ইসলামি শিক্ষা এবং বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগ

প্রকাশিত: ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০১৯

ইসলামি শিক্ষা এবং বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগ

মারিহা ইদ্রিসি : আমার নিকট ইসলাম হচ্ছে জীবন ধারণের একমাত্র পথ এবং আমার পৃথিবীর একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু। একজন মুসলিম নারী হিসেবে আমি যা হতে চাই তার জন্য সবসময় উৎসাহ পেয়ে থাকি।

আমি খুবই আশাহত হয়ে পড়ি যখন লোকজন বলে- ‘কেন তুমি হিজাব পরিধান কর? এটি কি নারীদের প্রতি বৈষম্যের একটি চিহ্ন নয়?’

আমি নিজেই হিজাব পরিধান করা পছন্দ করি, আমি নিজেই একজন শিক্ষিত এবং স্বাধীন নারী হতে চাই আর আমি নিজেই ইসলামকে আমার জীবনে ধারণ করে নিয়েছি।

ইসলাম আমাদের জানায় যে, নারীদের অস্তিত্ব অন্য কোনো মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য নয় এবং কারো অধীন হয়ে থাকার জন্যও নয়।

সম্প্রতি আমি নাইজারে সফর করেছি যেখানকার ৯৮ শতাংশ মানুষ মুসলিম। এই দেশ এমনকি শিশু বিবাহের ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম স্তরে অবস্থান করছে। দেশটির প্রতি চার জন মেয়ের তিন জনের বিবাহ হয় ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে। এর পেছনে কাজ করে মূলত দরিদ্রতা, স্থানীয় প্রথা এবং শিক্ষার অভাব।

নাইজার বিশ্বের পঞ্চম দরিদ্র দেশ এবং সেখানে আমি নেজেই সত্যিকারের দরিদ্রতা দেখেছি। আমি এমন অনেক পরিবারের সাথে কথা বলেছি যারা আমাকে জানিয়েছে যে, তারা তাদের কন্যা সন্তানদের অল্প বয়সে বিবাহ দিয়ে দেয় কারণ তারা নিয়মিত দুবেলা খাবার খাওয়ার জন্য সংগ্রামে লিপ্ত।

দেশটির রাজধানী নিয়ামে থেকে ১৪০ কিলোমিটার পশ্চিমের শহর লোগাতে আমি মারিয়ামা নামের একজনের সাথে দেখা করেছিলাম যাকে তার ১২ বছর বয়সের সময় বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়।

কিন্তু বিবাহের রাত্রিতে ভীত হয়ে সে পালিয়ে যায় এবং ‘Islamic Relief’ নামের একটি সংস্থার কর্মকর্তা মাইমুনা দিজিব্রিলার নিকট আশ্রয় নেয়। মারিয়ামের মত মেয়েদের মনের আকুতি মাইমুনা এবং তার সংগঠন ঠিক ভাবেই অবগত রয়েছে।
মাইমুনা বিভিন্ন সংগঠনের সাথে কাজ করে। মারিয়ামের বিদ্যালয়, স্থানীয় পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে তার বিবাহ নাকচ করে দেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এর দুবছর পর তার পিতা তাকে অন্য আরেকজনের সাথে বিবাহ দেয়ার প্রচেষ্টা চালান।
অল্প বয়সে বিবাহ হওয়া নাইজারের অন্যতম বড় সমস্যা। তথাপি দেশটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি সাক্ষর করেছে এবং বিবাহের বয়স নারীদের ক্ষেত্রে ১৫ এবং পুরুষদের ক্ষেত্র ১৮ বছর নির্ধারিত করে দিয়েছে।

যদিও দেশটির আইনের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনা হয় তথাপিও এটি ভাববার কোনো কারণ নেই যে, রাতারাতি শিশু বিবাহ থেমে যাবে। এটি নাইজারের সংস্কৃতির সাথে মিশে গিয়েছে। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, এটি কোনো ইসলামিক বিষয় নয় বরং এটি তাদের সংস্কৃতি।

‘Islamic Relief’ নামের সংগঠনটি এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, ইমাম এবং গ্রাম প্রধানদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে যাতে করে নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরী হয়।

তাদের প্রচেষ্টার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছেন স্থানীয় মসজিদ সমূহের ইমাম বৃন্দ। আমি দেখেছি যে, ইমাম গণ জুমার সালাতের পূর্বে তাদের আলোচনায় নারী এবং শিশু অধিকার সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা রাখেন।

দেশটিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে নারীদের প্রতি নির্যাতনের বিষয়টি। নাইজারের ১৫ শতাংশ নারী জীবনের কোনো না কোনো সময় যৌন নির্যাতন এবং বৈষম্যের শিকার হন।

লোগা নামক শহরটিতে আমি আদামা নামের এক নারীর সাথে দেখা করি যিনি তার ১৫ বছর বয়সে পরিবারের এক নিকট আত্মীয় দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন এবং বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে ফলে বাচ্চা জন্ম দেয়ায় তাকে তার পরিবার পরিত্যাগ করেছে।

আদামা জানিয়েছে যে, সে এমনকি খাদ্য চেয়ে ভিক্ষা পর্যন্ত করতে পারে না এবং প্রতিনিয়ত তাকে উপহাস করা হয় যা আসলেই হৃদয় বিদারক। সে যখন তার গল্পে স্মৃতিচারণ করছিল আমি তার চোখে অজানা কষ্ট দেখতে পেয়েছিলাম।

মহান আল্লাহ তায়ালা নারীদের সম্মান রক্ষার জন্য আমাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে এবং পবিত্র কোরআন পরিষ্কার ভাবে বলেছে যে, নারীদের প্রতি যেকোনো ধরনের অত্যাচার অগ্রহণযোগ্য। এটি যেমন যুক্তরাজ্যে গ্রহণযোগ্য নয় ঠিক তেমনি ভাবে নাইজারে ও গ্রহণযোগ্য নয়।

নাইজারে আদামা এবং তার মত অন্যান্যদের কষ্টের কথা শুনতে পেয়ে আমি ‘Islamic Relief’ এর ‘#HonourHer’ নামক প্রচারণায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিই। সংগঠনটি বিশ্বব্যাপী ইসলামের ঘোষণা অনুযায়ী লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

আমি এই প্রচারণার একজন সক্রিয় অংশীদার হয়ে আমার মতামত তুলে ধরতে সচেষ্ট।

সূত্র: দ্যা গার্ডিয়ান ডট কমে প্রকাশিত মডেল এবং সমাজ কর্মী মারিহা ইদ্রিসির কলাম থেকে।