২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:০১ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৬, ২০১৯
প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বেশকিছু পণ্য ও সেবার ওপর বাড়তি কর আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে জুলাই থেকে। অথচ প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপনের পরের দিনই বাজারে দাম বেড়েছে গুঁড়ো দুধসহ বেশ কিছু পণ্যের। বেড়ে গেছে নিত্যব্যবহার্য সেবারও। বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়ে দেয়ার কারণেই তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া বাজেটে বিদেশ থেকে সোনা আনার েেত্র খরচ কমানোর প্রস্তাব করা হলেও সোনার দাম বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি। মোবাইল খরচও বেড়ে গেছে প্রস্তাব করার পর থেকেই। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিপ্লোমা ১ কেজি ওজনের গুঁড়ো দুধ বিক্রি হচ্ছে ৬১০ টাকায়। যা আগের দিনও বিক্রি হয়েছে ৫৯০ টাকা। ৫শ গ্রাম ওজনের ডিপ্লোমা গুঁড়ো দুধ বিক্রি হচ্ছে ৩১০ টাকা যা আগেরদিন ছিলো ২৯৫ টাকা। মার্কস গুঁড়ো দুধ ৫শ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ২৬৫ টাকা যা আগেরদিন ছিলো ২৫০ টাকা। কোয়ালিটির এক কেজি গুঁড়ো দুধ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায় যা আগেরদিন ছিলো ৫৯০ টাকা।
জিনিয়াস শপিং সেন্টারের ম্যানেজার আবুল কালাম মিডিয়াকে বলেন, বৃহস্পতিবার গুঁড়ো দুধের কোম্পানি যে দুধ সরবরাহ করেছে সেখানে আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়েছে। তবে চিনির দাম এখনো বাড়েনি। আমরা আগের দামেই বিক্রি করছি। বাজেটে দ্রব্যমূল্যে বাড়লে আমাদের কিইবা করার আছে। আমরা ব্যবসায়ী আমরা যেমন কিনব তেমনিই বিক্রি করব। প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল সেট ও ভয়েস কলের ওপর শুল্ক বাড়ানো হলেও এখনও বাজারে এর প্রভাব দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য, বাজেটে বেশ কিছু পণ্যে কর বৃদ্ধির কথা বলা আছে। তামাকজাত পণ্যেও উচ্চহারে বাড়ানো হয়েছে কর। এখন পর্যন্ত বাজারে আসা পণ্য আগে আনা হলেও এরই মধ্যে বাড়তি দাম নেয়া শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে খুচরা বাজারে এখনো দাম বাড়ার তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। কারণ শুক্রবার সকাল নাগাদ অনেক খুচরা ব্যবসায়ীই পাইকারি বাজারে যাননি। বিকেলে অনেকেই পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কিনবেন এবং দাম বাড়বে শনিবার থেকে।
সাধারণত বাজেটে যে জিনিসের দাম বাড়ার কথা বলা হয়, সেটার দাম হুট করেই বাড়ে। যে যে জিনিসের দাম বাড়ার কথা বলছে, কাল-পড়শুই দেখবেন বেড়ে গেছে। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে আরো বেশ কিছু পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানালেন পাইকারি বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন।
তিনি বলেন, আজ তেমন কিছু বুঝবেন না। কারণ আমাদের কাছে আগের অনেক মাল স্টক আছে। সেগুলো শেষ হলে নতুন মাল আসবে। তখন দামটা বাড়বে। এখন খোলা সয়াবিন তেল আমরা ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করি। এক সপ্তাহ আগেও তেল ছিল ৯৪ টাকা। বাজেটে যেহেতু বাড়ানোর কথা বলছে, মধ্যে দামটা কমলেও এখন আবার বাড়বে।
এবার আমদানি করা গুঁড়ো দুধ, গুঁড়া মসলা, টমেটো কেচাপ, চাটনি, ফলের জুস, টয়লেট টিস্যু, টিউবলাইট, চশমার ফ্রেম, সিআর কয়েল, জিআই তার, তারকাঁটা, স্ক্রু, ব্লেড, ট্রান্সফরমার, সানগ্লাস, রিডিং গ্লাস, আমদানি করা পার্টিকাল বোর্ড, সব ধরনের টায়ার ও স্মার্টফোনের ওপর কর বাড়ার কথা বলা হয়েছে। প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, সয়াবিন তেল, পামঅয়েল, সানফাওয়ার অয়েল ও সরিষার তেলের ওপর আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যেরও দাম বাড়তে পারে।
শুক্রবার ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পাইকারি বাজারে ৫০ কোজির বস্তা চিনির পাইকারি মূল্য ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেশিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। যদিও খুচরা বাজারে দাম শনিবার বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার যে চিনি ৪৭ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি হয়েছে, শুক্রবার তা বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়।
