নির্বাচনে অনিয়ম : ট্রাইব্যুনালে ঐক্যফ্রন্টের ৭৬ প্রার্থীর মামলা

প্রকাশিত: ৩:৫৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯

নির্বাচনে অনিয়ম : ট্রাইব্যুনালে ঐক্যফ্রন্টের ৭৬ প্রার্থীর মামলা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ এবং প্রার্থীর বিজয় চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা।

রোববার করা দুই মামলাসহ আসনভিত্তিক প্রার্থীরা বাদী হয়ে সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৭৬টি মামলা করেন।

আজ মামলা করেছেন বগুড়া-৫ আসনের গোলাম মো. সিরাজ ও জয়পুরহাট-২ আসনের এইএম খলিলুর রহমান। আইনজীবী হিসেবে ছিলেন কেবি রুমি।

তিনি বলেন, ১৫ তারিখ শুক্রবার হওয়ার কারণে সেদিন মামলা করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে আজ আদালতের অনুমতি নিয়ে মামলা করা হয়।

হাইকোর্টের রিট শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, নির্দিষ্ট নিয়মানুযায়ী আবেদন করে তা সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিবন্ধন নিতে হয়। এরপর ট্রাইব্যুনালের বিচারপতির অনুমোদন নিতে হয়। আদালতের অনুমোদনের পর তা শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিরুদ্ধে দেশের ৬৪ জেলা থেকে হাইকোর্টের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি এ সিদ্ধান্ত হয়।

১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব জেলার প্রতিনিধিদের হাইকোর্টে মামলা করার কথা জানিয়ে দেয়া হয়। বিএনপির হাইকমান্ড ইতিমধ্যে এসব মামলা দেখভালের জন্য আইনজীবীদের একটি টিম গঠন করেছে।

এ টিমে আছেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, মীর নাসির উদ্দিন, ফজলুর রহমান, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস এবং ব্যারিস্টার রাজিব প্রধান।

জানতে চাইলে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিজয় চ্যালেঞ্জ করে আমরা মামলাগুলো করেছি।

তিনি বলেন, কীভাবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছে, এটা আমরা মামলা করে আদালতের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কীভাবে সাজানো নির্বাচনের ফলাফল আনা হয়েছে, তা মামলায় দেখিয়েছি। আশা করি এসব অভিযোগ প্রমাণ করতে পারব।

ঐক্যফ্রন্টের অন্য যেসব প্রার্থী মামলা করেছেন তারা হলেন, নোয়াখালী-১ ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, নোয়াখালী-৩ বরকত উল্লাহ বুলু, চট্রগ্রাম-৮ আবু সুফিয়ান, মানিকগঞ্জ-২ মঈনুল ইসলাম খান, নরসিংদী-৫ আশরাফ উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ-২ নজরুল ইসলাম আজাদ, ঢাকা-৫ নবী উল্যাহ নবী, ঢাকা-২ ইরফান ইবনে আমান অমি, মাগুরা-২ বাবু নিতাই রায় চৌধুরী, যশোর-৩ অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, খুলনা-৪ আজিজুল বারী হেলাল, ফরিদপুর-২ শামা ওবায়েদ ইসলাম, সাতক্ষীরা-১ হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ফরিদপুর-১ শাহ মো. আবু জাফর, চুয়াডাঙ্গা-১ মো. শরিফুজ্জামান, মাদারীপুর-৩ আনিছুর রহমান তালুকদার খোকন, রাজবাড়ী-১ আলী নেওয়াজ মো. খৈয়াম, খুলনা-৩ রকিবুল ইসলাম বকুল, কুষ্টিয়া-৩ জাকির হোসেন সরকার, লালমনিরহাট-১ ব্যারিস্টার হাসান রাজিব প্রধান, কুড়িগ্রাম-৩ তাসভীরুল ইসলাম, দিনাজপুর-৪ আখতারুজ্জামান মিয়া, দিনাজপুর-২ সাদিক রিয়াজ, রংপুর-৬ সাইফুল ইসলাম, গাইবান্ধা-৫ ফারুক আলম সরকার, ঢাকা-৬ অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, কুড়িগ্রাম-২ আমসা আমিন, বরিশাল-৩ অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সিরাজগঞ্জ-২ রুমানা মাহমুদ, ফেনী-৩ মো. আকবর হোসেন, ঢাকা-১৯ দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন, সিলেট-৩ শফি আহমেদ চৌধুরী, ঝিনাইদহ-৪ সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, টাঙ্গাইল-৭ আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, বরিশাল-১ জহির উদ্দিন স্বপন, গাজীপুর-৪ শাহ রিয়াজুল হান্নান, মৌলভীবাজার-৩ নাসের রহমান, মুন্সীগঞ্জ-৩ আবদুল হাই, ভোলা-২ হাফিজ ইব্রাহিম, নোয়াখালী-২ জয়নাল আবেদীন ফারুক, কুমিল্লা-৬ আমিন উর রশিদ, রংপুর-৩ সাব্বির আহমেদ, ফেনী-১ মুন্সি রফিকুল আলম, বান্দরবান থেকে সা সিং প্রো, চাঁদপুর-৩ শেখ ফরিদ আহমেদ, লক্ষ্মীপুর-২ আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মেহেরপুর-১ মাসুদ অরুণ, মানিকগঞ্জ-৩ মফিজুল ইসলাম খান কামাল, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (ভোলা-৩), মো. আমিরুল ইসলাম খান আলিম, (সিরাজগঞ্জ-৫), শহীদুল ইসলাম (টাঙ্গাইল-১), ফরহাদ হোসেন আজাদ (পঞ্চগড়-২), মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৬), মো. আক্তারুজ্জামান মিয়া (দিনাজপুর-৪), মো. শাহজাহান মিয়া (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১), মিজানুর রহমান (সুনামগঞ্জ-৫), মো. জি কে গউছ (হবিগঞ্জ-৩), মজিবুর রহমান চৌধুরী (মৌলভীবাজার-৪), মো. আনোয়ারুল হক (নেত্রকোনা-২), শাহ মো. ওয়ারেস আলী মামুন (জামালপুর-৫), আমিন উর রশীদ (কুমিল্লা-৬), শহীদুল ইসলাম ভুইয়া (খাগড়াছড়ি), সাব্বির আহমেদ (রংপুর-৩), মুন্সী রফিকুল আলম (ফেনী-১), জাকির হোসেন সরকার (কুষ্টিয়া-৩)।

লালমনিরহাট-১ আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ব্যারিস্টার হাসান রাজিব প্রধান বলেন, আমরা অনেক আসন দেখিয়েছি, কেন্দ্র দেখিয়েছি, যেখানে শূন্য ভোট পেয়েছে বিএনপি। এমন কেন্দ্র রয়েছে যেখানে অবিশ্বাস্যভাবে শতভাগ ভোট পড়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে। আমরা আদালতের কাছে এসব বিষয় দেখানোর চেষ্টা করেছি।

সিনিয়র আইনজীবী শাহ মনজুরুল হক বলেন, আরপিও’র ৪৯ ও ৫০ ধারায় নির্বাচনী বিরোধের বিস্তারিত রয়েছে। এতে বলা হয়েছে আবেদন ছাড়া একজন প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবেন না।

প্রার্থীকে (আবেদনকারী) অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিবাদী করে তথ্য প্রমাণ হাজির করতে হবে। তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ৬টি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। এসব ট্রাইব্যনালে আবেদন করার পর প্রথমে বিবাদীদের প্রতি সমন জারি হবে।

এক থেকে দেড় মাস সময় দেয়া হতে পারে। এরপর বিবাদীপক্ষ সমনের জবাব দাখিল করবে। মোট ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করার বিধান রয়েছে।

গত ১ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হাইকোর্টের ৬টি একক বেঞ্চকে নির্বাচনী আবেদন নিষ্পত্তির এখতিয়ার দেন।

নির্বাচনী আবেদন নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার, বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান, বিচারপতি একেএম জহিরুল হক, বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান, বিচারপতি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনের একক বেঞ্চকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।