ষার্থীই। রাজনৈতিক নির্যাতনসহ এসব অপকর্মের জন্য হলগুলোতে রয়েছে আলাদা টর্চার সেল। আবরার ফাহাদকে যেই রুমে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয় সেটিও মূলত ছিল বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের শেরে বাংলা হলের টর্চার সেল।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একাধিক শিক্ষার্থী এবং শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্রদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুমের পাশে থাকা এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক অধিকারকে জানান, ২০১১ নম্বর রুমটি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হতো। সেটা ছাত্রলীগের টর্চার সেলও ছিল। এই রুমে থাকা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজনই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলেও জানান তিনি।
ঘটনার দিনের বর্ণনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমি রাত ৮টার দিকে একবার বাইরে বের হই। তখন ওই রুমের সামনে প্রায় ১৫ জনের জুতা দেখি। তবে রুমটি যেহেতু রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার হতো তাই তেমন একটা সন্দেহ হয়নি। ওই রুমের সামনে প্রায়ই এমন দেখা যেত।’
রুমের ভেতর থেকে কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি এমন প্রশ্নের জবাবে ওই ছাত্র বলেন, ‘এমন কোনো শব্দ আসলে তখন পাইনি। তবে রাত দুইটার দিকে সবার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমি বের হই। তখন আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার হয়েছে।’
এই শিক্ষার্থী দৈনিক অধিকারকে আরও জানান, ২০১১ নম্বর কক্ষে চার শিক্ষার্থী থাকেন এর মধ্যে তিন জন পলিটিক্যাল আর একজন নন পলিটিক্যাল। এরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবা বিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ। আরেকজন চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী, যার রাজনৈতিক কোনো ব্যাকগ্রান্ড নেই।
তিনি আরও জানান, ঘটনার দিনের কয়েকদিন আগে থেকেই ছুটিতে রয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। পরীক্ষার জন্য এক মাসের ছুটি উপলক্ষেই ওই ছাত্র বাড়িতে রয়েছেন। পূজার ছুটিতে বাড়িতে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মূলত পরীক্ষার পূর্বে দেওয়া ছুটিটাই মুখ্য।
অমিত সাহার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদে ওই ছাত্র বলেন, ঘটনার দিন অমিত সাহা কক্ষে ছিল কিনা এই বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে অমিত সাহা ছাত্রলীগ করে। সে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর চেয়ে বেশি তথ্য দিতে পারেননি এই ছাত্র।
অন্য দিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, আবরারকে প্রথম দফা পেটানোর ঘটনায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ ওরফে সকালসহ তৃতীয় বর্ষের আরও কয়েকজন। তবে ঘটনার ভিডিও ফুটেজে এখনো অমিত সাহার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় নি। এছাড়া মামলার এজাহারেও নেই তার নাম।
শেরে বাংলা হলের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘বুয়েটের হলগুলোতে রাজনৈতিক এমন টর্চার সেল রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন সময় জুনিয়র ব্যাচদের ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। তবে এসবে প্রতিবাদ জানানোর মতো সাহস আসলে কারও নেই।’
এছাড়া বুয়েটের একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, শেরে বাংলা হলের রুম-২০১১ হল শাখা ছাত্রলীগের ঘোষিত টর্চার সেল। একটু ব্যতিক্রম হলে শেখানোর নাম করে জুনিয়রদের র্যাগ দেওয়া হতো সেখানে।
বুয়েটে সিনিয়র ভাই ও ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে আবরারের মতো না হলেও এমনই নির্যাতিত হয়েছিলেন বুয়েটের সাবেক এক শিক্ষার্থী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে টর্চার সেলের বিষয়ে তথ্য জানিয়ে তার নির্যাতনের লোমহর্ষক ছবিও প্রকাশ করেছেন তিনি।
এনামুল হক নামে বুয়েটের সাবেক ছাত্র ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, বিভিন্ন হলের কয়েকটি রুমে ছাত্রলীগের এমন টর্চার সেল রয়েছে। যেখানে ফেসবুকে ভিন্নমতের স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের নির্যাতিত হতে হয়।
এ বিষয়ে ফেসবুকে কয়েকটি ছবি আপলোড করে বুয়েটের সাবেক ওই ছাত্র বলেছেন এসব মারের দাগ আবরারের নয়; এগুলো তার শরীরেরই ছবি। আবরার মারা গেলেও সেবার ছাত্রলীগ কর্মীর নির্যাতনের পরও প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন তিনি। সেখানে দেখা গেছে নির্যাতনের কারণে পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন।
নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, বুয়েটের ও এ বি এর দোতলায় মেকানিক্যাল ড্রয়িং কুইজ দেয়া শেষ হওয়া মাত্রই পরীক্ষার রুম থেকে তন্ময়, আরাফাত, শুভ্র জ্যোতি টিকাদারদের নেতৃত্বে ৮-১০ জন ছাত্রলীগের ছেলে শিক্ষকের সামনে থেকে তুলে নিয়ে আহসানউল্লাহ হলের তখনকার টর্চার সেল ৩১৯ নাম্বার রুমে নির্যাতন করে। আমি কারো সঙ্গে যেখানে রাগারাগি পর্যন্ত করতাম না, কারো সঙ্গে কখনোই সম্পর্ক খারাপ পর্যন্ত যেখানে ছিল না, শুধুমাত্র ফেইসবুকে সরকারি নীতির সমালোচনা করে পোস্টের কারণে বুয়েটের মতো একটা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগ আমার সঙ্গে এমন আচরণ করে।
তিনি বলেন, ‘এর ৬ দিন আগে সাবেক বুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতি শুভ্র জ্যোতি টিকাদার (‘০৯) ও কাজল (‘০৯) ল্যাব থেকে আমাকে ধরতে এসে ব্যর্থ হয়ে পরীক্ষার রুম থেকে আমাকে একা ধরতে ওরা ৮-১০ জন প্রস্তুতি নিয়ে আসে! বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা ৩০!! বদ্ধ রুমে আমার পিঠের ওপর লোহা দিয়ে ‘১০ ব্যাচের এক ভাই প্রধানত তার শক্তি পরীক্ষা করে।’
এ দিকে বুধবার (৯ অক্টোবর) বুয়েটে সকল প্রকার রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে হলগুলোতে রাজনৈতিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রমের জন্য অস্বস্তিতে থাকেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের বিভিন্ন সময় জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করা হয়। এমনকি না গেলে টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
তারা অভিযোগ করে বলেন, বুয়েটের অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীই বিশেষ করে জুনিয়ররা রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার। জুনিয়ররা হলে উঠলে র্যাগ দেওয়া, তাদেরকে রাজনীতিতে জড়াতে বাধ্য করা এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন এসবে অতিষ্ঠ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এজন্যই আবরার ফাহাদকে প্রাণ দিতে হয়েছে। তাই অবিলম্বে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে বুয়েট থেকে সকল ধরনের রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধের আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
গত রবিবার (৬ অক্টোবর) রাত ৭টার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবরার ফাহাদের কর্মকাণ্ড তদারকির নামে তাকে ডেকে নেওয়া হয় বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে। সেখানে ডেকে নিয়ে প্রথমে তার ফেসবুক এবং মেসেঞ্জারে তদারকি চালান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে চলে আবরারের ওপর অমানবিক নির্যাতন। এক সময় নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মারা যান আবরার ফাহাদ।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D