পালিয়ে বিয়ে করা কি আদৌ জায়েজ?

প্রকাশিত: ২:৪০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৩, ২০১৮

পালিয়ে বিয়ে করা কি আদৌ জায়েজ?

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় দেশের বেসরকারি একটি টেলিভিশনের জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দ‍র্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

প্রশ্ন : শরিয়তে ছেলেমেয়েদের বিয়ের বয়স কত?

উত্তর : বিয়ের জন্য ছেলে বা মেয়েদের বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। ইসলামী শরিয়ত যে বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে, সেটি হলো, বিয়ের জন্য বেশি দেরি না করা। কারণ বিয়ে করতে যত দেরি করবেন, ততই অনৈতিক অথবা অশালীন কোনো কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

এই জন্য শরিয়তের বিধান হচ্ছে, বিয়ের ক্ষেত্রে দেরি না করা যথাসম্ভব দ্রুত বিয়ের কাজটি সম্পন্ন করা। ছেলে বা মেয়ে উপযুক্ত হলেই বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। বিয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি যে এ সময়ের মধ্যে বিয়ে করতে হবে।

তবে সামাজিক যেই নিয়ম-কানুন আছে, সেগুলোও অনুসরণ করা যেতে পারে। যদি অষ্টম শ্রেণিতে পড়া একটি ছেলেকে আপনি বিয়ের জন্য বলেন, সে তো নিজের জীবনের ব্যাপারেই এখনো সচেতন হয়নি, বিয়ের দায়-দায়িত্ব সে কীভাবে বহন করবে। সংসার, দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে বোঝাটাই তার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। ছেলে বা মেয়ের যাতে পরিপক্বতা আসে, কিছুটা শিক্ষা-দীক্ষা হয়, সেগুলোও সামাজিকভাবে বিবেচনার বিষয় রয়েছে।

যদিও ইসলামে বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক না হয়ে সে বিয়ে করতে পারবে না। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া বিয়ের প্রয়োজনীয়তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

প্রশ্ন : বাবা-মাকে না জানিয়ে পালিয়ে বিয়ে করা ইসলামী শরিয়ত মতে জায়েজ কিনা?

উত্তর: আধুনিক যুগে অনেক তরুণ-তরুণীকেই দেখা যায়, বাবা-মাকে না জানিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে থাকে। তরুণ-তরুণীদের এ ধরনের বিয়ে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে কি বৈধ? অনেকেই তা জানে না।

তরুণ-তরুণীদের এরূপ লুকিয়ে বিয়ে করার বিষয়ে মহানবী (সা.) স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘যে নারী তার অভিভাবকের (বাবা-মা কিংবা বড়ভাই এক কথায় অভিভাবক) অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল’। [হাদিসটি তিরমিযি (১০২১) ও অন্যান্য গ্রন্থকার কর্তৃক সংকলিত এবং হাদিসটি সহীহ]

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর এই ব্যাখ্যায় স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, বাবা-মা কিংবা অভিভাবকদের বিনা অনুমতিতে পালিয়ে বিয়ে করা ইসলাম সমর্থন করে না। নবীজী (সা.) এই রূপ বিয়েকে সরাসরি বাতিল বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন।

সুতরাং যে কাজ আল্লাহর রাসুল করতে নিষেধ করেছেন সেই কাজ থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, ‘যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল’। (তিরমিযি)

নারীকে তার উপযুক্ত স্বামী গ্রহণ করার অর্থ তাকে মুক্ত স্বাধীন ছেড়ে দেয়া নয় যে, যাকে ইচ্ছা সে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবে, যার বিয়ের খারাপ প্রভাব পড়ে তার আত্মীয় ও পরিবারের ওপর।

নারী অভিভাবকের সাথে সম্পৃক্ত, অভিভাবক তার ইচ্ছাকে দেখবে এবং তাকে সঠিক পথ বাতলাবে, তার বিবাহের দায়িত্ব নেবে, সে নিজে নিজের আকদ সম্পন্ন করবে না, যদি সে নিজের আকদ নিজে সম্পন্ন করে বাতিল বলে গণ্য হবে।

অন্য হাদীসে এসেছে- ‘অভিভাবক ব্যতীত নারীর কোনো বিয়ে নেই’।

এছাড়া বাবা-মা যদি সন্তানের বিয়ের ব্যাপারে উদাসীন হন তাহলে তার বড়ো ভাই বা চাচা-জেঠার মতামত নিয়ে বিয়ে করতে পারেন। মোট কথা বিয়ের ক্ষেত্রে পরিবারের যে কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ অভিভাবকের মতামত নিতেই হবে।