ডাকসু নির্বাচনঃ কঠোর নিরাপত্তা বলয়, পাস ছাড়া কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না : ডিএমপি কমিশনার

প্রকাশিত: ১:৪৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ৯, ২০১৯

ডাকসু নির্বাচনঃ কঠোর নিরাপত্তা বলয়, পাস ছাড়া কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না : ডিএমপি কমিশনার

ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জনসাধারণের চলচলে নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাস ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

শুনিবার দুপুরে শাহাবাগ থানায় ডাকসু নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।

২৮ বছরের বেশি সময় পরে ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু ও হল ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন হতে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, আগামী ১১ই মার্চ ডাকসু কেন্দ্রীয় সংসদ এবং হল সংসদগুলোর নির্বাচন এক যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলবে।

১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, অর্থাৎ যে অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তাতে ডাকসুর সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সর্বশেষ নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে আমান উল্লাহ আমান সহ-সভাপতি এবং খায়রুল কবির খোকন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগের বছর ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ সহ-সভাপতি এবং মুশতাক আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই প্যানেলটি ছিল ছাত্রলীগসহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর একটি যৌথ প্যানেল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৮টি আবাসিক হল আছে। ছাত্রদের ১৩টি, ছাত্রীদের ৫টি। ছাত্রলীগ ছাড়া কোনো সংগঠনই হলগুলোতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পারেনি। হলের ২৪ শতাংশ পদে (মোট পদ ৫৬টি) কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, সংখ্যাটি ৫৬ নয়, ৪১। তাতেও এক-পঞ্চমাংশ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না।

বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলোর অভিযোগ, ১০ বছর ধরে হলগুলো ছাত্রলীগের দখলে ছিল। সেখানে অন্য কোনো ছাত্রসংগঠনকে হলে যেতে দেওয়া হয়নি। প্রায় প্রতিটি হলে ছাত্রলীগ গণরুম সংস্কৃতি চালু করে সংগঠনের পক্ষে কাজ করতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেছে।

এদিকে ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রার্থীরা তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে কেউ কেউ গত জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গটিও টেনে এনেছেন। তবে সেরকম কিছু হলে তার দায় প্রশাসনকে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন কোনো কোনো প্রার্থী।

প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য প্যানেলের সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী লিটন নন্দী বলেন, আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় একটি পাতানো ছকে নির্বাচন করার চেষ্টা করছে। তবে আমরা প্রত্যাশা করি, শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে তাদের ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়ে সেই নীলনকশাকে প্রত্যাখ্যান করবে।

স্বতন্ত্র জোট প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী অরণি সেমন্তি খান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কী না তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ- হলগুলোতে ভোট কেন্দ্র হচ্ছে। ভোট গ্রহণের সময় অনেক কম। ছেলেদের হলগুলো ক্ষমতাসীনদের দখলে। এছাড়াও, আচরণবিধির যে লঙ্ঘন হচ্ছে সে বিষয়গুলো প্রশাসনের চোখে পড়ছে না। আমরা প্রশাসনকে যদি এমন দলকানা অবস্থায় দেখি তাহলে তো সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা করতেই হয়।

বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ভিপি প্রার্থী নুরল হক নুর বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের পুরোপুরি আস্থায় আনতে পারেনি। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্যে আমরা বেশকিছু দাবি-দাওয়া জানিয়েছিলাম। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্যে নিরপেক্ষ শিক্ষকদের নিয়ে একটি টিম গঠন করার দাবি আমরা জানিয়েছিলাম তা প্রশাসন মানেনি।