বেড়ে গেল মোবাইল খরচ : এদিকে বাজেট ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকেই মোবাইল ফোন ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বাড়তি ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের বোঝা। অর্থমন্ত্রীর বাজেট ঘোষণার পরপরই মোবাইল ফোন অপারেটরদেরকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ইতিমধ্যে মোবাইল অপারেটররাও বাড়তি শুল্ক কার্যকর করার জন্যে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন রবির প্রধান চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার। বর্তমানে গ্রাহকরা সম্পূরক শুল্কের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং আরও এক শতাংশ সারচার্জ দিয়ে আসছে সরকারকে। দেশে বর্তমানে ১০ কোটি গ্রাহক মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। নতুন সম্পূরক শুল্ক কার্যকর হওয়ার ফলে প্রত্যেকের কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার বা এসএমএস আদান-প্রদানসহ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অন্য যেকোনো সেবা নেয়ার েেত্র খরচ বাড়বে।
এদিকে মোবাইল সেটের দাম বাড়ার বিষয়ে গুলশানের ডিজিটন মোবাইল শো-রুমের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সাকিবুল হাসান বলেন, মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমরা দাম বাড়ানোর বিষয়ে এখনো কোনো ধরনের নির্দেশ পাইনি। এখনও আগের দামেই মোবাইল সেট বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে মোবাইল ফোনের কলরেটের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গ্রামীণফোনের হেড অফ এক্সটার্নাল কমিউনিকেশনস সৈয়দ তালাত কামাল বলেন, অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) প থেকে এ বিষয়ে জানানো হবে। এরপর আপনাদের বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হবে। তবে কলরেটের ওপর ভ্যাট বসানো হলে অবশ্যই গ্রাহকদের ওপর চাপ বাড়বে। ফলে এক ধরনের বিরূপ পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
রাত পোহাতে দিল না সোনা ব্যবসায়ী : সকাল হতে দিলেন না সোনা ব্যবসায়ীরা। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপনের দিন রাতেই আসলো সোনার দাম বৃদ্ধির ঘোষণা। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাত পৌনে ১০টার দিকে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি এক বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সোনা আমদানিতে শুল্কহার প্রতি ভরিতে এক হাজার টাকা কমানোর কথা বলা হয়েছে। এতে সোনা আমদানির খরচ ও দেশের বাজারে সোনার দাম কমার কথা। কিন্তু বাজেটের রাতেই বাড়ল সোনার দাম। এটা জুয়েলার্স সমিতির কৌশল হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
জুয়েলার্স সমিতির ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১৪ জুন শুক্রবার থেকে সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শুক্রবার থেকে ২২ ক্যারেট সোনার ভরি কিনতে লাগবে ৫১ হাজার ৩২২ টাকা। প্রতি ভরিতে দাম বেড়েছে এক হাজার ১৬৭ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেট ৪৮ হাজার ৯৮৯ টাকা, ১৮ ক্যারেট সোনা ৪৩ হাজার ৯৭৩ টাকা। সনাতন পদ্ধতির সোনার ভরি ২৭ হাজার ৫৮৫ টাকাই থাকছে। একইভাবে রুপার ভরি আগের মতোই এক হাজার ৫০ টাকা।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনা ৫০ হাজার ১৫৫ টাকা, ২১ ক্যারেট ৪৭ হাজার ৮২২ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৪২ হাজার ৮০৭ টাকা ছিল। আজ ২২, ২১ ও ১৮ ক্যারেট সোনার ভরিতে এক হাজার ১৬৭ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। জুয়েলার্স সমিতি এর আগে জানুয়ারিতে প্রতি ভরি সোনার দামে এক হাজার ১৬৬ টাকা বাড়ায়।
প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের সোনা আমদানি শুল্ক এক হাজার টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর প্রতি ভরি সোনা আমদানি করতে তিন হাজার টাকা লাগতো। এখন এক হাজার টাকা কমিয়ে দুই হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বিদ্যমান অন্য শর্ত অপরিবর্তিত থাকবে। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
বেড়েছে তামাকজাত পণ্যের দাম : বাজেটের প্রস্তাব করার পর থেকেই বেড়ে গেছে তামাকজাত পণ্যের দাম। গতকাল থেকেই বেনসন প্রতি শলাকা বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। বৃহস্পতিবার বিকেলেও ছিলো প্রতি শলাকা ১২ টাকা। মার্লবোরো প্রতি শলাকায় ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। গোল্ডলিফ প্রতি শলাকায় ১ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা। প্রতি শলাকায় ১ টাকা করে বেড়ে স্টার সিগারেট বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকা, নেভি ৭ টাকা, পাইলট সিগারেট ৫ টাকা, হলিউড সিগারেট ৫ টাকা, ডারবি সিগারেট ৫ টাকা, শেখ সিগারেট ৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D