বিশ্ব নারী দিবস আজ

প্রকাশিত: ১:০৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ৮, ২০১৯

বিশ্ব নারী দিবস আজ

আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে দিবসটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। জাতিসংঘ দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায়। নারীর সম-অধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে সেই থেকে গোটা বিশ্বে দিবসটি পালিত হচ্ছে। সে হিসেবে স্বীকৃতির ৪৪ বছর হয়ে গেল। বাংলাদেশে দিবসটি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের আগে থেকেই পালিত হওয়া শুরু হয়।  সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করা হবে।

এই দিনটির শুরু ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মার্চ। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুচ কারখানার নারী শ্রমিকরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। সে সময় আন্দোলন করার অপরাধে সে সময় গ্রেফতার হন বহু নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই। তিন বছর পরে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে ডেনমাকের্র কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই সারাবিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।জাতিসংঘ ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। এর দুই বছর পর ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে বাংলাদেশেও। গতকাল রাত ১২টা ১ মিনিটে আলোক প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচির শুরু হয়। এতে অংশ নেন শত শত নারী-পুরুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট যৌথভাবে রাত সাড়ে ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘আঁধার ভাঙার শপথ’ শিরোনামে বিশেষ অনুষ্ঠান শুরু করে।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কো-চেয়ারপারসন এম বি আখতারসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।

এসময় বক্তারা বলেন, শুধু পুরুষের একক পরিচয় নয়, বরং নারী-পুরুষের সমান পরিচয়ে, সমান অংশীদারিত্বে উন্নত বিশ্ব গঠন করা সম্ভব। গ্রাম ও শহরের নারীর জীবন বদলে দেওয়ার এখনই সময়।

দিনটি উদযাপনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা আজ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি নিয়েছে। সরকারি টেলিভিশন ও বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে দৈনিক পত্রিকাগুলোও। এ উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) চত্বরে একটি র‌্যালি এবং বিকেল সাড়ে ৩টায় সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমে নারী-পুরুষ সমতা :বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং ডিআরইউর প্রাক্তন নারীবিষয়ক সম্পাদকদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় ডিআরইউর বিশেষ সংকলন ‘কণ্ঠস্বর’-এর মোড়ক উন্মোচন করা হবে। বিকেল ৫টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব দুই নারী সাংবাদিককে সম্মাননা প্রদান ও ‘গণমাধ্যমে নারী-পুরুষ সমতা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করবে। এ ছাড়া, নারী দিবস ও সংগঠনের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও র‌্যালির আয়োজন করবে হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ)। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম সকাল সাড়ে ৮টায় একটি র‌্যালি বের করবে রমনা পার্কের অস্তাচল থেকে। একই সঙ্গে সকাল ১০টায় আলোচনা সভা, সম্মাননা প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন-এর সেমিনার হলে। ‘নারীর নাগরিক অধিকার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে নারী পক্ষ রাজধানীতে দিনব্যাপী স্কুটি, রিকশা, ট্রাক নিয়ে একটি রোড শো, লিফলেট বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। চ্যানেল আরটিভি নারী দিবস উপলক্ষে সপ্তমবারের মতো আয়োজন করতে যাচ্ছে ‘জয়া আলোকিত নারী ২০১৯’। অনুষ্ঠানটি সন্ধ্যা ৬টায় সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে অনুষ্ঠিত হবে।

দিবসটি উপলক্ষে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সমাবেশ ও র‌্যালি করবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। জাতীয় গার্হ্যস্থ নারী শ্রমিক ইউনিয়ন সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও র‌্যালি বের করবে। বাংলাদেশ নারী মুক্তি সংসদ বিকেল সাড়ে ৩টায় তোপখানা রোডস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজন করেছে এক আলোচনা সভার। এছাড়া, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে দুপুর আড়াইটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে ।